১৯৪৫ সালে প্রথম লাতিন আমেরিকান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান গ্যাব্রিয়েলা।
Published : 19 Nov 2017, 05:04 PM
দক্ষিণ আমেরিকার দেশ চিলির নোবেল বিজয়ী কবি গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল (১৮৮৯-১৯৫৭)। তিনি একাধারে কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ এবং নারী ও শিশু অধিকারকর্মী।
১৮৮৯ সালের ৭ এপ্রিল চিলির ভিকুনায় তার জন্ম। তার বাবা একজন অখ্যাত কবি ছিলেন। গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় গ্যাব্রিয়েলা কবিতা লিখতে শুরু করেন। এসময় তিনি এক রেল কর্মকর্তার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন, যিনি পরে আত্মহত্যা করেন।
কবিতা লিখে বিখ্যাত হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্যাব্রিয়েলা বহু বছর ধরে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াতেন। তিনি মেক্সিকো ও চিলির শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যুক্ত ছিলেন লীগ অফ নেশনসের সাংস্কৃতিক কমিটিতে। নাপোলি, মাদ্রিদ ও লিসবনে চিলির কনসাল ছিলেন গ্যাব্রিয়েলা।
১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় তার কবিতার বই ‘সনেতোস দি লা মুয়ের্তে’ (মৃতদের স্মরণে সনেট)। এটি তাকে লাতিন আমেরিকাজুড়ে পরিচিত করে তোলে। কিন্তু তার প্রথম কবিতার সংকলন ‘দেসোলাসিয়ন’ (হতাশা), যা পরে প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালে।
১৯২৪ সালে তার ‘তেরনোরা’ (কোমলতা) প্রকাশিত হয়। ১৯৪৫ সালে প্রথম লাতিন আমেরিকান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান গ্যাব্রিয়েলা। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ১৯৫৭ সালের ১০ জানুয়ারি মারা যান তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত ‘গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল ফাউন্ডেশন’ চিলির গরিব ও পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
‘লিটল রেড রাইডিং হুড’ শিরোনামে এ গল্পটি মূলত একটা ইউরোপিয় রূপকথা। গ্যাব্রিয়েলা এ গল্পটির একটা সংস্করণ লিখেন ‘কেপেরুসিটা রোজা’ (লাল জামার মেয়ে) শিরোনামে, বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে।
অনেকদিন আগে এক গ্রামে বাস করতো এক ছোট্ট মেয়ে। তার ছিলো লাল জামা। তাই গ্রামের সবাই তাকে ‘লাল জামার মেয়ে’ বলেই চিনতো।
একদিন তার মা তাকে বললো, ‘তোমার দিদিমা অনেক অসুস্থ। তুমি তার জন্য এ রুটিগুলো আর মাখন নিয়ে যাও, যেন সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।’ মা তাকে সাবধান করে দিলো, ‘অপরিচিত কারও দেওয়া কিছু খাবে না। পথে দেরি করবে না।’
লাল জামার মেয়ে রওয়ানা দিলো তার দিদিমার বাড়ির দিকে, আধা কিলোমিটার দূর। বনের ভেতর দিয়ে সে হাঁটছে আর চারপাশটা দেখছে। এমন সময় তার পথের সামনে এসে দাঁড়ালো এক দুষ্ট নেকড়ে। বললো, ‘লাল জামার মেয়ে, তোমাকে তো খুব সুন্দর দেখাচ্ছে! এতো সকালবেলা কোথায় যাচ্ছো?’
লাল জামার মেয়ে বললো, ‘আমার দিদিমা অসুস্থ। তার জন্য রুটি আর মাখন নিয়ে যাচ্ছি, যেন সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।’ নেকড়ে চালাকি করে বললো, ‘তোমার দিদিমার বাড়ি তো আমি চিনি। একদম কাছে। এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কী করবে? তার চেয়ে চলো আমরা বনের ভেতর খেলি। দেখেছো কতো ফুল ফুটেছে, ফল ধরেছে, আর কতো সুন্দর পাখার প্রজাপতি এসেছে বনে!’
লাল জামার মেয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখলো, সত্যিই তাই। বনের ভেতরটা অনেক সুন্দর। সবুজ পাতার আড়ালে নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। ঘাসে ঘাসে, ঝোপে, পাতায় আর ডালে দৌড়ুচ্ছে লাল-নীল-হলুদ রঙের প্রজাপতি। নেকড়ে সুযোগ বুঝে লাল জামার মেয়েকে খেতে দিলো একটা জাদুর আপেল। লাল টকটকে সে আপেল, দেখলেই খেতে ইচ্ছে করবে এমন।
লাল জামার মেয়ে ওটা খেলো আর দিদিমার কথা ভুলে গেলো। সে রঙ্গিন ডানার প্রজাপতি আর ফড়িঙের পেছন পেছন দৌড়াতে লাগলো। কি যে আনন্দ লাগছে তার! চারপাশে ফুল ফল। লতাপাতায় আনন্দ ধরে আছে, খুশিতে বাঁদর ঝুলছে গাছের শাখা প্রশাখায়। এদিকে লাল জামার মেয়েকে খেলায় ফেলে রেখে দুষ্ট নেকড়ে গেলো দিদিমার বাড়ি। ঠক ঠক ঠক।
কে?
লাল জামা মেয়ের কণ্ঠ নকল করে নেকড়ে বললো, ‘দিদিমা আমি, লাল জামার মেয়ে। তোমাকে দেখতে এসেছি।’
এ কথা বলেই দুষ্ট নেকড়ে লাল জামার মেয়েকে গপ করে খেয়ে ফেললো। খেয়ে দেয়ে চাদরের তলে মুখ লুকিয়ে আবার নাক ডেকে ঘুমোতে লাগলো।
দিদিমা বললো, ‘আমিতো অসুস্থ বাপু। তুমি দরজার বাইরে ওই সুতোটা ধরে টানো, তাহলে দরজা খুলে যাবে।’ দরজা খুলে দুষ্ট নেকড়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো দিদিমার ওপর আর দিদিমাকে খেয়ে ফেললো। তারপর তৃপ্তিতে নাক ডেকে দিদিমার বিছানাতেই চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
এদিকে বনের ভেতর দুপুর হয়ে এলো। লাল জামার মেয়ে খেলতে খেলতে ক্লান্ত। সে একটু বসলো একটা গাছের গুড়িতে। সেখানে রাখা ছিলো দিদিমার জন্য রুটি আর মাখনের থলে। তা দেখে লাল জামার মেয়ের মনে পড়লো দিদিমার কথা। সে তখনই রওয়ানা দিলো।
লাল জামার মেয়ে পৌঁছে গেলো দিদিমার বাড়ি। ঠক ঠক ঠক।
ঘুম ভেঙে দুষ্ট নেকড়ে দিদিমার কণ্ঠ নকল করে বললো, ‘কে?’
‘দিদিমা আমি, লাল জামার মেয়ে। তোমাকে দেখতে এসেছি।’
দুষ্ট নেকড়ে বললো, ‘আমিতো অসুস্থ বাপু। তুমি দরজার বাইরে ওই সুতোটা ধরে টানো, তাহলে দরজা খুলে যাবে।’ দরজা খুলে লাল জামা দেখতে পেলো চাদরের ভেতর তার দিদিমা শুয়ে আছে। বললো, ‘রুটি আর মাখনের থলেটা টেবিলের ওপর রাখো। আর আমার সঙ্গে শোবে এসো।’
লাল জামার মেয়ে তাই করলো। সে চাদরের তলে দিদিমার সঙ্গে শুয়ে পড়লো। শুয়ে শুয়ে লাল জামার মেয়ে বললো, ‘দিদিমা, তোমার হাত এতো লম্বা কেনো?’
দিদিমা সেজে থাকা দুষ্ট নেকড়ে বললো, ‘যেন তোমাকে ভালো করে জড়িয়ে ধরতে পারি।’
দিদিমা, তোমার পা এতো বড় কেনো?
যেন তোমার সঙ্গে ভালো করে দৌড়াতে পারি।
দিদিমা, তোমার কান এতো বড় কেনো?
যেন তোমার কথা ভালো করে শুনতে পারি।
দিদিমা, তোমার চোখ এতো বড় কেনো?
যেন তোমাকে ভালো করে দেখতে পারি।
দিদিমা, তোমার দাঁত এতো বড় কেনো?
যেন তোমাকে ভালো করে খেতে পারি।
এ কথা বলেই দুষ্ট নেকড়ে লাল জামার মেয়েকে গপ করে খেয়ে ফেললো। খেয়ে দেয়ে চাদরের তলে মুখ লুকিয়ে আবার নাক ডেকে ঘুমোতে লাগলো। এমন সময় দিদিমার বাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো এক শিকারি। নেকড়ের নাক ডাকার শব্দ শোনে সে মনে মনে ভাবলো, ‘একি! দিদিমা তো এমন করে নাক ডাকে না! আর সে তো এখন অসুস্থ বলে শুনেছি!’
এ ভেবে শিকারি ঘরের ভেতর গেলো। গিয়ে দেখলো দুষ্ট নেকড়ে পেট ফুলিয়ে চাদরের তলে আরাম করে ঘুমোচ্ছে। তার পাশে পড়ে আছে একটা লাল জামা। শিকারির আর কিছুই বোঝার বাকি রইলো না। সে তখনই গুলি না করে কাঁচি দিয়ে দুষ্ট নেকড়ের পেটটা দিলো কেটে। বেরিয়ে এলো লাল জামার মেয়ে ও তার দিদিমা।
তারপর থেকে লাল জামার মেয়ে আর কোনদিন তার মায়ের কথা অমান্য করে না। সে এখন ঠিকঠাক মতো স্কুলে যায়। আর মাকে সত্যিই খুব ভালোবাসে।