গাছের পাতার টাকা, বালু দিয়ে চাল, মশলা আর ইট দিয়ে তরকারি, পানি দিয়ে তেল, এমন নানা জিনিস বানিয়েছে তারা।
Published : 26 Jul 2024, 01:21 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরুতে উত্তাল এবং পরে স্থবির সারা দেশ। চলছিল কারফিউ। সীমিত আকারে যানবাহন চললেও আতঙ্ক কাটেনি জনমনে।
এদিকে বন্ধ কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম ও আবাসিক হলগুলো। তবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। ক্যাম্পাসের পাশের একটি এলাকায় থাকছি আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী।
ওইদিন দুপুরের আগে হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের দিকে আসছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়লো ব্যতিক্রম একটি দোকানের।
থমকে গেলাম। দেখলাম, দোকান চালাচ্ছে তিন ছোট্ট শিশু। রাস্তার পাশে একটি জায়গা নির্ধারণ করে খুলে বসেছে ব্যবসা। তবে দেখতে দোকানের মতো হলেও আদতে তা দোকান নয়, মিছিমিছি।
গাছের পাতার টাকা, বালু দিয়ে চাল, মশলা আর ইট দিয়ে তরকারি, পানি দিয়ে তেল, এমন নানা জিনিস বানিয়েছে তারা। এছাড়া খেলনা নানা সামগ্রী আছে তাদের কাছে। সাজিয়েছে দোকানের মতোই। বানিয়েছে চুলাও।
সেই দোকান খেলায় মেতেছে তিন শিশু। হাসছে প্রাণখুলে। তাদের হাসিতে চলমান অস্থিরতার প্রভাব পড়েনি।
তাদের সঙ্গে গল্প করতে গিয়ে জানতে পারলাম তাদের নাম নাঈম, হাফিজা, সামিহা। নাঈমকে বললাম, ‘একটা ছবি তুলি?’ ফিক করে হেসে দিয়ে বললো, ‘ভালো করে তোলেন’। সঙ্গে সাদা ফিকফিকে কয়েক পাটি দাঁত বের করে দিল।
তবে হাফিজা আর সামিহাকে হাসাতে বেশ কষ্ট হলো। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, তিনজনের মধ্যে নাঈম বড়। বয়স সবে ১২ বছর। গ্রামের বাড়ি মাদারিপুর। বাবা হারিয়েছে অনেক আগেই।
চার ভাইবোনের সংসার হলেও নাঈম থাকে বাড়ি থেকে অনেক দূরে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের কাছে একটি দোকানে কাজ করে। সংসারের দুরবস্থায় মা পড়াশোনা করাতে পারেননি। তবে পড়ার তীব্র ইচ্ছা তারও। হাল ধরতে চায় দুঃখিনী মায়ের।
এদিকে হাফিজা আর সামিহা দুই বোন। তাদের বয়স হবে যথাক্রমে আট আর তিন। নাঈম যে দোকানে কাজ করে তাদের দোকান মালিকের মেয়েই তারা। হাফিজা ক্যাম্পাসের পাশের শেখপাড়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
কোন ক্লাসে পড়েন জানতে চাইতেই পাশে থেকে ছোট্ট সামিহা বলে উঠে, ‘আমি ছোট্ট, এখনো স্কুলে যাই না।’ একইসঙ্গে জানালো, ‘আমি খিচুড়ি রান্না করছি।’ দেখা গেলো, একটি বাটিতে সিমেন্টের গুঁড়োকে খিচুড়ি বানিয়েছে সে।
চলমান স্থবির অবস্থার কারণে দোকান বন্ধ। স্কুলও বন্ধ। তাই পড়াশোনা ও কাজ নেই তাদের। যার ফলে খেলায় মেতেছে রাস্তার পাশে। হাসিখুশি তিন শিশুর সঙ্গে নানা বিষয়ে গল্প করলাম অনেকক্ষণ। কিছু সময়ের জন্য নিজেও হারিয়ে গেলাম ছেলেবেলায়।
রাস্তার পথচারীরাও অনেকেই তাদের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। কেউ ছবি তুলছিল, কেউ আবার সেলফি।