অনূদিত গল্প
দুই লাইনের একটা মজার শিরোনাম ছাপা হলো- ‘জিতেও হারলেন, হেরেও জিতলেন’।
Published : 31 Oct 2024, 12:21 PM
১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী টনি মরিসনের লেখা ৮টি গল্পের বই নিয়ে সংকলন ‘অ্যা টনি মরিসন ট্রেজারি’, ২০২৩ সালে এটি প্রকাশ করে মার্কিন প্রকাশনী সংস্থা ‘সাইমন অ্যান্ড শুস্টার’। আজ প্রকাশিত হলো তার অনূদিত ষষ্ঠ পর্ব।
এক বনে জিমি নামের এক খরগোশ আর জেমি নামের এক কচ্ছপ বাস করতো।
জিমি খরগোশ মোটেই নিজের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। সে বনের আর সবার চেয়ে সবচেয়ে দ্রুত দৌড়াতে পারতো। সে জানতো না কেন তার পা দুটো আর পায়ের পেশিগুলোও এমনভাবে তৈরি যে সে সবার আগে পৌঁছে যেত।
তাই প্রতিবেশীরা সবাই তাকে এড়িয়ে চলতো। যেহেতু সে অবধারিতভাবে সবসময়ই জিতে যেত, তাই এতে কোন উত্তেজনা বা আনন্দের বিষয় ছিল না। তারা তাকে লোক দেখানো, আটকে থাকা, সবচেয়ে বেশি রুক্ষ, সবচেয়ে বেশি নরম, এমনসব নামে ডাকতো।
তারা তাকে মূর্খ পর্যন্ত বলতো। আর বলত, সে নিশ্চয়ই চালাকি করে জিতে যায়। জিমির মনে তাই অনেক দুঃখ। সে একা একাই দৌড়ে বেড়াতো।
অন্যদিকে, জেমি কচ্ছপেরও একই অবস্থা ছিল। সে বনের আর সবার চেয়ে বুদ্ধিমান ছিল। কেউ তার চেয়ে দ্রুত চিন্তা করতে পারতো না। সে কিছুতেই বুঝতে পারতো না, তার মাথা কেন এতো দ্রুত কাজ করে। আর কেনইবা তার বুদ্ধিমত্তা এতো উঁচুদরের।
প্রতিবেশীদের সবাই তাকে এড়িয়ে চলতো। কারণ, সে ছিল সবার চেয়ে বুদ্ধিমান। সবাই ভাবতো, তার আসলে হৃদয় বলে কিছু নেই। তারা তাকে লোক দেখানো, আটকে থাকা, সবচেয়ে বেশি রুক্ষ, সবচেয়ে বেশি নরম, এমনসব নামে ডাকতো।
তারা তাকে মূর্খ এবং স্বার্থপরও পর্যন্ত বলতো। আর বলত, সে নিশ্চয়ই চালাকি করতে জানে। তাই জেমিকে একা একাই পড়াশোনা করতে হতো।
একদিন পত্রিকার পাতায় একটা দৌড় প্রতিযোগিতার খবর ছাপা হলো। সেই প্রতিযোগিতায় যে জিতবে তাকে একটা সোনালি রঙের মুকুট পুরস্কার দেওয়া হবে। সেটা দেখে জিমি খরগোশ এবং জেমি কচ্ছপ দুজনেই প্রতিযোগিতায় নাম লিখালো।
এরপর জিমি অনেক চর্চা চালিয়ে যেতে লাগলো। আর জেমি অনেক পরিকল্পনা করতে লাগলো। জিমি বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম করতে লাগলো। আর জেমি তার কৌশল ঠিক করতে লাগলো।
জেমি জানতো, সে দৌড়ে খুবই ধীরগতির। সে কখনই জিমিকে হারাতে পারবে না। তাই সে একদিন পত্রিকা অফিসে ফোন দিল। আর বলল, আমি তোমাদের একটা সাক্ষাৎকার দিতে চাই। সে বলল, আমি জানি প্রতিযোগিতা মানে দ্রুত যাওয়া এবং জেতা। কিন্তু দর্শকরা আসলে কোন গল্পটা জানতে চায়! যে জিতেও হারে, নাকি যে হেরেও জিতে যায়!
পত্রিকার রিপোর্টার বলল, আসলে দুটোই অনেক সুন্দর গল্প। আর যে হেরেও জিতে যায় তার গল্পটাই আমাদের সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেয়। কিন্তু দিনশেষে সবাই সন্তুষ্ট হয় বিজয়ীকে হারতে দেখে। জেমি বলল, আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি।
জিমি খরগোশও একদিন পত্রিকা অফিসে হাজির হলো। সে বলল, আমি জানি প্রতিযোগিতা মানে দ্রুত যাওয়া এবং জেতা। কিন্তু কোনটা আসলে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে! সবচেয়ে বেশি দর্শক না সবচেয়ে বড় উল্লাস? রিপোর্টার বলল, দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে জোরে উল্লাস আমাদেরকে উত্তেজিত করে। কিন্তু দিনশেষে দর্শকের সংখ্যাটাই আসল। জিমি বলল, আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি।
প্রতিযোগিতার দিন সবাই খুব ভোরে হাজির হয়ে গেল। সেখানে অনেক লোকের জমায়েত হলো। রাস্তার দুপাশে সবাই তাদের জানালা এবং বারান্দা থেকে ব্যানার আর বিভিন্ন রকমের পতাকা দিয়ে উৎসাহ দিতে শুরু করলো। কেউ কেউ উৎসাহ দিচ্ছিল, আবার কেউ কেউ হাসি ঠাট্টা করছিল।
তারপর দৌড় শুরুর পতাকা নামানো হলো। জিমি দৌড় শুরু করলো। উপস্থিত দর্শকরা তার দৌড় দেখে হাততালি দিতে লাগলো। বিভিন্নভাবে ডিগবাজি দিয়ে, কসরত দেখিয়ে সে এগিয়ে চললো। অন্যদিকে জেমি ধীর পায়ে কাছের বাস স্টেশনের দিকে এগিয়ে চলল। সারাদিন ধরে জেমি বাসে, ট্রেনে, নৌকায় ও প্লেনে ভ্রমণ করলো। আর জিমি সারাদিন নেচে গেয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে দৌড়ে চলল।
এইভাবে সারাদিন কেটে গেল। অবশেষে সূর্য অস্ত গেল। দৌড় শেষের জায়গায় ক্যামেরাম্যান ও রিপোর্টার অপেক্ষা করছিল। জিমি প্রথমে এসে পৌঁছালো। আর জেমি এলো পরে।
রিপোর্টার যেহেতু খরগোশ ও কচ্ছপ দুজনের গল্পটাই জানতো, তাই সে মনে মনে চাইছিল কচ্ছপ জিতুক। পরেরদিন সংবাদপত্রে দুই লাইনের একটা মজার শিরোনাম ছাপা হলো- ‘জিতেও হারলেন, হেরেও জিতলেন’।
জিমি বলল, দেখো আমি জিতেছি আর আমার কাছে পুরস্কার হিসেবে সোনার মুকুটটাও আছে। জেমি বলল, আমি জিতেছি, কারণ আমার কাছে পত্রিকার শিরোনামটা আছে।
তারপর তারা বলল, হারা জেতা ব্যাপার না। আসলে আমরা দুজনই জিতেছি। কারণ, আমরা দুজন এখন খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। সেই থেকে খরগোশ আর কচ্ছপ একে অপরের বন্ধু হয়ে গেল।