“অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করে ফেলে তখন তার রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কারণ একটি শিশুকে লালন করার জন্য তার শরীর তখনো ফিট না। এতে সে মা নিজে রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি ও মানসিক অবসাদে ভোগেন।"
Published : 28 Dec 2022, 04:54 PM
অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলে মা নিজে রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি ও মানসিক অবসাদে ভোগেন। এমনকি সন্তান জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে একজন কিশোরী মা মারাও যেতে পারে। বাল্যবিয়ের প্রভাবে ক্ষতির বিষয়ে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব জানান বাগেরহাটের সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বকশী।
হ্যালো: অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ করলে কিশোরীর কী কী ক্ষতি হতে পারে?
প্রদীপ কুমার বকশী: ধন্যবাদ। ১৫-১৬ বছর বয়সে মানে অপরিণত বয়সে সে একটি কনজ্যুগাল লাইফে আসে। তখন স্বামীর সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এই সম্পর্কটার জন্যও কিন্তু সে মানসিকভাবে প্রস্তুত নয়। এ জন্য তার একটি মানসিক চাপ তৈরি হয়।
পাশাপাশি সে যদি অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করে ফেলে তখন তার রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কারণ একটি শিশুকে লালন করার জন্য তার শরীর তখনো ফিট না। এতে সে মা নিজে রক্তস্বল্পতা, অপুষ্টি ও মানসিক অবসাদে ভোগেন। এছাড়া সুস্থ শিশু ও মায়ের জন্য যতটুকু পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার তা সে খেতে পারে না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই মায়েদের পুষ্টি সম্পর্কে স্পষ্টধারণা থাকে না।
আমরা জানি পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য একটি শিশু নয় মাস ১০দিন পর্যন্ত মায়ের গর্ভে থাকে। কিন্তু কিশোরী মায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় অপরিণত অবস্থাতেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। অপরিণত অবস্থাতে সন্তান জন্ম নিলে সেই শিশুটি কম ওজনের হতে পারে। এছাড়া রক্তস্বল্পতা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও হতে পারে। পাশাপাশি কনজিনিটাল অ্যাবনরমালিটি নিয়ে শিশু জন্ম নিতে পারে।
আমরা জানি যে একজন মানুষের পুরোপুরি বড় হওয়ার জন্য ১৮ থেকে ২১ বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু কেউ যখন ১৪ বছর বয়সে মা হয় তখন তার গ্রোথ কিন্তু ইমপেয়ার্ড হয়।আর এ বয়সে জরায়ু মানে যেখানে গর্ভস্থ শিশু বড় হয় সেই জরায়ুটাও প্রিপেয়ার্ড থাকে না। তখন আল্টিমেটলি কী হয়, যখন সে শিশুর জন্ম দেবে তখন তার পেলভিক অর্গানগুলোও সে পরিমাণ ডেভলপড থাকবে না।
তখন কিছু শারীরিক জটিলতা তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয় না। তখন সিজার করতে হয়। এছাড়া সন্তান জন্মদানের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে একজন কিশোরী মা মারাও যেতে পারে। তো আমি যে মেসেজটকু দিতে চাই বিশেষ করে পরিবার এবং আমরা যারা সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে আছি তাদের সবারই শিশুদের প্রতি দায় আছে। একজন অভিভাবক যেন অপরিণত বয়সে কোনো কারণেই সন্তানকে বিয়ের পিঁড়িতে না বসায় বা বিয়ে না দেয় সেই বিষয়ে আমাদের সবারই খেয়াল রাখা উচিত।
এর পাশাপাশিআমি শিশুদের উদ্দেশ্যে আরও বলতে চাই, তোমরা এই যে বাল্যবিবাহের ক্ষতিকারক দিকের কথা জানলে। বিয়ে আমাদের জীবনের অংশ, এটা অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু সেটার একটা উপযুক্ত সময় আছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান নারীর বয়স ১৮ হওয়াটাকে উপযুক্ত সময় বলছে। আমরা বলি আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া যাবে, কিন্তু মা হওয়ার জন্য বয়স কিন্তু ২১। কারণ মা হতে গেলে মানসিক প্রস্তুতির একটা বিষয় আছে। সন্তানকে লালন-পালন করতে জানার বিষয় আছে এবং সে নিজে কতটুকু খাবার খাবে, তার কতটা পুষ্টি দরকার সে সম্পর্কে জানার দরকার আছে।
উন্নত বাংলাদেশ গড়তে এই শিশুরা, মায়েরা যদি এগিয়ে না আসে, তারা পড়াশোনার মাধ্যমে যদি নিজেদের সমৃদ্ধির পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন কাজে ইনভল্ভ না হয় তাহলে তো আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে পারব না। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পিছিয়ে পড়ব।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বাগেরহাট।