বাল্যবিয়ে আইনত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। বাল্যবিয়ের পরিণতিও ভয়াবহ।
Published : 06 Dec 2021, 04:36 PM
একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দিলে সে শারীরিক ও মানসিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপরেও বাল্যবিয়ের লাগাম যেন টেনে ধরা কঠিন হয়ে গিয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির নানা চেষ্টার পরেও বাল্যবিয়ে থেমে নেই।
মহামারিতে কুড়িগ্রামের সারডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির একজন বাদে অন্য মেয়ে শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলারই ফুলবাড়ি উপজেলার বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে করোনাকালে বিয়ে হয়ে গেছে ৮৫ জন কিশোরীর। এই বিষয়টিও গণমাধ্যমে এসেছে।
এসব ঘটনা থেকে দেশের গ্রামীণ জনপদে বাল্যবিয়ের ব্যাপকতা কিছুটা আন্দাজ করা যায়। হয়তো দেশের এরকম আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রাম রয়েছে যেখানে কিশোরীদের বাল্যবিয়ে হয়েছে। যা হয়তো সেভাবে গণমাধ্যমে আসেনি জন্য আমরা সেসব খবর পাইনি। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলে বাল্যবিয়ের এত ব্যাপকতা কেন? গ্রামের সন্তান হিসেবে আমি যেটা দেখেছি গ্রাম অঞ্চলে বাল্যবিয়ের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে দরিদ্রতা। আমার মনে হয়, দারিদ্র্যে নুয়ে পড়া পরিবারগুলো ১৮ এর আগেই মেয়ে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চায়। এছাড়া দরিদ্র পরিবারগুলো কিশোরীদের পড়াশোনা করাতেও ইচ্ছুক হয় না। যদিও সরকার মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। শুধু মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৮ বছর বয়সে সরকার একটি বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করলে ভালো হতো। যারা ১৮ বছর বয়সেও পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে তারাই এ বিশেষ ভাতা পেতে পারে। তাহলে অনগ্রসর গ্রামীণ জনপদের মেয়েরা আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেত।
গ্রামের সন্তান হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আর একটু সজাগ হলে বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব। গ্রামে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে হলে স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও বাল্য বিয়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আরো ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।