আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুটোই বেশি হচ্ছে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা।
Published : 18 Jul 2023, 01:18 AM
এবছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের চেয়ে বেশি হলেও মারা গেছেন বেশি নারীরা। আক্রান্ত এবং মৃত্যু দুটোই বেশি হচ্ছে ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা।
বছরের শুরু থেকে সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে এইডিসবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ২২ হাজার ৪৬৭ জনকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এই রোগীদের মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১৬৪ জন। আর নারী ৮ হাজার ৩০৩ জন। মোট ভর্তি রোগীর শতকরা ৬৩ দশমিক ০৪ শতাংশ পুরুষ।
এই রোগীদের মধ্যে ঢাকায় যে ১৪ হাজার ৬৯৭ জন, তার মধ্যেও নারীর চেয়ে পুরুষের সংখ্যা বেশি। পুরুষ ৮ হাজার ৭৮৭ জন এবং নারী ৫ হাজার ৯১০ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে আরও দেখা যায়, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকের বয়সই ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
মোট ডেঙ্গু আক্রান্তদের ১১ হাজার ২১৩ জনের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।
৫ বছরের নিচে ১ হাজার ৫১৬ শিশু এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল গেছে। ৫ থেকে ১০ বছরের ১৬১৫ জন, ১০ থেকে ১৮ বছরের ৩ হাজার ৫৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।
৪০ থেকে ৬০ বছরের বয়সীদের ৩ হাজার ৫৪৭ জন, ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৯১৯ জন এবং ৮০ বছরের বেশি ৮১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এ বছর।
মৃতদের তথ্যে দেখা যায়, সোমবার পর্যন্ত যে ১১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে নারী ৬৬ জন, পুরুষ ৪৮ জন।
মৃতদের মধ্যে ৪৭ জনের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৫ বছরের নিচে ৫ জন, ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৭ জন, ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ১২ জন, ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৭ জন, ৬০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ১৪ জন এবং ২ জনের বয়স ছিল ৮০ বছরের বেশি।
নারীদের চেয়ে পুরুষদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বেশি নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত টানার সুযোগ নেই বলে মনে করেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা.মুশতাক হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কারণ এখন নারী-পুরুষ সবাইকেই মশা কামড়াচ্ছে। এমন হতে পারে নারীরা হাসপাতালে যাচ্ছে কম। পুরুষরা বেশি ভর্তি হচ্ছে।”
তবে নারীদের বেশি মৃত্যুর বিষয়টি ভাবনার বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
“এটা নিয়ে যদি একটা জরিপ করা যেত, তাহলে ভালো হত। তবে এখনও পর্যন্ত যেটা দেখা যাচ্ছে, নারীরা বেশি মারা যাচ্ছেন। নারীরা একটু ভালনারেবল বিশেষ করে গর্ভবতী নারীরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। একইভাবে শিশুরা এবং ষাটোর্ধরাও ডেঙ্গুতে ভালনারেবল গ্রুপ।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মারা যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। গবেষণা ছাড়া বলা সম্ভবপর না। তবে বাংলাদেশের নারীদের চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ কম। এটা কারণ হতে পারে।
“হেলথ সিকিং বিহেভিয়ারের যত স্টাডি আছে, তাতে দেখা যায় নারীরা চিকিৎসকের কাছে যায় দেরিতে, হাসপাতালে আসে দেরিতে। এছাড়া আর্থিকভাবেও নারীরা এত স্বাবলম্বী না। যে কারণে নারীদের চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টা পুরুষদের মত না। নারীরা আক্রান্ত হলে গুরুত্ব দিচ্ছে না-এটা বেশি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। কিন্তু আমরা ডেথ রিভিউ করার পরই মূল কারণটা বলতে পারব।”
পুরুষদের আক্রান্ত বেশি হওয়ার একটি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন ডা. নাজমুল।
“পুরুষদের মুভমেন্ট বেশি। তারা ব্যস্ত বেশি থাকে, ফলে অতটা সতর্ক থাকতে পারে না। যে কারণে মশার কামড়ও বেশি খেতে পারে।”
ডেঙ্গু: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৯ নির্দেশনা
অন্য জটিল রোগ আছে? ডেঙ্গু শনাক্ত হলেই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ
ডেঙ্গু: ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা’ জারির বিষয়ে ভাববে সরকার