সামনে ডেঙ্গুর ‘আরও বড় চ্যালেঞ্জ’ আসছে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব।
Published : 16 Jul 2023, 03:15 PM
চলতি বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে চলে যাওয়ায় ‘জনস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি অবস্থা’ জারি করা হবে কি না, সরকার তা পর্যালোচনা করে দেখবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
রোববার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে একশ জন রোগী মারা গেছেন। জুলাইয়ের ১৫ দিনেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ৪৭৬ জন ডেঙ্গু রোগী।
এ অবস্থায় ডেঙ্গুর বিষয়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হবে কিনা, তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।
জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, “পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার মত অবস্থান আমরা মনে করি না যে এখন পর্যন্ত আমরা এসেছি। যদি প্রয়োজন হয়; এর আগে যখন কোভিড ছিল, তখন কিন্তু সেটা করা হয়েছিল। এবারও নিশ্চয়ই সেটা করা হবে।
“এটি কিন্তু পলিসি লেভেলে কথা হতে হবে। আমরা আমাদের কনসার্নটা পলিসি লেভেলে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে কথা বলে আমরা আবার জানাব।”
পরে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি ইস্যু করার মত যদি অবস্থা হয়… এখনও আমি মনে করি না। কারণ যখন কিছু করার মত থাকে না, আমরা বুঝি না, তখন হয়ত অনেকের সাহায্য লাগে। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে আমাদের দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ হচ্ছে এবং ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা স্ট্যান্ডার্ট প্রটোকল আছে।
“ডেঙ্গুতে যেটা সমস্যা, হাসপাতালে না। সমস্যাটা হল হাসপাতালে যখন রোগী আসে তখন রোগী আসে শকড হয়ে। শকড রোগীকে ম্যানেজ করাটা কষ্ট হয়ে যায়। আমাদের যেটা দরকার যাতে ফ্যামিলি পর্যায়ে এ পর্যায়ে রোগী না যায়।”
“এ মুহূর্তে এটা বিয়ন্ড কন্ট্রোল বলব, বা অন্য কিছু বলব– সেরকম আমি বলছি না। তারপরও আপনাদের পরামর্শ আমরা অ্যানালাইসিস করে দেখব।”
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বলেন, “ডেঙ্গুর প্রকোপটা কমানো যাচ্ছে না, আমরা এর উর্ধ্বগতিই দেখছি।”
ডেঙ্গুতে সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ আসছে বলেও মনে করেন সরকারের এই কর্মকর্তা।
আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “ডেঙ্গুর ধরন বদলে যাচ্ছে, আমরা গবেষণা বাড়াতে বলেছি। এখনই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। কোন ধরনের ওষুধ কোন মাত্রায় মশা নিধনে কার্যকর তা দেখতে বলেছি। নতুন কিছু থাকলে তা নিয়ে আসতে হবে।”
ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, এ বছর ডেঙ্গু রোগী যে অনেক বাড়বে, সেটা আগেই ধারণা করেছিলেন তারা। সেজন্য সিটি করপোরেশনগুলোকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল।
মুগদা হাসপাতালে রোগীর চাপ বেশি থাকা ও জনবল কম থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুগদায় নার্স বাড়ানো হচ্ছে, আরও বাড়ানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। অন্য সরকারি হাসপাতাল এখনো খালি আছে, কিন্তু রোগী সেসব হাসপাতালে কম যাচ্ছে। সেজন্য মুগদায় চাপ পড়ছে।”
শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, কদমতলী, বাসাবো, মুগদা, রামপুরা এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি থাকায় মুগদা হাসপাতালে চাপ বেশি পড়ছে বলে জানান তিনি।
তবে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় এখনো কোনো সংকট তৈরি হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “রোগীর সংখ্যা আরো বাড়লে আমরা সংকটে পড়ব।
“গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রকোপের পিক সময় ছিল। এ বছর কি হবে তা আমরা প্রেডিক্ট করতে পারছি না। জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন, এবার এটি প্রলম্বিত হতে পারে। যেহেতু বর্ষা দেরি করে এসেছে, এটি যাবেও দেরিতে।”
বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসায় অতিরিক্ত টাকা আদায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
‘হেলথ ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা হলে কী হবে?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলছেন, কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করে, বা চাপ সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়, তখন ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করা হয়।
কেন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়, সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আগে থেকে ঘোষণা করলে ম্যানেজমেন্ট ভালো হয়। আর তার আগেই যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন সেটা পারা যায় না।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ কয়েকটি ধাপে তা বাস্তবায়ন করতে হয়।
যারা ডেঙ্গু রোগী, তাদের খুঁজে বের করে মশারির ভেতর আনতে হবে। তাদের অধিকাংশকেই হাসপাতালে আসতে হবে না, এরা প্রাথমিক রোগী। তাদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যারা গুরুতর রোগী, তাদের জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে হবে। তাহলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হবে। সবাইকে মশারির ভেতর রাখলে রোগীর কাছ থেকে মশার মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারবে না। হাসপাতালে রেগী উপচে পড়বে না।
মশা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রচুর স্বেচ্ছাসেবীসহ কমিউনিটিকে যুক্ত করে জনপ্রতিনিধিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগীর খোঁজ করবে। জ্বরের রোগী থাকলে পরীক্ষা করতে পাঠাবে। কোথায় কোথায় মশা ডিম পাড়ছে, সেটি তারা দেখিয়ে দেবে। বাসিন্দাদের ঘরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করবে, ক্ষেত্রবিশেষে কীটনাশক প্রয়োগ করবে। তবে প্রথম কাজ হল ‘ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্ট’। পাত্রগুলো পরিষ্কার রাখা, যেখানে পরিষ্কার করা যাবে না সেখানে কীটনাশক ছড়ানো– এটা জরুরি ভিত্তিতে করতে পাড়া-মহল্লায় হাজার হাজার লোক নেমে যেতে হবে।
হাসপাতালে চাপ কমানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টারের মত জায়গায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র করতে হবে। বিনা পয়সায় রোগীরা যেন পরীক্ষা করতে পারে এবং যারা ঘরে মশারি টানিয়ে থাকার মত অবস্থায় নাই, তারা এখানে থাকবে।
আইইডিসিআরের অন্যতম উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন মনে করেন, সরকার ‘পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা না করলেও সেভাবেই কাজ শুরু করেছে।
“এটা সরাসরি ঘোষণা করার কিছু নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড টাইমের মত কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। পরিচালকদের ডিভিশনে ভাগ করে দিচ্ছে, কন্ট্রোল রুম চালু করছে, প্রতিদিন প্রেস ব্রিফিং করা।
“সরকার অলরেডি কাজ করছে। মুখে বলাটা সেনসিটিভ, যে এটা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল কিনা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিতে হয়, তারা নিচ্ছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার প্রয়োজন নেই। আমরা তো বলছি যে- আমরা পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির মধ্যে আছি। সরকার তো কাউন্টার করছে না। ঘোষণা করতেই হবে- এটা ইমপ্রেকটিক্যাল বাংলাদেশে।”