হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬২৩ রোগী, যা একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
Published : 15 Jul 2023, 08:24 PM
দেশে গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর এইডিস মশাবাহিত রোগটিতে ১০০ জনের মৃত্যু হল।
শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রেকর্ড ওই সাতজনের মৃত্যু হয়।
এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ১৬২৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রোগীর এই সংখ্যাও একদিনে সর্বাধিক।
অবশ্য শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন থাকায় সারাদেশের হাসপাতালগুলোয় ভর্তি রোগীর সব তথ্য জানাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুক্রবারের ভর্তি রোগীর তথ্য সমন্বয় করে শনিবার জানানোয় রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে আছেন মুগদা হাসপাতালে দুজন, মিটফোর্ড হাসপাতালে একজন, ঢাকার আইচি হাসপাতালে একজন, চট্টগ্রামে একজন এবং যশোরে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে ২০১৯, ২০২১ ও ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ১০০ ছাড়িয়েছিল। ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালে ১০৫ জন এবং ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়। এ বছর আষাঢ়ের শেষ দিনে সংখ্যাটি একশ ছুঁয়েছে।
গত একদিনে ভর্তি রোগীদের নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ হাজার ৪৫৪ জনে। এর মধ্যে কেবল জুলাই ১৫ দিনেই ভর্তি হলো ১১ হাজার ৪৭৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ১৬২৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১১৬৯ জন ঢাকায় এবং ৪৫৫ জন ঢাকার বাইরের।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪৯৪৭ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ৩২৩৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭০৯ জন।
এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। জুন মাসে ৫ হাজার ৯৫৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। জুলাইয়ের প্রথম ১২দিনেই সেই সংখ্যা পেরিয়ে গেছে। জুলাইয়ের প্রথম ১৩ দিনে ৯৪০৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের।
মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে ১০৩৬ জন এবং জুন মাসে ৫৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর এইডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা।
বর্ষা পূর্ববর্তী জরিপের বরাতে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকার ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৫টিতে ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহী এইডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন।
এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশের ৬৪ জেলায় এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। সরকারি হিসাবে সে বছর মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের।