অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ পরিবর্তনের নির্দেশ স্বাস্থ্যের

হেলোথেন দামে একটু কম বলে বেশি ব্যবহার হত। আগের আমদানিকারক এটি না আনায় কিছু ব্যবসায়ী অবৈধ উপায়ে এনে অন্য কিছু মিশিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে, বলেন ডা. দেবব্রত।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 March 2024, 05:46 PM
Updated : 27 March 2024, 05:46 PM

দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ওষুধ পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। 

সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ‘ইনহেলেশনাল অ্যানেস্থেটিক’ হিসেবে ‘হ্যালোথেন’ এর পরিবর্তে ‘আইসোফ্লুরেন বা সেভোফ্লুরেন’ ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে অ্যানেস্থেসিয়াজনিত মৃত্যু ও এর অপপ্রয়োগ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।

হ্যালোথেন ওষুধটি রোগীকে অজ্ঞান করতে ব্যবহার করা হয়। আইসোফ্লুরেন ও সেভোফ্লুরেনও রোগীকে অজ্ঞান করতে ব্যবহার হয়। এগুলো আলাদা ওষুধ হলেও মূল কাজ রোগীকে অজ্ঞান করা। একটি বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে ওষুধগুলো শরীরে প্রবেশ করালে রোগী অজ্ঞান হয়।

সম্প্রতি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমদ এবং মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে আহনাফ তাহমীদ আলম আয়হাম নামে দুই শিশুকে খতনা করানোর জন্য অজ্ঞান করার পর ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয়। ওই দুই শিশুর মৃত্যুর পর দেশে সঠিক পদ্ধতিতে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্ন সামনে আসে।

এছাড়া ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে অ্যান্ডোকপি করার জন্য অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহারে দুই রোগীর মৃতুতে তাদের স্বজনরা চিকিৎসক ও হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও গাফিলতির অভিযোগ আনেন। 

এ অবস্থায় বুধবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে এ প্রজ্ঞাপনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেস্থেসিয়ালজিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার অ্যান্ড পেইন ফিজিশিয়ান্স এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হ্যালোথেন এবং আইসোফ্লুরেন ও সেভোফ্লুরেন একই ওষুধ। তবে হেলোথেন দামে একটু কম বলে ওষুধটি বেশি ব্যবহার করা হতো। কিন্তু যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে হ্যালোথেন আমদানি করত তারা এখন করছে না। তাই ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

“হ্যালোথেন আমরা ৪০ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু যারা আনত তারা এখন আনছে না। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এটা অবৈধ উপায়ে বিদেশ থেকে আনছে। এটার সঙ্গে অন্যকিছু মিশিয়ে ১৩০০ টাকার ওষুধ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এজন্য আমরা এই ওষুধটি ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়ার সুপারিশ করেছি। এর পরিবর্তে মার্কেটে যেটা সহজলভ্য সেটা ব্যবহার করা যায়।”

কী আছে নির্দেশনায়

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব জসীম উদ্দীন হায়দার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে অ্যানেস্থেসিয়ার কারণে কতিপয় রোগীর মৃত্যু ও আকস্মিক জটিলতা প্রতিরোধে এবং অ্যানেস্থেসিয়ায ব্যবহৃত ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিতকল্পে অ্যানেস্থেসিয়াতে হ্যালোজেন ব্যবহার ও এর বিকল্প নির্ধারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া অ্যানেস্থেসিয়াজনিত মৃত্যু ও এর অপপ্রয়োগ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে হ্যালোথেন, আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ভেপোরাইজারের সংখ্যা এবং এসব ভেপোরাইজার পরিবর্তন করে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপনে অর্থ বরাদ্দের প্রাক্কলন করতে হবে।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া হ্যালোজেন ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই প্রজ্ঞাপনে। 

এছাড়া দেশের সব সরকারি, বেসরকারি অবেদনবিদদের (অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট) নিয়ে হ্যালোথেনের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন ব্যবহার সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 

সব সরকারি হাসপাতাল থেকে বর্তমানে ব্যবহৃত হ্যালোথেন ডেপোরাইজারের পরিবর্তে আইসোফ্লুরেন ভেপোরাইজার প্রতিস্থাপনের জন্যে চাহিদা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। 

নতুন অ্যানেস্থেশিয়া মেশিন কেনার ক্ষেত্রে স্পেসিফিকেশন নির্ধারণে স্পষ্টভাবে আইসোফ্লুরেন, সেভোফ্লুরেন ভেপোরাইজারের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন:

Also Read: দেশে খতনা হয় কীভাবে, অজ্ঞান করা নিয়ে কী বলছেন চিকিৎসকরা

Also Read: খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু: সব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রকে ১০ নির্দেশনা

Also Read: খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ‘মর্মাহত’