Published : 21 Feb 2024, 05:59 PM
রাজধানীর মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল সেন্টারে খতনা করাতে গিয়ে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ওই ঘটনায় তিনি ‘অত্যন্ত মর্মাহত’; দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
“কিছুদিন আগেও এমন একটি ঘটনা আমরা লক্ষ্য করেছি। সে ঘটনায় আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থাও নিয়েছি। তবে সেই ঘটনার পরও যারা সতর্ক হতে পারেনি, এরকম আর কারো কোনোরকম দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
“দোষী প্রমাণিত হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বিরুদ্ধে শুধু কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াই হবে না, ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলাকারী দোষীদেরও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে পরবর্তীতে আর কোনো প্রতিষ্ঠান এরকম গুরু দায়িত্বে অবহেলা করতে সাহস না পায়। চিকিৎসায় অবহেলা পাওয়া গেলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
মঙ্গলবার রাতে মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খতনা করতে এসে মারা যায় ১০ বছর বয়সী আহনাফ তাহমিন আয়হাম। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়হামের বাসা খিলগাঁওয়ে। তার বাবা ফখরুল আলম একজন ব্যবসায়ী।
সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন ফখরুল। পরে ওই হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়ে এসএম মুক্তাদির ওরফে মুক্তার ও মাহবুব নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
হাতিরঝিল থানায় করা মামলায় শিশুটির পরিবার বলেছে, খতনা করানোর পর জ্ঞান ফিরে এলেও আহনাফ বমি করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার সকালে এ খবর জানার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মইনুল আহসানকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
পরে হাসপাতাল পরিদর্শন করে ডা. মইনুল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার লাইসেন্স থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লাইসেন্স ছিল না।
“আমরা তাদের সব কার্যক্রম বাতিল করেছি। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স ছিল, তা বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। কাল এটা হয়ে যাবে। মেডিকেল সার্ভিস দেওয়ার অনুমোদন ছিল না। এ ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শিশুটির মৃত্যুর কারণ জানা গেছে কি না জানতে চাইলে ডা. মইনুল আহসান বলেন, “প্রাথমিকভাবে অভিযোগ এসেছে খতনা করার সময় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কারণ এখনও জানা যায়নি। আমরা সেখানে কাউকে পাইনি। আমরা কাল সবার সঙ্গে কথা বলব। কাগজপত্র হাতে এলে বোঝা যাবে ঘটনা কি হয়েছে।”
এ বিষয়ে ওই হাসপাতালের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করা হয়েছিল শিশু আয়ান আহমেদকে। খতনা করানোর পর ১১ ঘণ্টায়ও তার সংজ্ঞা না ফিরলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। সাত দিন সেখানে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি আয়ানকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আয়ানের চাচার অভিযোগ ছিল, আংশিক অচেতন করে খতনা করানোর কথা থাকলেও চিকিৎসকরা আয়ানকে পুরোপুরি অজ্ঞান করা করেছিল।
ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া মৃত্যুসনদে আয়ানের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কার্ডিও-রেসপিরেটরি ফেইলিওর, মাল্টিঅর্গান ফেইলিওর এবং কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কথা লেখা হয়।
শিশু আয়ানের এমন মৃত্যুর ঘটনায় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করে ৯ জানুয়ারি রিট করেন এক আইনজীবী। জনস্বার্থে করা সেই রিটে শিশু আয়ান আহমেদের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের সনদ বাতিল এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।