টিকেট না পেয়ে হতাশ হয়েই ফিরে গেলেন ৪০ জনের বেশি দর্শক। দেখা হলো না তাদের আরণ্যক নাট্যদলের সাড়া জাগানো নাটক ‘রাঢ়াঙ’ এর ২০০তম প্রদর্শনী।
শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালায় নাটকটির ২০০তম প্রদর্শনী হয়। তার অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। এর আগে সবশেষ ২০২০ সালে এই নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগেই আমাদের তিনটা টিকেট বুক করা ছিল। সাড়ে ৬টায় এসে কাউন্টারে জানতে পারলাম টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। অথচ ফোনে আমাদের জানানো হয়েছিল, সাড়ে ৬টার মধ্যে এসে টিকিট সংগ্রহ করলেই হবে।”
আরণ্যকের সদস্য অপু মেহেদী দুঃখ প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই দিন আগে থেকেই টিকেটের জন্য ফোন আসতে শুরু হয়। শুক্রবার সকাল থেকে টিকেটের জন্য লবিং শুরু হয়ে যায়। সেজন্য টিকেট না পেয়ে অনেককেই ফিরে যেতে হয়েছে। সবকিছুর পরেও মিলনায়তনে নির্ধারিত আসনের বাইরে সিঁড়িতে বসে এবং দাঁড়িয়ে থেকেও নাটকটি উপভোগ করেছে দর্শকেরা।”
‘রাঢ়াঙ’ নাটকের নির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন “২০০তম প্রদর্শনীতে এসেও নাটকটিকে ঘিরে দর্শকের এত আগ্রহ আমাদের ভীষণ রকম উৎসাহ জুগিয়েছে। একই সাথে অনেক দর্শক টিকেট না পেয়ে ফিরে যাওয়ায় মনও খারাপ হয়েছে আমাদের। দর্শকের এই ভালোবাসা আমাদের চালিকা শক্তি। আগামীতে নাটকটির আর প্রদর্শনী হবে।”
শুক্রবার সকালে নাটকটির ২০০তম প্রদর্শনী উদযাপনের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয় সেমিনার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন রামেন্দু মজুমদার, গোলাম কুদ্দুছ, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, অধ্যাপক শফি আহমেদ, অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, রবীন্দ্রনাথ সরেন। সঞ্চালনা করেন হারুন রশীদ।
‘রাঢ়াঙ’ নাটকে পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে অভিনয় করে ঢাকার মঞ্চে তুমুল প্রশংসিত হন চঞ্চল চৌধুরী ও আ খ ম হাসান।২০০তম প্রদর্শনীতে আবারও মঞ্চে ফেরে চঞ্চল চৌধুরীসহ নাটকটির প্রায় পুরো টিম।
শ্যামলী চরিত্রে অভিনয় করা তমালিকা কর্মকার মঙ্গলবার ফেইসবুকে লিখেছেন, “আমাকে ছাড়া রাঢ়াঙ এর ২০০ তম শো হবে ভেবে বুকটা ভারী হয়ে যাচ্ছে, মনের অগোচরেই গানগুলো গাইছি, ডায়লগ বলছি। সুদূর আমেরিকায় আমি, তবে মনটা পড়ে আছে ওই মঞ্চে। মনে হচ্ছে আমি নির্বাসনে আছি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো বিদেশ বিভূঁইয়ে।”
নাট্যকার ও নির্দেশক মামুনুর রশীদ জানান, ২০০০ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের নওগাঁয় আলফ্রেড সরেনের নেতৃত্বে ভূমির জন্য লড়াই ও আলফ্রেড সরেনের আত্মত্যাগ, সাঁওতালদের দীর্ঘ সংগ্রামের বিশাল উত্তরাধিকারকে মঞ্চে তুলে ধরার প্রয়াসই ‘রাঢ়াঙ’।
এ অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমির অধিকারের লড়াইয়ে সাঁওতালদের অবদান একটি কিংবদন্তিসম উপাখ্যান। ভারত বিভক্তির পর ইলা মিত্রের নেতৃত্বে নাচোলের কৃষক আন্দোলনে সাঁওতালদের ভূমিকা আজও সংগ্রামী কৃষক ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে পথ দেখায়।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মঞ্চে প্রদর্শিত হয়েছে ‘রাঢ়াঙ’। ভারতের দিল্লি, কেরালা ও দক্ষিণ কোরিয়ার তিনটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে নাটকটি প্রদর্শিত হয়েছে।