‘শো হাউজফুল’, খুশি মায়ার জঞ্জালের প্রযোজক

বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার এই সিনেমায় রয়েছেন অপি করিম, হৃত্বিক চক্রবর্তী।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 02:24 PM
Updated : 25 Feb 2023, 02:24 PM

বাংলাদেশ ও ভারতে শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোট গল্প থেকে নির্মিত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘মায়ার জঞ্জাল’।

সাহিত্যনির্ভর গল্প কিংবা আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত অধিকাংশ সিনেমা দর্শক খরায় ভুগলেও মায়ার জঞ্জালের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

শুক্রবার সাভার সেনা অডিটরিয়াম ও শ্যামলী সিনেমা হলে টিকেট না পেয়ে দর্শকের ফিরে যাওয়ার খবর জানিয়েছেন ছবিটির প্রযোজক জসিম আহমেদ।

তিনি গ্লিটজকে বলেন, “শুক্রবার সাভার সেনা অডিটোরিয়ামে শো হাউজফুল গেছে। শ্যামলী সিনেমা হলে টিকেট না পেয়ে দর্শকের ফিরে যাওয়ার খবর পেয়েছি।”

দর্শকের আগ্রহের সম্ভাব্য কারণ তিনি ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে।

“মায়ার জঞ্জাল পরিণত দর্শকের সিনেমা হলেও এর গল্প এমনভাবে বলা হয়েছে, সব শ্রেণির দর্শক কানেক্ট করতে পারবেন। আর এজন্যই সাভার সেনা অডিটোরিয়ামের মতো সিঙ্গেল স্ক্রিনেও হাউজফুল যাচ্ছে।”

কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোট গল্প অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে মায়ার জঞ্জাল। তবে নির্মাতা বলছেন, পুরো গল্প নয়, গল্পের নির্যাস নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।

জসিম বলেন, “বিষাক্ত প্রেম ও সুবালা লেখা প্রায় ৭০ বছর আগে। আমরা দুটি গল্প থেকে নির্যাস নিয়ে এই সময়ের আলোকে নির্মাণ করেছি। সিনেমাটা বইয়ের ভাষায় নয়; আমাদের ভাষায় কথা বলেছে।

“নির্মাতার কাজ হল সময়ের গল্প বলে যাওয়া। আমরা দুটো গল্পের চরিত্রগুলোকে সময়ের আলোকে ছেড়ে দিয়েছি। তারা মায়া আর জঞ্জালে জড়িয়ে একই বিন্দুতে এসে মিলিত হয়েছে।”

জসিম বলেন, “এতে সমাজের উচ্চ শ্রেণির কথা যেমন বলা হয়েছে, তেমন বলা হয়েছে নিম্ন শ্রেণির কথা। সব শ্রেণির মানুষের বিশ্বাস ও টানপোড়নের গল্প তুলে ধরার ফলে সকল শ্রেণির দর্শক নিজের ভেতরকার নানা অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা খুঁজে পাচ্ছেন।”

ইশতিয়াক চিশতি নামের এক আমেরিকা প্রবাসী সিনেমাটি দেখে গ্লিটজকে বলেন, “ছবিটি খুবই ভালো লেগেছে। শিল্পীরা অনবদ্য অভিনয় করেছেন। গল্প বলার ধরন একেবারেই আলাদা।”

সিনেমাটি দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুভূতি জানিয়েছেন দর্শক। খন্দকার আসাদুজ্জামান কিটন নামের এক দর্শক তার ফেইসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, “অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও বাস্তব অভিনয় দেখে আমি যারপরনাই মুগ্ধ।”

“জসিম আহমেদের সাহসী পদক্ষেপে, ইন্দ্রনীল রায়ের মুন্সিয়ানা, অপি করিম ও ঋতিক চক্রবর্তীসহ সকলের সাবলীল অভিনয় আমাকে আবার চলচ্চিত্রমুখী করতে বাধ্য করবে।”

দেশে স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখাসহ আরও ১২টি হলে মুক্তি পেয়েছে মায়ার জঞ্জাল। সেই সঙ্গে চলছে পশ্চিমবঙ্গের ২০টি হলে।

পশ্চিমবঙ্গে ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে জসিম আহমেদ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে শনিবার থেকে দর্শক হলে আসতে শুরু করে। রবিবার ভিড় বাড়তে থাকে। আমাদের সিনেমাটা যেহেতু শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে, প্রথম দিনের তুলনায় আজ (শনিবার) দর্শক রেসপন্স বেশি। আমরা আশা করছি রবিবার বেশ কয়েকটি শো হাউজফুল যাবে।”

এই সময়সহ পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্রগুলো প্রশংসা করে রিভিউ ছেপেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকার চেয়ে কলকাতায় দর্শক বেশি লেখালেখি করছে সিনেমাটা নিয়ে।”

মায়ার জঞ্জাল পরিচালনা করেছেন ভারতীয় নির্মাতা ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। জসিম আহমেদের পাশাপাশি কলকাতার ফ্লিপবুক আছে সহপ্রযোজক হিসেবে।

ঢাকার অপি করিম, সোহেল মণ্ডল ও কলকাতার ঋত্বিক চক্রবর্তী, ব্রাত্য বসুসহ দুই বাংলার শিল্পীরা এতে অভিনয় করেছেন।

সিনেমাটি মুক্তির আগেই আর্টহাউস চলচ্চিত্রের বিশ্বসেরা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ‘মুবি ডটকম’ এ জ্যঁ লুক গদার, ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা, মার্টিন স্করসেস, কুয়েন্টিন টারান্টিনো, রোমান পোলানস্কি, ডেভিড ফিঞ্চার, ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর মতো খ্যাতিমান নির্মাতাদের মাস্টারপিস সিনেমার পাশাপাশি ‘বিউটিফুল, ইন্টারেস্টিং ও ইনক্রেডিবল’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে।

এছাড়া ২০২০ সালে চীনের সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের এশিয়ান নিউ ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ডের অফিসিয়াল সিলেকশনে আলোচিত মায়ার জঞ্জালের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। ইউরোপিয়ান প্রিমিয়ার হয় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে।