‘লাইভে’ এসে রাজের সব কথার উত্তর দেবেন পরীমনি

পরীমনির প্রতি ‘ভালোবাসা’ জানিয়ে রাজ বলেছেন, আপাতত তিনি ‘অফিসিয়াল ডিভোর্সের’ পথে না হাঁটলেও সংসারে আর ফিরবেন না।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 June 2023, 07:33 AM
Updated : 5 June 2023, 07:33 AM

একটি সংবাদমাধ্যমের লাইভ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ঢাকাই সিনেমার নায়ক শরিফুল রাজ তার সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে ফাঁস হওয়া নায়িকাদের ছবি-ভিডিও এবং তার নিজের পরিবারের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে যা যা বলেছেন, সেইসব কথার উত্তর লাইভে এসেই দেবেন বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী পরীমনি।

সোমবার ভোরে পরীমনি তার ফেইসবুকে এক পোস্টে বলেছেন, “আপনার কালকের লাইভের সব কথার উত্তর আপনাকে আজ লাইভেই দেব। ততক্ষণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক মস্তিষ্কে থাকার চেষ্টা করবেন অব্যশই।“

রোববার প্রথম আলোর লাইভ শোতে গিয়েছিলেন রাজ। ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’ শিরোনামের ওই অনুষ্ঠানে পুরোটা সময়ে স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান ‘সংকট’ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।

গত কয়েক দিনে তাদের দুজনকে নিয়ে হওয়া যাবতীয় খবর এবং ধোঁয়াশার উত্তর দেন ‘পরাণ’ ও ‘দামাল’ সিনেমার এই নায়ক। তাদের দাম্পত্য সমস্যাকে ‘খুঁচিয়ে বাড়িয়ে’ তোলার জন্য একাধিকবার সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

পরীমনির প্রতি ‘ভালোবাসা’ জানিয়ে রাজ বলেছেন, আপাতত তিনি ‘অফিসিয়াল ডিভোর্সের’ পথে না হাঁটলেও সংসারে আর ফিরবেন না।

এই নায়কের ভাষ্য, পরিবার থেকে তিনি কিছুদিন দূরে, একা থাকতে চান এবং কাজে মনোযোগী হতে চান। এবং যখন ইচ্ছা সন্তান রাজ্যকে দেখতেও যেতে চান।

কেন তিনি সংসার ছেড়েছেন সেই কারণটি সবাইকে জানিয়ে দিতে পরীমনিকেই অনুরোধ করেছেন রাজ।

পরীমনি ফেইসবুকে তার পোস্ট শুরু করেছেন সেই লাইভ অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের সঙ্গে রাজের আলাপের ভঙ্গি নিয়ে সমালোচনা করে।

“Md Sariful Razz, আপনি একটু সংযত হতেই পারতেন। সামনে বসে থাকা একজন নারী উপস্থাপক এত ভদ্রতার সাথে আপনাকে প্রশ্ন করছেন, কথা বলছেন, অথচ আপনি অসভ্য এবং উগ্রতার সাথে তর্ক করার মতো করে কথা বলে যাচ্ছেন!”

রাজের ফেইসবুক থেকে নায়িকার ভিডিও ফাঁসের প্রসঙ্গ তুলে পরীমনি বলেন, “আপনাদের বন্ধুদের একান্ত মুহূর্তের সেই সব বাজে, নোংরা ভাষা (…) আপনি সেটাও বলে ফেল্লেন! আবার ‘ফর অ্যান এক্সাম্পল’ বলে সামনে বসা নারীকে আপনার ওয়াইফ হিসেবে দাঁড় করিয়ে কিছু ব্যাখা দেওয়া একজন নারীকে বিব্রত করতে পারে এটা বোঝেন না?“

পরীমনি ও রাজের এবারের সমস্যার শুরু গত ৩০ মে। ওই দিন রাজের ফেইসবুক আইডি থেকে কয়েকটি ভিডিও এবং ছবি প্রকাশ হয়। সেগুলো কিছুক্ষণ পর মুছে দেওয়া হলেও ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়ে নানা মাধ্যমে।

ওই ভিডিও এবং ছবিতে ‘ন ডরাই’ সিনেমার নায়িকা সুনেরাহ এবং ছোট পর্দার অভিনেত্রী তানজিন তিশা এবং অভিনেত্রী নাফিজা তুষি দেখা গিয়েছিল। তাদের ‘অসংলগ্ন’ কথা সোশাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনার খোরাক জোগায়।

ভিডিওর বিষয়ে রাজ বা সুনেরাহর কেউই অস্বীকার করেননি। তবে সুনেরাহর ভাষ্য হল, ওই ভিডিও পাঁচ বছর আগের, যখন তিনি এবং রাজ তাদের প্রথম সিনেমা ‘ন ডরাই’ এর শুটিং করছিলেন।

ফাঁস হওয়া ওই ভিডিও নিয়ে সুনেরাহ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পরীমনির দিকে। অন্যদিকে পরীমনি অভিযোগের আঙুল তুলেছেন সুনেরাহর দিকে।

ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে আইনি লড়াইয়েরও হুমকি দিয়েছেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তিশা।

লাইভ অনুষ্ঠানে রাজ শুরুতেই বলেন, ওই দিন ঘুম থেকে উঠে অন্য সবার মতই তিনি জানতে পারেন, তার ফেইসবুক থেকেই ভিডিওগুলো শেয়ার করা হয়েছে। তার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করা হয়নি, কারণ সেটি ‘সুরক্ষিত’।

তাহলে ফেইসবুকের পাসওয়ার্ড জানা কেউ কাজটি করেছেন কী না প্রশ্ন করলে রাজ বলেন, “এমন অ্যাকসেস নেওয়ার মত মানুষ আছেন। কিন্তু আমি তার নাম প্রকাশ করতে চাই না।“

রাজ বলেছেন, ফাঁস হওয়া ওই ভিডিওর অভিনেত্রীরা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এবং যে বন্ধুত্বের বয়স ১০ থেকে ১৫ বছর। ৫ বছর আগের ভিডিও ছড়িয়ে কে কি প্রমাণ করতে চায় সেটি তার জানা নেই।

এই নায়কের ভাষ্য, ৪/৫ বছর আগে যখন তারা কাজ বা ক্যারিয়ার নিয়ে অতটা ‘সিরিয়াস’ ছিলেন না, এই ভিডিওগুলো সেই সময়ের। যে সময়টিতে তারা তিন বন্ধু মিলে স্রেফ রাস্তায় নিজেদের মত করে ‘প্রাইভেট’ সময়ে মজা করছিলেন, যেমন অনেকেই করে থাকেন।

ভিডিওগুলো তার মোবাইলে ছিল জানিয়ে রাজ বলেছেন, মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে নেওয়া হয়েছে ভিডিওগুলো।

ভিডিও ফাঁসের ব্যাপারে মামলা মোকদ্দমার পথে হাঁটতে চাইছেন না বলেও জানিয়েছেন রাজ। এছাড়া এ ঘটনায় কেবল তিনি একা নন, তার তিন বন্ধু ও সহকর্মীও হেনস্তার শিকার হয়ছেন মন্তব্য করে তাদের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ বলেন. “আমার ঘরের খবর, খুবই ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে সবার আগে কনর্সান হন সাংবাদিকরা। আমি খুশি হতাম আমার কাজ নিয়ে কথা হলে, কাজ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হলে আমি অনুপ্রাণিত হতাম। কিন্তু সবাই যদি আমার খুব ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলে, সেটা আমাকে মানসিকভাবে যন্ত্রণা দেয়। আমি কখনও সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ ছাড়া কথা বলিনি। কিন্তু তাদের ভূমিকা অন্য।“

ঘরের খবর সাংবাদিকদের মাধ্যমে নয়, তাদের (রাজ এবং পরী) সোশাল অ্যাকাউন্ট থেকে আসে- সঞ্চালকের এমন বক্তব্যের পর রাজ বলেন, “আমি করি না, সে আমার স্ত্রী। আমি কোথাও পরীকে ছোটো করে অসম্মান করে কিছু বলিনি, কোনো আভিযোগ করিনি। কিন্তু শুরু থেকেই দেখছি আমাদের বাবা-মা আছেন, কিন্তু মূল অভিভাবক হয়ে গেলেন সাংবাদিকরা। কিন্তু তারা আমার অভিভাবক না। কিছু সাংবাদিক আছেন, আমাকে জোর করে বলেছেন, ‘পরীমনির সঙ্গে কি হয়েছে আমাকে বলতে হবে’।“

এ অবস্থায় নিজের ভাবনা জানিয়ে রাজ বলেন, “আমি আসলে তার সঙ্গে থাকতে সক্ষম না। আমি বিয়ের পরে নিজেকে বদলে ফেলেছি। মানুষ হিসেবে তার খেয়াল রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের সন্তান হওয়ার পর কিছু মানুষ আমার সংসারে যুক্ত হয়েছেন, তারা ভালো মানুষ নন। আমি কিন্তু ওর সব কথা শুনি, আমরা বিশ্বাস করি একে অপরকে খারাপ কাজের দিকে এগিয়ে দেব না। সেও আমার কাজ নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু আমাদের কোনো প্রবলেম হলে সেই আমি ২০ কোটি মানুষকে জানাতে চাই না। “

গত ২০ মে থেকে তিনি পরীমনি এবং রাজ্যকে ঘরে রেখে সংসার ছেড়েছেন জানিয়ে রাজ বলেন, “পরীমনি জানে কেন আমি সংসার ছেড়েছি। পরীমনি যাকে ওস্তাদ মানে এবং আমার বড় ভাই সেই নির্মাতা গিয়াসউদ্দিন সেলিম এবং তার স্ত্রীও জানেন, কেন আমি বাসা ছেড়েছি। তো পরী বলুক কেন রাজ বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছে। সে বলেছে আমি সুনেরাহ সঙ্গে আছি, কিন্তু আমিতো ডাবিং করছি, আরেকজনের বাসায় থাকছি।

ওই লাইভ অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা পরীমনি কমেন্টে লেখেন, “কাল কেন মাঝরাতে বাচ্চা দেখার জন্য জার্নালিস্ট নিয়ে আসছ তাহলে?”

এর উত্তরে ওই অনুষ্ঠানে রাজ বলেন, “আমি জানি না আইনে কি বলছে, আমি আমার বেবিকে দেখার জন্য বিকাল থেকে হতাশ ছিলাম, তাই গেছি। আমার পয়েন্ট হল, আমার সংসার ঠিক করার জন্য জার্নালিস্টরা এত পরামর্শ দেন, তাই তাদের সঙ্গে নিয়েই বাচ্চা দেখতে গিয়েছি। কিন্তু শর্ত ছিল কোনো ক্যামেরা চালু করা যাবে না। আমি কোনো সাংবাদিক নিয়ে হাঙ্গামা করতে যাইনি। ১২ দিন পর রাজ্যকে পেয়ে বাচ্চার সাথে দারুণ সময় কাটিয়েছি। কিন্তু খবর প্রকাশ হয়েছে রাজ মদ্যপ অবস্থায় পরীমনির বাসায় গেছে।“

একমাত্র সন্তান রাজ্যই তাদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত মন্তব্য করে রাজ বলেন, “আমাদের একটা বাচ্চা আছে, আমাদের দুজনেই বাচ্চার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত, কারণ সে বড় হচ্ছে। সব কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সব কিছু এখন বন্ধ রাখা উচিত।“

এখন কি করতে চাইছেন– এমন প্রশ্নে রাজ বলেন, “নিজেকে এবং নিজের কাজে সময় দেওয়া দরকার। আমি আপাতত দূরে থাকতে চাচ্ছি, কিন্তু সেই দূরে থাকার সময়টাকে আমি টেনে নিয়ে যাব না অনেক দিন। আমি জানি না আইন কী বলে, কিন্তু সন্তানের দিকে দুজনেই খেয়াল রাখতে চাই। “

অফিসিয়ালি ডিভোর্সের দিকে আগাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে রাজ বলেন, “ডিভোর্সের বিষয়টি চিন্তাভাবনার জন্য সময় লাগবে। পরীমনির মত আমি হুট করে কিছু একটা লিখে ফেলি না। আমার নিজেকে ঠিক করা উচিত, কাজে ফেরা উচিত, আমার ভালো থাকা উচিত।“

পরীমনির উদ্দেশে রাজ বলেন, “যাই হোক না কেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি। ভালো থেক হাসিখুশি থেক, বাচ্চাকে দেখে রেখ।“

বাচ্চার দিকে তাকিয়ে সংসারে আর ফিরবেন কি না– এ প্রশ্নে রাজ বলেন, “কোনো চান্স নেই। প্রথম ঢাকায় এসে যেমন আমার মনে হয়েছিল, তেমনই মনে হচ্ছে নিজেকে।“

নতুন করে নিজের মত করে জীবন শুরুর জন্য পরীমনির সহযোগিতাও চেয়েছেন রাজ।