কাছে যেতে ভয় পাই, সুমনদা: লোপামুদ্রা

সুমনের ‘জাতিস্মর’ অ্যালবামের কভার ফটো ফেইসবুকে শেয়ার করে লোপামুদ্রা শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন একরাশ কথা।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 March 2024, 06:29 AM
Updated : 17 March 2024, 06:29 AM

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গায়ক কবীর সুমনের জন্মদিন উপলক্ষে শিল্পীর প্রতি শুভেচ্ছা বার্তায় উপচে উঠেছে সোশাল মিডিয়ার নানা মাধ্যম। অনুরাগীদের সেই তালিকায় আছেন কলকাতার শিল্পী লোপামুদ্রা মিত্রও।

সুমনের ‘জাতিস্মর’ অ্যালবামের কভার ফটো ফেইসবুকে শেয়ার করে লোপামুদ্রা তার পছন্দের শিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন একরাশ কথা।

সুমনের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী গেছে শনিবার। লোপামুদ্রা বলেন, তার যতদূর মনে পড়ে, তিনি সুমনের গান প্রথম শোনেন ৯০ সালে। গান শোনার পর লোপামুদ্রার মনে হয়েছিল, ঠিক এমন কিছুই তিনি শুনতে চান।

সুমন কেমন আলোড়ন তুলেছিলেন তা বোঝাতে লোপামুদ্রা লিখেছেন, “গাওয়ার, গানকে নিয়ে ভাবার নতুন দিক খুলে গেল আমাদের। নিজের গান, নিজের জীবন, বদলে গেল প্রতিটি পদক্ষেপ। স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম নতুন করে।“

সুমনের লেখা-সুরে ও সংগীত পরিচালনায় লোপামুদ্রা গান করেন ‘ছোট বড় মিলে’ অ্যালবামে। সে কথাও এসেছে তার স্মৃতিচারণায়।

লোপামুদ্রা মনে করেন, গায়কি এবং গানে শব্দের উচ্চারণ তাকে শিখিয়েছেন সুমন।

“গান কী করে গাইতে হয়, শব্দ কী করে উচ্চারণ করতে হয়, হ্যাঁ, শিখেছি এই মানুষটির কাছে। রবীন্দ্রসদনে আপনি পিয়ানো বাজালেন। ডুয়েট গাইলাম, আমি আপনি, ’মধুগন্ধে ভরা’। গিরিশে, আপনি গিটারে, ডেকে নিলেন আমাকে, গাইলাম ‘তুমি শুনোনা আমার কথা’।“

অভিমান-আক্ষেপেও ঝরেছে লোপার কথায়।

“শুধু একটা সত্যি কথা বলি, দূর থেকে ভালোবাসি আপনাকে। ভীষণ। কাছে যেতে ভয় পাই। খুব। চিরদিন, চিরকাল।

“এই দূরত্ব না থাকলে বাংলা গান আরও সমৃদ্ধ হত। এটা আমার আক্ষেপ, এটা বিশ্বাস আর খুব অভিমান। এতবার আপনার কাছে গেছি, কী অদ্ভুত, ছবি তোলা হয়নি। সব মনে তোলা আছে। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন, সুমনদা।“

শ্বাসকষ্ট আর হৃদযন্ত্রে সমস্যা নিয়ে মাস দুয়েক আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল যেতে হয়েছিল সুমনকে। থাকতেও হয়েছিল কয়েকদিন।

ফিরে এসে সুমন ঘোষণা দেন, আর হয়ত কনসার্টে তাকে পাওয়া যাবে না। তবে বাংলা খেয়াল নিয়ে অনলাইন বা অনুষ্ঠান করার ইচ্ছা আছে তার।

বাংলা আধুনিক গানকে নতুন এক দিশা দেখানো কবীর সুমন এখন আর নতুন গানের অ্যালবাম বের না করলেও শাস্ত্রীয় সংগীত ও খেয়াল নিয়ে মেতে থাকেন। সোশাল মিডিয়ায় খেয়াল সংগীত করে থাকেন প্রায়ই।

১৯৯৬ সালে ‘তোমাকে চাই’ শিরোনামের প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করে ঢাকা-কলকাতা দুই শহরের শ্রোতাদের কাছে সুমন গানের নতুন ভাবনা নিয়ে আবির্ভূত হন।

‘তোমাকে চাই’ ছাড়াও, ‘বসে আঁকো’, ‘ইচ্ছে হল’, ‘গানওয়ালা’, ‘ঘুমাও বাউন্ডুলে, ‘চাইছি তোমার বন্ধুতা’, ‘জাতিস্মর’, ‘পাগলা সানাই’, ‘যাব অচেনায়’, ‘নাগরিক কবিয়াল’, ‘আদাব’সহ আরও কিছু অ্যালবাম সুমন প্রকাশ করেছেন গত তিন দশক ধরে।

ছেলেবেলায় বাবার হাতে শাস্ত্রীয় সংগীতের তালিম নেওয়া সুমন একসময় রবীন্দ্রসংগীত ও আধুনিক বাংলা গান গাইতেন রেডিওতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা  করা এই শিল্পী  জীবনের শুরুর দিকে কাজ করেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে এবং পরে ভয়েস অব আমেরিকা এবং ডয়েচে ভেলেতে। 

মার্কিন লোকসংগীতশিল্পী ও নাগরিক অধিকার কর্মী পিট সিগারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরে সাংবাদিকতা ছেড়ে হাতে গিটার তুলে নেন সুমন।

গানের অ্যালবাম ছাড়াও সুমন বেশি পরিচিত হন তার ওপেন কনসার্টগুলোয়। গিটার, পিয়ানো, মাউথঅর্গান বাজিয়ে গান গাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দর্শকদের সঙ্গে কথোপকথনে সুমনের জুড়ি পাওয়া দুষ্কর।

সুমন সিনেমাতেও গান করেছেন, করেছেন চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা। কলকাতার নির্মাতা সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য সুমন পান জাতীয় পুরস্কার।

সুমন তার সর্বশেষ কনসার্ট করেছেন ঢাকায় ২০২২ সালে। ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের তিন দশক পূর্তিতে তাকে নিয়ে ‘তোমাকে চাই-এর ৩০ বছর উদযাপন’ শীর্ষক গানের আয়োজন করা হয় ঢাকায়।