বছরটা দারুণ কেটেছে টেইলর সুইফটের; শেষটাও হল অসাধারণ, টাইম ম্যাগাজিনের ‘বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব’ নির্বাচিত হয়ে।
বৈশ্বিক ঘটনাবলীর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলা ব্যক্তি, গোষ্ঠী, বস্তু কিংবা কোনো পরিকল্পনাকে প্রতিবছর টাইম ম্যাগাজিন বর্ষসেরা ঘোষণা করে। বুধবার ২০২৩ সালের সেরা ব্যক্তিত্বের নাম ঘোষণা করা হয়।
বিবিসি লিখেছে, এ বছরই বক্স অফিসে নতুন রেকর্ড গড়েছে মার্কিন এই মহাতারকার ‘ইরাস ট্যুর’। তার কনসার্টে টিকেটের চাহিদা এত বেশি ছিল যে এক পর্যায়ে টিকেটমাস্টারের ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করে। বিষয়টি মার্কিন সেনেটের শুনানিতে পর্যন্ত গড়ায়।
গত গ্রীষ্মে সিয়াটলে কনসার্টের টিকিট না পেয়ে হাজারো ভক্ত ভেন্যুর বাইরে গাড়ি পার্কে জড়ো হয়েছিলেন শুধু টেইলর সুইফটের গান শোনার জন্য। তার কনসার্ট সেখানে যে মাত্রার কম্পন তৈরি করেছিল, তা ২.৩ মাত্রার ভূমিকম্পের সমান।
২০২৩ সালে টেইলর সুইফট কাঁপিয়েছেন বার বার, বছরের শেষ দিকে এসে তার নতুন প্রেমের খবরও শিরোমানে এসেছে। আর এবার টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এলেন বারাক ওবামা, গ্রেটা থুনবার্গ, ভলোদিমির জেলেনস্কির উত্তরসূরি হয়ে।
টাইম ম্যাগাজিনকে সুইফট বলেছেন, তিনি আজ দারুণ গর্বিত; নিজেকে এত সুখী আর কখনও তার মনে হয়েনি।
তবে এই অর্জন যে নিদারুণ পরিশ্রমের ফসল, সাফল্য পেতে যে নিজের সবটা নিঙড়ে দিতে হয়েছে, সে কথাও বলেছেন এ সংগীত শিল্পী।
ইরাস ট্যুরে ১৮০ মিনিটের প্রতিটি কনসার্টের জন্য যে পরিমাণ চাপ নিতে হয়, কনসার্ট শেষে নিজেকে তার মনে হয় ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।
“এমনও হয়, খাওয়ার জন্য ছাড়া আমি আর বিছানা থেকেই উঠি না। মাঝে মাঝে খাবার এনে বিছানাতেই খাই। টানা গাইতে হয় বলে কনসার্টের পর আমার কথা বলতেও কষ্ট হয়। গোড়ালির ওপর টানা ওই নাচের পর কনসার্ট শেষে প্রতিটা পা ফেলতে গেলে মনে হয়, পা বুঝি ভেঙে পড়ল।”
আমেরিকান ফুটবলের তারকা খেলোয়াড় ট্র্যাভিস কেলসের সঙ্গে প্রেম নিয়েও টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে কথা বলেছেন টেইলর সুইফট। গত সেপ্টেম্বরে একটি ম্যাচের সময় গ্যালারিতে কেলসের মায়ের সঙ্গে বসে খেলা দেখেন তিনি। তখনিই দুজনের প্রেমের খবর সংবাদ শিরোনামে আসে।
তবে শুরুটা হয়েছিল আরো আগে। সুইফট টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, গত গ্রীষ্মেই প্রথম অভিসার হয়েছিল তাদের, সেপ্টেম্বরে খেলার মাঠে যখন তাদের দেখা গেল, তখন তারা রীতিমত জুটি।
বিবিসি লিখেছে, বছরজুড়ে সুইফট যেভাবে খবরের শিরোনাম দখল করে রেখেছেন, সেখানে তার প্রেমের গল্প ছোট্ট একটি অংশ মাত্র। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার প্রভাব ছিল অনেক বেশি বিস্তৃত।
সুইফটের নামের সঙ্গে ‘সুপারস্টার’ তকমা লেগেছে বহু আগেই। কিন্তু ২০২৩ সালের ইরাস ট্যুর তাকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়।
তিনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছে, এই ৩৩ বছর বয়সে এসে বুঝি আমার কপাল খুলে গেল। আর জীবনে এই প্রথমবার আমার মনে হচ্ছে, যা কিছুই আসুক না কেন, সামলে নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে পুরোপুরি প্রস্তুত আমি।”
টাইম ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক স্যাম জ্যাকবসের ভাষায়, টেইলর সুইফট এমন একজন শিল্পী, যিনি নিজের গানের রচয়িতা এবং নিজের গল্পে তিনিই হিরো। দেশের সীমানা ডিঙিয়ে আলো ছড়ানোর একটি পথ তিনি তৈরি করে নিয়েছেন।
বক্স অফিসে একের পর এক রেকর্ডর পর গত মাসে বিলিয়নেয়ারের তালিকায় নাম ওঠে টেইলর সুইফটের। ব্লুমবার্গের হিসাবে, তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১.১ বিলিয়ন ডলার। এর আগে কেবল তিনজন সংগীতশিল্পী ছিলেন বিলিয়নেয়ারের এই তালিকায়- রিয়ানা, বিয়ন্সে এবং জে-জেড।
তবে সুইফটই প্রথম কেবল সংগীতের আয়ে ওই মাইলফলক ছুঁয়েছেন। বাকি তিনজনের সম্পদে ফ্যাশন, প্রসাধনী পণ্য এবং সংগীত সরঞ্জামের ব্যবসার আয় রয়েছে, যা সুইফটের নেই।
২০২৩ সালের ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচনের জন্য এবার টাইমের সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মত রাষ্ট্রনেতা, বার্বির মত চরিত্র আর হলিউডের লেখক-শিল্পীদের ধর্মঘটের মত ঘটনা।
সবাইকে পেছনে ফেলে টাইমন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে এসেছেন টেইলর সুইফট।