রুপালি পর্দার ‘নিও’ অথবা হিটম্যান ‘জন উইক’ যে কোনো চরিত্রে সাবলীল কিয়ানু কলেজের গণ্ডিও পার হননি।
Published : 02 Sep 2022, 09:25 AM
হাওয়াইয়ান ভাষায় তার নামের প্রথম অংশের অর্থ ‘ঝিরঝিরি পাহাড়ি বায়’। সহকর্মীদের কাছে তিনি মাটির মানুষ। ভক্তকূলের কাছে, তিনি মানেই ম্যাট্রিক্স। শুক্রবার তিনি পূর্ণ করলেন জীবনের ৫৭ বছর।
ইনি কিয়ানু চার্লস রিভস, ভক্তকূলে পরিচিত কিয়ানু রিভস নামে। হলিউডের শীর্ষ সারির এই তারকার অভিনয় জীবনের শুরু মঞ্চে। একাধারে অভিনেতা, সঙ্গীতশিল্পী, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, কমিক বইয়ের লেখক কি না পারেন, ‘ডাউন টু আর্থ’ তারকা।
ভক্তদের চমক দেওয়ার জন্য সুখ্যাতি আছে কিয়ানুর। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নববধূকে অবাক করে দেন তিনি।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম পিপল জানিয়েছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে ইংল্যান্ডের নর্দ্যাম্পশায়ারে একটি হোটেলে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন কিয়ানু এবং নব বর-বধূর সঙ্গে ছবিও তোলেন।
পরে ওই নববধূ সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তার স্বামী হোটেলের বারে কিয়ানুকে দেখেন এবং তাকে গিয়ে অনুরোধ করেন যাতে তিনি তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। তবে এই নব দম্পতি নিশ্চিত ছিলেন না আদৌ কিয়ানু তাদের অনুরোধ রাখবেন কিনা। কিছু সময় পর হঠাৎ কিয়ানু বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন এবং নববধূকে শুভেচ্ছা জানান। একটি তথ্যচিত্রে কাজ করার জন্য কিয়ানু ওই হোটেলেই অবস্থান করছিলেন।
এ ধরনের অসংখ্য ঘটনার জন্ম দেওয়া কিয়ানুর শৈশব-কৈশোর কেটেছে কানাডার অন্টারিওতে। অবশ্য তার জন্ম ১৯৬৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর লেবাননের বৈরুতে।
মজার বিষয় হল, রুপালি পর্দার ‘নিও’ অথবা হিটম্যান ‘জন উইক’- যে কোনো চরিত্রে সাবলীল কিয়ানু কলেজের গণ্ডিও পার হননি। অভিনয়ের নেশায় সৎ-বাবার সাহায্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন কার্ড নেন। কিশোর বয়সেই পাড়ি জমান হলিউডে।
১৯৮৬ সালে ‘ইয়াংব্লাড’ সিনেমা দিয়ে পর্দায় আত্মপ্রকাশ। তবে আগে থেকেই নিয়মিত ছিলেন টেলিভিশনে। কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (সিবিসি) কিশোর সংবাদদাতা ছিলেন।
১৯৮৪ সালেই টেলিভিশন সিরিজ ‘হ্যাংয়িং ইন’ দিয়ে ক্যামেরার সামনে হাজির হন। পরের বছর মঞ্চে নামেন ‘রোমিও জুলিয়েট’ নাটকে মার্কুশিও চরিত্রে কাজ করেন। তার দুই বছর আগেই শুরু জনপ্রিয় পানীয় ব্র্যান্ড কোকা কোলার বিজ্ঞাপনে অংশ নেন। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিয়ানুর জীবনও দারুণ সব উত্থান-পতনে ভরপুর।
চিত্রজগতে প্রবেশ করে উপহার দিয়েছেন ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’, ‘স্পিড’, ‘পয়েন্ট ব্রেক’, ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং’, ‘সুইট নভেম্বর’, ‘প্যারেন্টহুড’, আ ওয়াক ইন দ্য ক্লাউড’-এর মতো জনপ্রিয় সব সিনেমা।
প্রচারের আলো থেকে দূরে থাকতে চাওয়া এই তারকার যেমন অনেক কিছুই রয়েছে ভক্তদের জানা তেমনি রয়েছে অনেক অজানাও।
প্রায় বদলেই ফেলেছিলেন নিজের নাম
২০১৭ সালে টক শো হোস্ট জিমি ফ্যালনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রিভস বলেছিলেন, তিনি হলিউডে যাওয়ার পর এজেন্টরা তার নাম পরিবর্তন করতে চায়। তখন তিনি ছদ্মনাম হিসেবে বেছে নেনে ‘চাক স্পাডিনা’, যা এজেন্টদের মোটেও রোমাঞ্চিত করেনি। বরং এজেন্টরা তার নিজের ‘ইকনিক’ নামটি রাখতেই রাজি হন।
মোটর সাইকেলে আসক্তি
‘স্পিড’ (১৯৯৪) সিনেমার পুলিশ চরিত্র ‘জ্যাক ট্র্যাভেন’ বাস্তব জীবনে দ্রুতগতির মোটর সাইকেলে আসক্ত। বিনোদন সাময়িকী এস্কয়ারকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, তার বাইকের বিশাল সংগ্রহ আছে। একটি মোটর বাইক কোম্পানির মালিকও তিনি। শরীরে রয়েছে অসংখ্য দাগ, যা তিনি বাইক চালাতে গিয়ে পেয়েছেন।
‘হ্যামলেট’ করার জন্য ‘স্পিড ২’ প্রত্যাখ্যান, কিন্তু শেক্সপিয়ারে অবিশ্বাস
কানাডার উইনিপেগের একটি থিয়েটারে শেক্সপিয়ারের ‘হ্যামলেট’ নাটকে অভিনয় করার জন্য ‘স্পিড ২’র মতো সিনেমা ছেড়ে দেন রিভস। এর খেসারতও দিতে হয়েছে তাকে।
অবাক করা ব্যাপার হলেও এটাই সত্যি যে কিয়ানু রিভস মানতে নারাজ, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তার লেখাগুলো নিজে লিখেছেন। বাজফিডের সাথে একটি ভিডিও শুটের সময় তিনি বলেছিলেন যে, তিনি খুব অবাক হয়ে ভাবেন যে শেক্সপিয়ারের নামে লেখাগুলো আসলে কে লিখেছেন?
তিনি শেক্সপিয়ারের লেখক স্বত্বের অক্সফোর্ডের তত্ত্বকে সমর্থন করেন। ওই তত্ত্বমতে, অক্সফোর্ডের ১৭তম আর্ল এডওয়ার্ড ডি ভেরে আসলে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নামে প্রকাশিত কবিতা ও নাটকগুলোর প্রকৃত রচয়িতা। যদিও বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিকেরা তা মানতে নারাজ।
ম্যাট্রিক্স ফ্র্যাঞ্জাইজি
কিয়ানুর ক্যারিয়ারে সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র ‘নিও’। ১৯৯৯ সালে ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ সিনেমার এই চরিত্রে তার অভিনয় শৈলী তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। বক্স অফিসে বাজিমাতের পাশাপাশি সিনেমাটি চারটি বিভাগে অস্কার জেতে। এখন পর্যন্ত এই ফ্যাঞ্চাইজির তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।
অ্যালিস কুপার তার ‘বেবিসিটার’
একজন কস্টিউম ডিজাইনার হওয়ার সুবাদে রিভসের মায়ের জানা-শোনা ছিল রক ‘এন’ রোল ইন্ডাস্ট্রির বিখ্যাত তারকাদের সঙ্গে। তাদের একজন কিংবদন্তি সঙ্গীতকার অ্যালিস কুপার। ২০১৭ সালে জিমি ফ্যালনকে একটি সাক্ষাৎকারে কিয়ানু বলেছিলেন, তাকে বলা হয়েছিল রক সঙ্গীতশিল্পী কুপার তাকে বেবিসিট করেছেন।
‘ডগস্টার’ ব্যান্ড
‘দ্য মাট্রিক্স’ এবং ‘বিল অ্যান্ড টেড’ এ অভিনয়ের মাঝামাঝি সময়ে ‘ডগস্টার’ নামের একটি ব্যান্ডে বেইজ গিটারিস্ট এবং ব্যাকআপ ভোকালিস্ট ছিলেন কিয়ানু রিভস। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তারা একটি ‘এক্সটেনডেড প্লে’ এবং দুটি অ্যালবাম মুক্তি দেন। কালজয়ী সঙ্গীতশিল্পী জন বন জোভি এবং ডেভিড বাওই এই ব্যান্ডটি পছন্দ করতেন এবং তারা ‘ডগস্টার’ এ গাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
সংগ্রহে ‘ভিনটেজ’ টাইপরাইটার
কিয়ানু রিভস পুরনো দিনের টাইপরাইটার সংগ্রহ করতে ভালবাসেন। ২০১৭ সালে ওমেন্স হেলথ সাময়িকীকে তিনি বলেছিলেন, টাইপরাইটারের কি বোর্ডের আওয়াজ তার খুব ভালো লাগে।