ম্যাডোনার সাড়া ফেলা বিতর্কিত ছবিগুলো উঠছে নিলামে

১৯৯২ সালে বইটির প্রকাশনার ৩০তম বার্ষিকীতে এসে প্রথম প্রকাশিত ৪০টির বেশি প্রিন্ট আগামী শরতে ‘ক্রিস্টিস নিউ ইয়র্কে’ নিলামে উঠছে।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 May 2023, 12:05 PM
Updated : 13 May 2023, 12:05 PM

যে বইটি খোদ ভ্যাটিকান তার অনুসারীদের ‘বয়কট’ করার নির্দেশ দিয়েছিল, যা দেশে দেশে নিষিদ্ধও ছিল, পপ-আইকন ম্যাডোনার সেই আর্ট বুক ‘সেক্স’র কিছু ছবি প্রথমবারের মতো বিক্রির জন্য তোলা হচ্ছে নিলামে। 

সিনএনএন জানিয়েছে, ১৯৯২ সালে বইটির প্রকাশনার ৩০তম বার্ষিকীতে এসে প্রথম প্রকাশিত ৪০টির বেশি প্রিন্ট আগামী শরতে ‘ক্রিস্টিস নিউ ইয়র্কে’ নিলামে উঠছে।

ক্রিস্টির ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান আলোকচিত্রী দারিয়াস হিমস জানিয়েছেন, আর্ট বুকটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয় ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ ডলার পর্যন্ত।

বইয়ের ছবিগুলো তুলেছিলেন ফ্যাশন ফটোগ্রাফার স্টিভেন মেইসেল। নিলামে তোলা প্রতিটি ছবিতে ম্যাডোনা এবং মেইসেলের স্বাক্ষর করা আছে।

আর বিক্রিত ছবির আয়ের কিছু অংশ যাবে ম্যাডোনার হাতে গড়া অলাভজনক সংস্থা ‘রাইজিং মালাউই’তে। প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার নানা দেশের এতিম এবং সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য ম্যাডোনা গড়ে তুলেছিলেন ২০০৬ সালে।

আলোকচিত্রী হিমসের ভাষ্য, “৩০ বছর পরেও বইটি এখনও কিছুটা বিতর্কিত। তবে বইটি যৌন-ইতিবাচক বিষয় হিসেবে ধরা হয়।“

কী আছে বইটিতে

বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলা ‘সেক্স’ বইয়ে ম্যাডোনা এবং আরও কয়েকজনের নগ্ন এবং যৌনক্রিয়ার ছবি আছে। ম্যাডোনার সে সময়ের প্রেমিক র‍্যাপার ভ্যানিলা আইস, সুপারমডেল নওমি ক্যাম্টবেল এবং ভন ফার্স্টেনবার্গের মতো তারকাদের পাওয়া যায় ওই বইয়ের ছবিতে।

সেসময় বাজারে দারুণ কাটতি ছিল বইটির। প্রকাশের অল্প সময়ের মধ্যে ১৫ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়ে যায়।

তবে ভ্যাটিকান তার অনুসারীদের বইটি বয়কটের নির্দেশ দেন।জাপানসহ আরও কয়েক দেশে বইটি নিষিদ্ধ করা হয়।

আলোকচিত্রী হিমস ছবিগুলোকে ‘কৌতুকপূর্ণ’ এবং ‘কামোত্তেজক’ দুইভাবেই বর্ণনা করেছেন। এবং তার ভাষ্য, তিন দশক পরেও মেইসেলের ছবিগুলো আবেদন ধরে রেখেছে।

“ছবির সিরিজটি তার প্রজন্মের একজন আইকনিক ফ্যাশান ফটোগ্রাফার এবং পপ সম্রাজ্ঞীর সময়ে একটি মুহূর্তকে ধারণ করে। যারা নগ্নতার ধ্রুপদী দিক তুলে ধরা হয়েছেন। আমি মনে করি এই কাজগুলো একাধিক প্রজন্মকে আনুপ্রাণিত করেছে।”

হিমস সিএনএসকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন এইডস মহামারীর আগ্রাসন ছিল প্রবল, সে সময় ‘সেক্স’ প্রকাশ হয়। বইতে একটি সময়ের সমকামিতার খোলা চিত্রও তুলে ধরা হয়। যখন এর গ্রহণযোগ্যতা সেভাবে ছিল না।

বইটির জন্য ব্যাপক সমালোচিত ম্যাডোনা তার ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলের স্টোরিতে বলেছিলেন, তিনি অনান্য নারী শিল্পীদের যৌনতা প্রকাশের পথ প্রশস্ত করতে সহায়তা করেছিলেন। আর সেই সময় থেবেই তিনি পুরুষ-মহিলা-সবাইকেই চুম্বন করতেন। এমন ছবিও বইতে স্থান পেয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন ম্যাডোনা।

ইনস্টাগ্রামে ম্যাডোনা লিখেছিলেন, “আমাকে বেশ্যা, ডাইনি, ধর্মদ্রোহী এবং শয়তান বলা হত সে সময়। বহু সংকীর্ণ মনের মানুষের ভাষ্য ছিল আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তাতে নাকি নারী হিসেবে আমার লজ্জিত হওয়া উচিত।“

ম্যাডোনা বলেন, “আমি শেষমেশ নিজেকে বাঁচাতে এটাও বলি, আদিকাল থেকে নারীরা সন্তান প্রসব থেকে যা যা করে আসছে, তারই আদ্যোপান্ত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।“

গত বছর মে মাসে আমেরিকান গ্রাফিক ডিজাইনার ও শিল্পী বিপলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যাডোনা বলেছিলেন, “আমরা সবসময় পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করছি, বাস করছি। শিল্পকর্ম তৈরি করা প্রায়শই একটি চ্যালেঞ্জ। এবং এটি সবসময় সুন্দরও হয়না।

অক্টোবরে ক্রিস্টিস ইউইয়র্কে ছবিগুলো নিলামে তোলর আগে, ক্রিস্টিস লন্ডনে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ছবি গুলো প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা চলবে ২ জুন পর্যন্ত।

এরপর ২৭ জুন থেবে ৬ জুলাই প্যারিসে এবং ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে যাওয়ার আগে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত ছবিগুলো প্রদর্শিত হবে।