“এখন ভারতে পুরুষ অভিনেতার তুলনায় নারী অভিনেত্রীরা আরও দক্ষতা নিয়ে কাজ করছে। পুরুষের মতই তারা জনপ্রিয় হচ্ছে।”
Published : 21 Jan 2024, 09:03 PM
ওটিটি যে পুরো বিশ্বেই বিনোদনমাধ্যমকে বদলে দিচ্ছে, সেই বাস্তবতা তুলে ধরে উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর বলেছেন, পরিবর্তনের এই ধারায় নারীরাও এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে তিনি আশাবাদী।
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অংশ হিসেবে রোববার 'আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স' একটি সেশনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।
সকালে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জে দুই দিনের এই আয়োজনের সূচনা হয়, যা সোমবার সন্ধ্যায় শেষ হবে।
রেইনবো ফিল্ম সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আহমেদ মুজতবা জামালের সঞ্চালনায় দিনের শুরুতেই 'উইমেন ইন সিনেমা' সেশনের আলোচনায় অংশ নেন শর্মিলা ঠাকুর।
তিনি বলেন, “সিনেমা থিয়েটার সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। এখন ভারতসহ সারা বিশ্বেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে।
“আমি খুবই আশাবাদী মানুষ। নারীরাও এগিয়েছে। এখন ভারতে পুরুষ অভিনেতার তুলনায় নারী অভিনেত্রীরা আরও দক্ষতা নিয়ে কাজ করছে। পুরুষের মতই তারা জনপ্রিয় হচ্ছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, “আমাদের চারপাশের বিভিন্ন দেশে নানাভাবে এখনও পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিরাজমান। সিনেমা হলো সেই মাধ্যম, যা আমাদের সামনে দেখায় কোনো সমাজে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার গভীরতা কতটুকু।”
আলোচনায় আরও অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন স্টাডিজের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম। সভাপতিত্ব করেন চলচ্চিত্র উৎসবের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক কিশওয়ার কামাল।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক কিশওয়ার কামাল বলেন, “পৃথিবীতে সিনেমা একই ভাষায় একইভাবে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে। আজ নারীদের চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ আমাদের মধ্যে সেই যোগাযোগ তৈরি করছে।”
গত শনিবার থেকে শুরু হয়েছে দ্বাবিংশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাংলাদেশসহ ৭৪টি দেশের আড়াইশ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী ছাড়াও সেমিনার, মাস্টার ক্লাসসহ নানা আয়োজন রয়েছে এবারের উৎসবে।
উৎসবে অংশ নেওয়া সিনেমার মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২৯টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২৩টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র রয়েছে ৭১টি।
উৎসবের অংশ হিসেবে রবি ও সোমবার হচ্ছে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক 'দশম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স'।
এদিনের আরেকটি সেশনে অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিমের সভাপতিত্বে 'নেভিগেটিং ডুয়াল আইডেনটিটি; অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব ইন্টারসেকশনালিটি ইন মাদারহুড অ্যান্ড ফিল্মমেকিং’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের গণযোগাযোগ ও ভিডিওগ্রাফি বিভাগের প্রধান ড. ইপ্সিতা বরাট।
নয়াদিল্লির জামিলা মিলিয়া ইসলামিয়ার ‘এজেকে গণযোগাযোগ গবেষণা কেন্দ্রের’ অধ্যাপক ড. সোহিনী ঘোষ, লেখক ও সমালোচক আলম খোরশেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাতেমা আমিন এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন।
প্রথম দিনের শেষ সেশনে 'স্টিয়ারিং থ্রু দ্য ক্লেভার হুইস্পার্স অফ মডার্নিটি’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের সামারাহ জান্নাতি জামাল।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেকটর ফারাহ কবীরের সভাপতিত্বে এই পর্বে আলোচনায় অংশ নেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিফা আক্তার, ডকুমেন্টারি বিভাগে আন্তর্জাতিক পুরস্কারজয়ী পর্তুগালের নির্মাতা ফিলিপা কারদোসো।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে 'নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ'- স্লোগান সামনে রেখে এ উৎসব চলবে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এশিয়ান প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, ট্রিবিউট, বাংলাদেশ প্যানারোমা, ওয়াইড অ্যাঙ্গেল, সিনেমা অফ দা ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন্স ফিল্ম, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম সেশন-এ সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে এ উৎসবে।
জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, নৃত্যশালা মিলনায়তন, অলিয়ঁস ফ্রঁসেজ মিলনায়তন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাডেমি মিলনায়তনে দেখানো হচ্ছে উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো।
উৎসবের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারছেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় 'আগে এলে আগে দেখবেন' ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হচ্ছে বলে আয়োজকরা জানান।