"আমি জানতাম না এমনটা হবে, পরে বুঝেছি বিষয়টা ঠিক হল না। একটা বিবাদ হবে, মনঃক্ষুণ্নতা তৈরি হবে," বলেন কাজী হায়াৎ।
Published : 24 Apr 2024, 01:23 AM
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথ পাঠ করিয়েছেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াৎ। এ সময় সেখানে উপস্থিত এবারের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার খোরশেদ আলম খসরু শপথস্থল থেকে চলে যান।
সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার শপথ পাঠ করানোর কথা থাকলেও তা না হওয়ায় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (এফডিসি) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে।
মঙ্গলবার বিকালের শপথ গ্রহণের ওই অনুষ্ঠানে সাংবাদিক ও ইউটিউবারদের ওপর শিল্পীদের হামলার ঘটনাও আলোচনা-সমালোচনা তৈরি করেছে। শিল্পীদের হাতে মারধরে রক্তাক্ত হয়েছেন অন্তত ১০ জন সাংবাদিক ও ইউটিউবার।
এ ঘটনার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খসরু অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার পরও তার বদলে শপথ পাঠ করাতে ডাকা হয় পরিচালক ও অভিনেতা কাজী হায়াৎকে। তখন অনুষ্ঠান স্থল থেকে চলে যান খসরু। বিষয়টি ঠিক হয়নি বলে মনে করেন কাজী হায়াৎ নিজেও।
তবে শপথ অনুষ্ঠানের ওই মুহূর্তে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজলের তাৎক্ষণিক অনুরোধে তা প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি বলে জানান তিনি।
এদিন বিকালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২১ সদস্যের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেন। গত ১৯ এপ্রিল ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পায়।
চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী হায়াত নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগরকে শপথবাক্য পাঠ করান। পরে নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি কমিটির অন্য সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।
বিষয়টিতে অপমান অনুভব করেছেন মন্তব্য করে খোরশেদ আলম খসরু গ্লিটজকে বলেন, "কাজী হায়াৎ সাহেব একজন বিজ্ঞ লোক, উনি কেন এটা করলেন? আমার বোধগম্য হল না। যেখানে নির্বাচন কমিশন উপস্থিত আছে, সেখানে তো এটা হয় না।"
তার ভাষ্য, "বিগত সময়েও আমরা দেখেছি প্রধান নির্বাচন কমিশনার নবনির্বাচিত সভাপতিকে শপথ পাঠ করান। পরে সভাপতি তার নির্বাচিত অন্য সদস্যদের শপথ পাঠ করান। কিন্তু এখানে যখন দেখলাম, এটা হচ্ছে না। তখন আমি অপমানিতবোধ করেছি এবং সেখান থেকে চলে আসি। পরে শুনেছি সাংবাদিকদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।"
বিষয়টা একটু খারাপ হয়েছে বলে মনে করেন কাজী হায়াৎও। তিনি গ্লিটজকে বলেন, "আমি জানতাম না এমনটা হবে, পরে বুঝেছি বিষয়টা ঠিক হল না। একটা বিবাদ হবে, মনঃক্ষুণ্নতা তৈরি হবে।"
এ বিষয়ে জানতে নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক ডিপজলকে মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তারা ধরেননি।
শপথ নিয়েই সাংবাদিক মারধরে শিল্পী সমিতির দুই নেতা
শপথ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর পরই সন্ধ্যায় সাংবাদিক ও ইউটিউবারদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান নবনির্বাচিত কমিটির দুজনসহ শিল্পী সমিতির অনেকে। তারা অন্তত ১০ জনকে মেরে রক্তাক্ত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অভিনেতা শিবা শানু, শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক জয় চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো এই মারধরের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তবে শিবা শানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, মারামারিতে জড়ানোর কারণ রয়েছে।
কেন মারামারি করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি এখন কিছু বলব না। অগ্রজ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি হয়েছে। তাদের কাছেই আমি আগে আমার ব্যাখ্যা দেব। এখন আমি শুধু বলব, এক হাতে তালি বাজে না।”
অভিনেতা জয় চৌধুরী ও আলেকজান্ডারকে একাধিক ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
শপথ অনুষ্ঠানের পরপরই শিল্পী সমিতির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কিছু সাংবাদিক ও ইউটিউবারের তর্ক শুরু হয়, যা পরে হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় চেয়ার ছোড়ার ঘটনাও ঘটে।
এ সময় দৈনিক খবরের কাগজের বিনোদন প্রতিবেদক মিঠুন আল মামুন, বাংলাভিশনের ক্যামেরাপারসনসহ ১০ জনের মতো সংবাদকর্মী ও ইউটিউবার আহত হন।
আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এই ঘটনাকে দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার খসরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি সেখান থেকে চলে আসার পর শুনেছি, সাংবাদিকদের মারধর করা হয়েছে।
“নির্বাচনে বিজয়ী হতে না হতেই যদি এই অবস্থা হয়, সেটা খুবই লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক। অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে লজ্জিত। এটা শিল্পীদের আচরণ হতে পারে না।”
কাজী হায়াৎ বলেন, "আমার সামনে এই মারামারি হয়নি। পরে শুনেছি, মারামারি হয়েছে। আমি নিজ থেকে আর জানার চেষ্টা করিনি। এখন এসবে আর জড়াতেও ভালো লাগে না। আমি জানার কোনো প্রচেষ্টাও নেয়নি।"
মিশা-ডিপজলের দু:খপ্রকাশ
ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে অনাকাঙ্খিত মারামারির ঘটনায় দু:খ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক ডিপজল।
বিবৃতিতে বলা হয়, "মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় বিএফডিসির বাগানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সদ্য নির্বাচিত কমিটির বিজয় উপলক্ষে এক মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে আমাদের আমন্ত্রণে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা সংবাদ গ্রহণ করতে এসেছিলেন। তখন অনাহুত পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির কতিপয় নির্বাচিত সদস্য ও সাধারণ সদস্যদের হাতাহাতি হয়। আমরা জানতে পেরেছি এই ঘটনায় বেশ কজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন যা আমাদের ব্যথিত করেছে।"
দু:খ প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
এরইমধ্যে শিল্পী সমিতির নেতা ও সাংবাদিকদের যৌথ আলোচনায় প্রযোজক আরশাদ আদনানকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
কমিটিতে সাংবাদিক লিমন আহমেদ, রাহাত সাইফুল, আহমেদ তৌকির, বুলবুল আহমেদ জয় ও আবুল কালাম এবং শিল্পী সমিতির মিশা সওদাগর, ডি এ তায়েব, নানাশাহ, রুবেল ও রত্না রয়েছেন।
আরও পড়ুন:
এফডিসিতে সাংবাদিক ও ইউটিউবারদের মেরে রক্তাক্ত করলেন শিল্পীরা