সম্পাদকের চেয়ারে ফের বসে যে ইচ্ছা জানালেন নিপুণ

জায়েদ খানের পক্ষে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেয়েই জয়োৎসবে নিপুণ।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 03:14 PM
Updated : 21 Nov 2022, 03:14 PM

জায়েদ খানের পক্ষে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি পেয়েই জয়োৎসবে মাতলেন নিপুণ আক্তার, ফের বসলেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে; সঙ্গে জানালেন, প্রধানমন্ত্রীকে এফডিসিতে আনাই এখন তার লক্ষ্য।

এবার চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে চিত্রনায়িকা নিপুণ এবং চিত্রনায়ক জায়েদ খানের লড়াই চলছে এখন আদালতে।

এর আগে জায়েদ খানের পক্ষে হাই কোর্টের একটি আদেশ হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আপিল করতে সোমবার নিপুণকে অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাই কোর্টের আদেশও স্থগিত করা হয়।

এরপর নিপুণের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেছিলেন, আপিল বিভাগের এ আদেশের ফলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণের দায়িত্ব পালনে আর কোনো বাধা নেই।

দুপুরে ওই আদেশের পর সন্ধ্যায় সমর্থক পরিবেষ্টিত হয় এফডিসিতে উপস্থিত হন নিপুণ, তিনি শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে গিয়ে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন, তার আগে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি বলেন, “টাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়েছিল। আমাদের কাছে তার বিভিন্ন প্রমাণ আছে। অডিও আছে, ছবি আছে। আমরা সেসব আদালতে পেশ করেছি। সত্যের জয় হয়েছে।”

এতদিন আদালতে ‘দৌড়াদৌড়ির’ কারণে কোনো কাজ করতে পারেননি জানিয়ে নিপুণ বলেন, এখন তার মাথা ‘পরিষ্কার হয়েছে’, মন দিয়ে চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করতে পারবেন।

নিজের কাজের অগ্রাধিকার নিয়ে তিনি বলেন, “আজ এখান থেকে বের হয়ে আমার প্রথম কাজ হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তাকে এফডিসিতে নিয়ে আসার জন্য কাজ শুরু করা।

“আমরা দেখেছি, তিনি নিজে যে সব ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেন, সে ক্ষেত্রের সব সমস্যা দূর হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী এফডিসিতে আসলে আমাদের সব সমস্যা শুনে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে চলচ্চিত্রের সমস্যাগুলোও দূর হয়ে যাবে।”

Also Read: নিপুণ বললেন, সত্যের জয়; জায়েদ খান বললেন, মামলা করব

Also Read: শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসলেন নিপুণ

Also Read: নিপুণ-জায়েদ দ্বৈরথ: স্থিতাবস্থা ‘কঠোরভাবে’ মানতে বললো আপিল বিভাগ

নিপুণের সংবাদ সম্মেলন শেষ হতেই তার সমর্থনে শিল্পীদের একটি দল ব্যান্ডপার্টি ও টমটম গাড়ি নিয়ে এফডিসিতে ঢোকে। ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার পর ঘোড়ার গাড়িতে নিপুণকে তুলে আনন্দ-উল্লাস চলে। ঢাক-ঢোল আর সানাই বাজিয়ে তারা মাতিয়ে তোলে এফডিসি।

এরপর শিল্পী সমিতিতে সাধারণ সম্পাদকের নির্ধারিত চেয়ারে বসেন নিপুণ। সংবাদ সম্মেলনে নিপুণের সঙ্গে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মামনুন ইমন, আরমান, জেসমিন, ডি এ তায়েবসহ অনেকেই ছিলেন।

জায়েদ খানকে দেখা যায়নি এফডিসিকে। তাকে একাধিক বার মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি তা কেটে দেন।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এবার ভোটগ্রহণ হয়েছিল এ বছরের ২৮ জানুয়ারি, পরদিন ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

সাধারণ সম্পাদক পদের আরেক প্রার্থী নিপুণ নির্বাচনের সময়ই ‘টাকা দিয়ে ভোট কেনার’ অভিযোগ করেছিলেন জায়েদের বিরুদ্ধে। ভোটের ফল প্রকাশের পর তিনি নির্বাচনী বোর্ডে আপিল করেন। তাতে আপিল বোর্ড জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণা করে। শপথ নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন নিপুণ।

তখন জায়েদ খান যান আদালতে। তার আবেদনে নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত গত ২ মার্চ ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে হাই কোর্ট। এরপর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শপথ নেন জায়েদ। কিন্তু নিপুণের এক আবেদনে গত ৬ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাই কোর্টের রায় স্থগিত করে দেন, সেই সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করা হয়।

আদালতের ওই আদেশের দিনই নিপুণ সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসলে নিপুণের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন জায়েদ খান। ওই আবেদনের ওপর শুনানি করে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ ‘কঠোরভাবে’ স্থিতাবস্থা মেনে চলার আদেশ দেয়।

এখন আপিল বিভাগ নিপুণের ‘লিভ টু্ আপিল’ গ্রহণ করায় সেই স্থিতাবস্থার কার্যকারিতা আর থাকছে না বলে তার আইনজীবীর ভাষ্য।

নিপুণ সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আজ নয় মাস ধরে এটা নিয়ে অনেক কিছু হচ্ছিল। কখনও আমি থাকব, কখনও বা আমার অপজিশন যিনি তিনি থাকবেন।

“তবে আমার একটা বিশ্বাস ছিল। নির্বাচনের সব নিয়ম যথাযথভাবে পালন করেছি। নিয়ম-নীতির বাইরে একদমই যাইনি। সেজন্য আমরা খাবারও পাইনি, পানিও পাইনি। একটা ওয়াশ রুম ব্যবহার করতে পারিনি। সব মেনে নিয়েছি। তবে আমার বিশ্বাস ছিল সত্যের জয় হবে। আপনারা সবাই পাশে ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। আপনাদের কারণেই এই দুর্নীতিগুলো সবার সামনে উঠে এসেছে।”

নির্বাচনে টাকা লেনদেনের বিষয়ে নিপুণ বলেন, “আমরা একটা গান বানিয়ে ছিলাম, ‘টাকা দিয়ে ভোট কেনার দিন শেষ’- সে গানটা নিয়েও আপত্তি ছিল। সেই গানটাই আজ সত্যি হল। টাকা নিয়ে ভোট কেনা হচ্ছিল, আমি সেটাই প্রমাণ করেছি।”