‘স্কুইড গেইম-দ্য চ্যালেঞ্জ’: ‘অসুস্থ’ প্রতিযোগীদের ক্ষতিপূরণ দাবি

প্রতিযোগীদের ‘অসুস্থ’ হওয়ার তথ্য অস্বীকার করে নেটফ্লিক্স বলছে, প্রতিযোগীদের নিরাপত্তার দিকটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছিল।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2023, 10:45 AM
Updated : 26 Nov 2023, 10:45 AM

প্রতিযোগীরা ভেবেছিলেন প্রতিযোগিতা হবে মজার এবং উত্তেজনার, কিন্তু সে সবের বদলে তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে বিপজ্জনক সব পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে ‘গুরুতর অসুস্থ’ হয়ে পড়তে হয়। এমনকি শরীরের তামপাত্রা কমে যায়, বদলে যায় গায়ের রঙও।

এসব অভিযোগ করেছেন নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘স্কুইড গেইম-দ্য চ্যালেঞ্জ’র প্রতিযোগীরা।

আর এজন্য নেটফ্লিক্সের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন তারা, নিচ্ছেন মামলার প্রস্তুতি।

এদিকে, প্রতিযোগীদের ‘অসুস্থ’ হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে নেটফ্লিক্স বলছে, তাদের নিরাপত্তা  ও সুস্বাস্থ্যের দিকটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছিল রিয়েলিটি শোয়ের শুটিংয়ের সময়।

দক্ষিণ কোরীয় থ্রিলারধর্মী জনপ্রিয় সিরিজ ‘স্কুইড গেইম’ অবলম্বনে একটি রিয়েলিটি শো তৈরি করে নেটফ্লিক্স, যার নাম দেওয়া হয় ‘স্কুইড গেইম-দ্য চ্যালেঞ্জ’। নেটফ্লিক্সের সঙ্গে এই রিয়েলিটি শো যৌথভাবে প্রযোজনা করছে স্টুডিও ল্যাম্বার্ট।

বর্তমানে নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা প্রতিযোগীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে ব্রিটিশ আইনি সংস্থা এক্সপ্রেস সলিসিটরস।

এই প্রতিযোগিতায় ৪.৫৬ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার জিতে নিতে অংশগ্রহণকারীরা বিপজ্জনক সব খেলায় নামেন।

প্রতিযোগী ও তাদের আইনি সংস্থা এক্সপ্রেস সলিসিটরস এবং প্রযোজক নেটফ্লিক্স ও স্টুডিও ল্যাম্বার্টের সঙ্গে কথা বলে ভেতরের সমস্যা খুঁজতে চেষ্টা করেছে বিবিসি।

প্রতিযোগীদের অভিযোগ কী?

এক্সপ্রেস সলিসিটরস বলছে, রিয়েলিটি শোয়ের শুটিংয়ে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা মানদণ্ড ‘দুর্বল’ থাকায় এতে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

দুই প্রতিযোগীর খেলার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ‘এক্সপ্রেস সলিসিটরস’ বলছে, রিয়েলিটি শোয়ের শুটিংয়ের সময় তাদের (প্রতিযোগীদের) ঘণ্টার পর ঘণ্টায় হিমশীতল ঠাণ্ডা তাপমাত্রার মধ্যে থাকতে হয়েছে। কোনো কোনো সময়ে খেলার শর্ত ছিল, কেউ নড়াচড়া করতে পারবে না।

এক্সপ্রেস সলিসিটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড্যানিয়েল স্লেড বলেন, “প্রতিযোগীদের ধারণা ছিল, মজার কোনো কিছুতে তারা অংশ নিতে যাচ্ছেন। কিন্তু পরে দেখা যায়, পরিস্থিতি ভিন্ন। আমাদের কাছে এক প্রতিযোগী অভিযোগ করে বলেছেন, তার দুই হাত ঠাণ্ডায় বেগুনি বর্ণ ধারণ করেছিল। এছাড়া ঠাণ্ডায় হাইপোথার্মিয়ায় (শরীরের তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়া) আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ।”

মক্কেলদের এসব অভিযোগের কথা তুলে ধরে এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করে প্রযোজকদের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে এই সংস্থটি। যা মামলা দায়েরের আগের প্রথম ধাপ বলে জানিয়েছে এক্সপ্রেস সলিসিটরস।

ঠাণ্ডার মধ্যে খেলা শেষ করতে টানা সাত ঘণ্টা লেগেছে জানিয়ে প্রতিযোগী লরেঞ্জা নোবিলিও বলেছেন, মাত্রাতিরিক্ত সময় লাগার কারণের তিনি ‘অসুস্থবোধ করেছিলেন’।

নেটফ্লিক্স ও স্টুডিও ল্যামবার্টের বক্তব্য

স্টুডিও ল্যামবার্টের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ল্যামবার্ট ‘সময় বেশি’ লাগার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, যেসব খেলোয়াড়রা খেলা শেষ করতে প্রথম থেকে সক্রিয় ছিলেন তাদের সময় লেগেছে দুই ঘণ্টার মত। আর যারা ধীর গতির, তাদের ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে।

“আমরা শুরুতে সবাইকে সতর্ক করেছি যে, প্রতিযোগিতা কঠিন হতে চলেছে,” বলেন ল্যামবার্ট।

তিনি বলেন, “আগেভাগেই বলা হয়েছিল ভীষণ ঠাণ্ডার মধ্যে শুটিং হবে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে। যদিও আমরা তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিয়েছি। এত বিপুল অর্থ পুরস্কার রাখার অর্থই হল, এতে সাফল্য পাওয়া সহজ নয়।

কিছু প্রতিযোগী বাদ পড়ায় অসন্তুষ্ট ছিলেন জানিয়ে ল্যামবার্ট বলেছেন, ঠাণ্ডায় প্রতিযোগিতা করে পেরে ওঠেননি তারা। আর যারা টিকে ছিলেন শেষ পর্যন্ত, তাদের অবস্থাও ‘বেগতিক’ বলে মনে হয়নি তার।

অন্যদিকে নেটফ্লিক্স বিবৃতিতে বলেছে, “শুটিংয়ের সময় তামপাত্রা কম ছিল এবং তিনজনকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।”

যু্ক্তরাজ্যের দ্য হেলথ অ্যান্ড সেফটি এক্সিকিউটিভ (এইচএসই) বিবিসিকে বলছে, তার রিয়েলিটি শোয়ের প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলেছে।

ভবিষ্যতে শুটিংয়ে যেন কোনো ধরনের ঝুঁকি তৈরি না হয় সেজন্য প্রযোজকদের সঠিক পরিকল্পনা নিতে বলেছে এইচএসই।

প্রতিযোগীদের নিরাপত্তা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে ‘স্কুইড গেইম-দ্য চ্যালেঞ্জ’ এর এক মুখপাত্র বলেছেন, কোনো প্রতিযোগীর পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের খবর তারা পাননি।

সিরিজ ও রিয়েলিটি শো

জীবনযুদ্ধে পরাজিত, সমস্যায় ডুবে যাওয়া ও হতাশ কিছু মানুষের গল্প নিয়ে ২০২১ আসলে নির্মিত হয় ‘স্কুইড গেইম’ সিরিজের প্রথম মৌসুম। কোরীয় ভাষার ওই সিরিজে দেখা যায়, ঋণে জর্জরিত ৪৫৬ জন প্রতিযোগী বিশেষ একটা খেলায় অংশ নেন। খেলার শর্ত হল, জিতলে বিজয়ী পাবেন ৩৯ মিলিয়ন ডলার। আর হারলে মৃত্যু, কোনো মাফ নেই।

এই সিরিজের দ্বিতীয় মৌসুম আসবে আগামী বছর।

নেটফ্লিক্স স্কুইড গেইম নিয়ে সিরিজ বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় গত বছর। রিয়েলিটি সিরিজের প্রথম পর্ব আসে চলতি বছরের ২২ নভেম্বর। ওই পর্বের নাম ছিল ‘গ্রিন লাইট, রেড লাইট’।

সেখানে দেখা গেছে ১৩ দশমিক ৭ ফুট উঁচু পুতুল ইয়াং হি দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে গান গাইতে থাকলে তার পেছন পেছন প্রতিযোগীরা দৌড় শুরু করেন।

আর পুতুল গান থামিয়ে প্রতিযোগীদের দিকে মুখ ফেরালেই প্রতিযোগীদের মূর্তির মত দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। খেলার শর্ত ছিল বিচারকদের চোখে কারো নড়াচড়া ধরা পড়লেই বাদ পড়বেন তিনি।

আর পুরো শুটিংটি হয়েছিল ঠাণ্ডা তামপাত্রায়। দীর্ঘ সময় ঠাণ্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিযোগীরা ভ্যারাইটি মাগ্যাজিনের কাছে প্রথম এই শোয়ের ভুলভ্রান্তি নিয়ে মুখ খোলেন।