পথনাটক পথ ছেড়ে মিলনায়তনে কেন?

মান্নান হীরার স্মরণে পথনাটক প্রদর্শনী হল স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে৷

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2022, 05:31 AM
Updated : 24 Dec 2022, 05:31 AM

পথনাটক হয় উন্মুক্ত স্থানে, কিন্তু এবার চার দেয়ালের ভেতরে আবদ্ধ হয়ে পথনাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ।

সংগঠনের প্রয়াত সভাপতি নাট্যকার মান্নান হীরার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মরণে পথনাটক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে৷ 

শুক্রবার এ আয়োজনে মান্নান হীরা রচিত তিনটি পথনাটক প্রদর্শন করে আরণ্যক নাট্যদল, মুক্তমঞ্চ নাট্যদল ও উৎস নাট্যদল। মঞ্চস্থ হয় ‘মূর্খ লোকের মূর্খ কথা’, ‘বৌ’ ও ‘ইঁদারা’।

এছাড়া মান্নান হীরার সৃষ্টি ও কর্ম নিয়ে কথা বলেন নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ এবং পথনাটক পরিষদের নেতারা।

মিলনায়তনে পথনাটক মঞ্চস্থ করা যায় কি না- জানতে চাইলে মামুনুর রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনুষ্ঠানটি মূলত ছিল মান্নান হীরা স্মরণানুষ্ঠান। এখানে মান্নান হীরাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ হয়েছে, তার পাশাপাশি মান্নান হীরা রচিত তিনটি নাটকের প্রদর্শনী হয়েছে। ফলে ব্যানারে পথনাটক প্রদর্শনী এত বড় করে না লিখে, স্মরণানুষ্ঠান লিখলেই হত। এটা আয়োজকরা ভুল করেছে।”

একই প্রশ্নে পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পথনাটক উন্মুক্ত স্থানেই হওয়া উচিৎ, আমরাও সেভাবেই অভ্যস্ত।

“এই আয়োজনটিও আমরা উন্মুক্ত স্থানে করতেই চেয়েছিলাম, কিন্তু ভেন্যু পাইনি। শহীদ মিনারসহ আশেপাশের কোনো ভেন্যুই আমরা পাইনি৷ সবশেষ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চও চেষ্টা করেছিলাম। সেটাও পাইনি।”

“২৩ ডিসেম্বর মান্নান হীরার প্রয়াণের দিন। আমরা এই দিনটিতেই অনুষ্ঠানটি করতে চেয়েছি। তাই স্টুডিও হলে এই আয়োজন করলাম। এক ধরনের এক্সপেরিমেন্টও হল,” বলেন তিনি।

মান্নান হীরা ২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর প্রয়াত হন। তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনুষ্ঠানে মামুনুর রশীদ বলেন, “হলভর্তি মানুষ দেখেই বোঝা যায় মান্নান হীরা মানুষের মন জুড়ে কতটা আছেন। তার অকাল প্রয়াণ আমাদের নাট্যাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি। মান্নান হীরা ছিলেন সমাজ সচেতন নাট্যকার। নাট্যকার অনেক আছেন। তবে তার মত সমাজ ও রাজনীতি সচেতন নাট্যকার খুব বেশি নেই।”

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, মিজানুর রহমান, আহাম্মেদ গিয়াস। এর আগে মান্নান হীরার প্রতিকৃতিতে ফুল এবং আলোক প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। 

মান্নান হীরার জন্ম ১৯৫৬ সালে, সিরাজগঞ্জ জেলায়। মফস্বল শহর থেকে মাধ্যমিক, রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন। নাট্যচর্চার শুরু থেকেই তিনি আরণ্যক নাট্যদলের সঙ্গে ছিলেন।

অভিনয়, নির্দেশনা এবং সাংগঠনিক কাজে যুক্ত থাকলেও সব কিছু ছাপিয়ে তিনি দেশের প্রধান নাট্যকারদের একজন হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বিশেষ করে পথনাটকে তার অবদান অনন্য।

২০০৬ সালে নাটক শ্রেণিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান মান্নান হীরা। আরণ্যক নাট্যদলের দলপ্রধানের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন।

‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘ফেরারী নিশান’, ‘আদাব’, ‘ঘুমের মানুষ’ ‘মৃগনাভি’, ‘শেকল’, ‘জননী বীরাঙ্গনা’, ‘মণিমুক্তা’, ‘একাত্তরের রাজকন্যা’, ‘মেহেরজান, ‘ফুটপাত’, ‘রেফারী’, ‘বাংলার বাদশা’, ‘সুখদৈত্য’, ‘লাল জমিন’ মান্নান হীরা রচিত উল্লেখযোগ্য নাটক।

‘গরম ভাতের গল্প’ ও ‘৭১-এর রঙপেন্সিল’ নামে দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ করেছিলেন মান্নান হীরা। এছাড়া পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ তারই বানানো।