কতো না গান আছে বৃষ্টি নিয়ে। আর বর্ষা এলে বৃষ্টির গান গুনগুন করে গেয়ে ওঠেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
Published : 23 Jun 2014, 07:35 PM
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বসন্ত ও বর্ষা’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন, “বর্ষাকালে বিরহিণীর সমস্ত ‘আমি’ একত্র হয়, সমস্ত ‘আমি’ জাগিয়া উঠে; দেখে যে বিচ্ছিন্ন ‘আমি’, একক ‘আমি’ অসম্পূর্ণ। সে কাঁদিতে থাকে। সে তাহার নিজের অসম্পূর্ণতা পূর্ণ করিবার জন্য কাহাকেও খুঁজিয়া পায় না। চারি দিকে বৃষ্টি পড়িতেছে, অন্ধকার করিয়াছে; কাহাকেও পাইবার নাই, কিছুই দেখিবার নাই; কেবল বসিয়া বসিয়া অন্তর্দেশের অন্ধকারবাসী একটি অসম্পূর্ণ, সঙ্গীহীন “আমি” র পানে চাহিয়া কাঁদিতে থাকে। ইহাই বর্ষাকালের বিরহ।”
আর সেই বিরহই যেন সম্পূর্ণতা পায় রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গানে। ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’, ‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে’, ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ ‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’, ‘আমার নিশীথ রাতের বাদল ধারা’- এই গানগুলো বাঙালির মনে বর্ষার ছন্দ হয়ে বাজতে থাকে।
এ বিষয়ে ব্যান্ডসদস্য জিয়া বলেন, “মূলত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান জানানোটাই বড় উদ্দেশ্য ছিলো আমাদের। অ্যালবামটি করার সময় লক্ষ্য রেখেছি তার ঋতুভিত্তিক গানগুলো যেন একত্র করা যায়।”
বৃষ্টি নিয়ে ব্যান্ডটির নিজস্ব দুটি গান রয়েছে ‘বৃষ্টি’ ও ‘ভালোবাসা মেঘ’ শিরোনামে।
‘বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি’ গেয়েছিলেন পার্থ বড়ুয়া। দুদশকেরও বেশি সময় ধরে সোলস ব্যান্ডের গিটারিস্ট ও ভোকালিস্ট পার্থ এ গানটি তার একক অ্যালবামের জন্যেই গেয়েছিলেন। গানটি আজও বৃষ্টিবিলাসীদের মন কাড়ে।
ব্যান্ডের জিয়াউল হাসান পিয়াল বলেন, “গানটি করার পেছনে আমাদের তেমন কোনো কারণ ছিলো না। কিন্তু পরবর্তীতে গানটি জনপ্রিয় হল। এরপর আমরা ৯৬ সালে জাহাঙ্গীনগর ইউনিভার্সিটিতে একটা শো করতে গিয়েছিলাম। কনসার্টে সাধারণত আমরা এই গানটিই প্রথমে গাই। এখানেও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। গাইতে শুরু করলাম... ‘আজ কেনো মন’- জায়গাটায় আসতেই বৃষ্টি শুরু হলো। সে বৃষ্টি না থামাতে আমাদের কনসার্ট ভণ্ডুল হয় সেবার। এমনকি সেবার আর কোনো শোই করতে পারিনি আমরা। পরের বছর আবারও কনসার্ট করতে যাই। গানটি প্রথমে না গেয়ে গাইতে শরু করলাম সাত নম্বরে। এবারও বৃষ্টি, এবারও শো শেষ করতে পারলাম না।”
কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লার গান ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে’। আশির দশকের এই গানটি এমন কোনো শ্রোতা নেই যার মন ভোলায়নি। নব্বইয়ের দশকে সেলিম চৌধুরীর গাওয়া ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’, নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরীর গাওয়া ‘আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে’ বৃষ্টি এলেই অনেকে গুন গুন করে গাইতে শুরু করেন।
বলতেই হয় অঞ্জন দত্তের ‘একদিন বৃষ্টিতে বিকেলে’ ও ‘আমি বৃষ্টি দেখেছি’র কথা। সেই সঙ্গে শ্রীকান্ত আচার্যের ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’, নচিকেতার ‘শ্রাবণ ঘনায়’, মৌসুমি ভৌমিকের ‘বৃষ্টি পড়ে রে’ ও ‘ভাবি কখন বৃষ্টি নামবে’ গানগুলোও বেশ শোনা যায়।
‘রাগা’ ব্যান্ডের ‘বৃষ্টি’, ‘জাগো’ সিনেমায় অর্ণবের সুরে কুমার বিশ্বজিৎ ও কণার গাওয়া ‘ঝুম ঝুম ঝুম বৃষ্টি’, অদিতের ‘আজ এই আকাশ’ - হাল আমলের এই গানগুলোও বেশ জনপ্রিয়।