সুরের মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নিলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রবাদপ্রতীম শিল্পী অন্নপূর্ণা দেবী।
Published : 13 Oct 2018, 11:31 AM
এনডিটিভি জানিয়েছে, শনিবার ভোর রাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রখ্যাত এই সুরবাহার শিল্পীর মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
গত কয়েক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন সংগীতগুরু অন্নপূর্ণা দেবী। তার মৃত্যুতে ভারতের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
Saddened at the passing away of Annapurna Devi, the founder of Maihar Gharana. My condolences to her family and admirers
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) October 13, 2018
১৯২৭ সালের ২৩ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মাইহারে জন্ম নেওয়া অন্নপূর্ণার আসল নাম রওশন আরা বেগম।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের অন্যতম দিকপাল ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ তার বাবা। কিংবদন্তি সরোদ বাদক আলী আকবর খাঁ তার ভাই। সেতারবাদক পণ্ডিত রবি শঙ্কর তার প্রথম স্বামী।
বাবার কাছে সংগীতের হাতেখড়ি পাওয়া অন্নপূর্ণা কৈশোরেই তারযন্ত্র সুরবাহার বাদনে অসামান্য পারদর্শিতা অর্জন করেন। তবে সংগীতকে তিনি পেশা হিসেবে নেননি।
মেয়ের বাদনের প্রশংসায় ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ বলেছিলেন, “আমার বাজনা যদি সত্যিকারে কেউ বাজিয়ে থাকে তো সে আমার মেয়ে।”
অন্নপূর্ণা নিজেও শাস্ত্রীয় সংগীতের দীক্ষা দিয়েছেন বহু শিল্পীকে। পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, পণ্ডিত নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, পণ্ডিত আমিত ভট্টাচার্য, নিত্যানন্দ হলদিপুর, সেতারবাদক রুশিকুমার পাণ্ডে, পণ্ডিত প্রদীপ বরাটের মত সুর সাধকেরা রয়েছেন তার শিষ্যদের মধ্যে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবা আলাউদ্দীন খানের ছাত্র রবি শঙ্করকে বিয়ে করে রওশন হয়ে যান অন্নপূর্ণা দেবী। তাদের ছেলে শুভেন্দ্র শঙ্কর শুভ অল্প বয়সেই মারা যান।
পরে ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট রুশিকুমার পাণ্ডের সঙ্গে বিয়ে হয় অন্নপূর্ণার।
তারুণ্যের শুরুতে বিভিন্ন আসরে বাজিয়ে দারুন জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন অন্নপূর্ণা। সে সময় রবি শঙ্করের সঙ্গেও এক মঞ্চে তার যুগলবন্দী হয়েছে।
তবে ওই সময় থেকেই টানাপড়েনের শুরু। বিচ্ছেদের পর নিজেকে অনেকটাই আড়ালে নিয়ে যান অন্নপূর্ণা। তবে নিভৃতেই চলতে থাকে তার সংগীতের সাধনা আর শিক্ষাদান।
কোনো বাণিজ্যিক রেকর্ড কখনও প্রকাশিত না হলেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের জগতে অন্নপূর্ণার অবস্থান ছিল অত্যন্ত উঁচুতে।
ভারত সরকারের পদ্মভূষণ, সংগীত নাটক আকাদেমি অ্যাওয়ার্ড, দেশিকোত্তমসহ নানা সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন।