যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রের ব্যাপারে বরাবরই ইতিবাচক মত দিয়েছেন হল মালিকরা। হল মালিক সমিতির তরফ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, চলচ্চিত্রের বাজার বাঁচাতে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রই ভরসা। টালিগঞ্জের অভিনয়শিল্পী আর প্রযোজকরাও বাংলাদেশে এসে সুর মেলাচ্ছেন তাদের কথায়।
Published : 27 Sep 2015, 09:58 AM
২০১২ সালে সরকার চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণার পর আশান্বিত হয়ে উঠেছিলেন প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী-কলাকুশলীরা। কিন্তু তাতে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহের বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠেকানো যায়নি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র হল মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঞা আলাউদ্দিন গ্লিটজকে জানান, নব্বইয়ের দশকের শেষে সারা দেশে হল প্রায় ১২০০টি হল ছিল। ২০১৫ সালে এসে তা ঠেকেছে তিনশতে। তাও আবার বেশিরভাগই ঈদের সময় খোলা হয়, বাকি সময় বন্ধ থাকে। দেশের প্রতিটি জেলা শহরেই আগে সিনেমা হল ছিল। কিন্তু এখন সেগুলো ভেঙে বিপণীবিতান, পোশাক শিল্প কারখানা বা অন্য বেসরকারি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।
২০১৫ সালের জুন মাসে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসিবা আলী বর্ণার অনুসন্ধানে উঠে আসে দেড় কোটি বাসিন্দার ঢাকা মহানগরীতে প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ৩৩টি থেকে কমে ১৮টিতে ঠেকেছে।
হল মালিক ও প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সাঈফুল ইসলাম চৌধুরী গ্লিটজকে বললেন, “ভারতের ছবির হুবহু নকল, অশ্লীল আর মানহীন গল্প নির্মাণ দর্শকদের ক্রমাগত হল বিমুখ করতে থাকে। আর দর্শক না গেলে ছবি ব্যবসা সফল হয় না। হল চালানোর খরচও ওঠে না।”
তার অভিযোগ, “এখন স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেটের যুগে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যেতে চান না কারণ তারা আজকের বাংলাদেশি সিনেমা দেখে মজা পান না। আর দর্শক না গেলে ছবি ব্যবসা সফল হয় না।”
‘রোমিও ভার্সেস জুলিয়েট’ এবং ‘আশিকি’ তারকা অঙ্কুশও সুর মেলান তার কথায়। তিনি জানান, টালিগঞ্জের বাণিজ্যিক সিনেমাগুলো কালেভদ্রে ব্যবসা করতে পারছে। তাদের সিনেমার মূল দর্শকরা হিন্দি সিনেমাই দেখছে বেশি। ভিন্ন ধারার সিনেমার হাল হকিকতও খুব ভালো না। ‘ভয়ংকর সুন্দর’ সিনেমার শুটিং করতে এসে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও জানালেন, অফট্র্যাক সিনেমাগুলোও চলছে না ভালো।
পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীও এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, “আমরা সিনেমা দেখতে যাই রিল্যাক্স করার জন্য। সেখানে গিয়ে যদি দেখি সিটের তলায় ছাড়পোকা, পায়ের তলায় দৌঁড়ে যাচ্ছে ইঁদুর, ওয়াশরুমগুলোতে ঢোকা যায় না, তা হলে কেন বাবা-মা বা বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ওখানে যাবো বলুন তো!”
এই জট খুলতে তিনি বাংলাদেশ থেকে তিন জন ও ভারত থেকে তিন জন নিয়ে একটি কমিটি করারও প্রস্তাব দেন। বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে সে কমিটির সভাপতি করারও প্রস্তাব করেন তিনি।
তবে মমতার এই উদ্যোগকে ভালোভাবে নেননি বাংলাদেশি অনেক পরিচালক। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেইসবুকে লিখেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ সফরের আগে এক ধরনের মিডিয়া হাইপ তৈরি করা হয়েছে। মমতার এ সফর মূলত আমাদের এখানে কলকাতার সিনেমার বাজার সৃষ্টি করা।"
সফরে মমতার সঙ্গে আসা টালিগঞ্জের দুই মহারথী প্রসেনজিৎ ও দেব এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া নির্মাতা গৌতম ঘোষ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কার্যালয়ে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ নেন। দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মানের বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তারা।
তার কথার সূত্র ধরেই ভারতীয় অভিনেতা প্রসেনজিৎ দুই বাংলার চলচ্চিত্র আমদানি-রপ্তানির ইস্যুতে একটি যৌথ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এ কমিটি ঠিক করে দেবে কোন সিনেমাগুলো বিনিময় হবে, কোন সিনেমাগুলো সেন্সর করা যাবে।
মিঞা আলাউদ্দিনও মনে করেন যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় হল বাঁচবে।
“সিনেমা হলগুলোর যে হাল, তাতে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা এলে কিন্তু ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। বুকিং এজেন্টদের মধ্যেও কিন্তু অনেক আগ্রহ রয়েছে যৌথ প্রযোজনার সিনেমার ব্যাপারে। দর্শকেরও আগ্রহ রয়েছে।”
তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হারুন-অর-রশীদ বললেন, “এখন বাংলা চলচ্চিত্রে বাজার আরও বড় করতে হলে, যৌথ প্রযোজনার বিষয়ে আরও বেশি করে ভাবতে হবে। আমরা দশ বছরে দশটি যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারি। যৌথ কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে এসব চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, নির্মাতা, কলাকুশলীদের বিষয়ে।”
যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘আমি সেই মেয়ে’র প্রযোজক, সেন্সর বোর্ডের রিভিউ কমিটির সদস্য নাসিরউদ্দিন দিলু অবশ্য মনে করেন এতে দুদেশের খুব একটা লাভ হচ্ছে না।
গ্লিটজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাকিব খানও বলছেন, যৌথ প্রযোজনা নয়, নিজেদের হলগুলোকে বাঁচাতে হলে আগে দেশীয় চলচ্চিত্রের মানোন্নয়ন করতে হবে।