আঁধারে ডুবেছে রুপালী পর্দা

ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহের ক্রমবিলুপ্তির এই সময়ে আশা জাগিয়েও গণমানুষের কাছাকাছি যেতে পারছে না হাল ফ্যাশনের সিনেপ্লেক্স; বাংলাদেশের সিনেমার ‘অভাবের সংসারে’ দিন দিন আরও সঙ্কুচিত হয়ে আসছে সাধারণের বিনোদনের সুযোগ।

হাসিবা আলী বর্ণাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2015, 05:43 PM
Updated : 6 March 2015, 06:23 PM

দেড়কোটি মানুষের তিলোত্তমা ঢাকায় প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ৩৩টি থেকে কমে ঠেকেছে ১৮টিতে। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১২ শ’ সিনেমা হল ছিল, তার মধ্যে নয়শ’র বেশি হল বন্ধ হয়ে গেছে।

“গেল দেড় দশকে দেশের কোথাও নতুন কোনো সিনেমা হল হয়নি। সারাদেশে এখন চালু আছে মাত্র ৩২২টি হল। সেগুলোও চলছে ধুঁকে ধুঁকে,” বললেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।

এক সময় অভিযোগ ছিল প্রেক্ষাগৃহের পরিবেশ নিয়ে, চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার আগ্রাসন ঠেকাতে কলাকুশলীদের রাজপথেও নামতে হয়েছে।

আর এখন স্যাটেলাইট টিভি, ইন্টারনেট আর পাইরেসির যুগে দর্শক প্রেক্ষাগৃহে যেতে চান না কারণ তারা আজকের বাংলাদেশি সিনেমা দেখে ‘মজা পান না’। আর দর্শক না গেলে ছবি ব্যবসা সফল হয় না। এ যেন দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রের মতোই।

সেই সঙ্গে ‘ভালো ছবির’ অভাবের কথা বললেন চলচ্চিত্র পরিবেশকরা। আর নির্মাতারা বললেন ‘ভালো মানের’ দর্শক না থাকার কথাও।

চলতি শতকের শুরুতে মাল্টিপ্লেক্স মুভি থিয়েটারের ধারণা বাংলাদেশের সিনেমার বাঁচার আশা জাগালেও গত এক দশকে সেই পথে বেশি দূর এগোনো যায়নি।   

বসুন্ধরা শপিং মলের অংশ হিসাবে ২০০৪ সালে চালু হওয়া স্টার সিনেপ্লেক্স এখন রাজধানীর তরুণদের অন্যতম পছন্দের বিনোদন কেন্দ্র। সম্প্রতি চালু হয়েছে যমুনা ফিউচার পার্কের ‘ব্লক বাস্টার’।

এছাড়া পুরনো ‘শ্যামলী’ হল ভেঙে ‘শ্যামলী স্কয়ার’ শপিং মলের অংশ হিসেবে চালু হয়েছে ‘শ্যামলী সিনেমা’। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ‘লায়ন’ সিনেমা হল ২০০৫ সালে ভেঙে ফেলার পর সেখানে বিপণি বিতান নির্মাণ করে ৩/৪টি হল করার পরিকল্পনা চলছে।

আধুনিক এসব মুভি থিয়েটারে দর্শকদের আরাম আয়েশের ব্যবস্থা থাকলেও যা দেখানো হয় তার বেশিরভাগই সরাসরি আমদানি করা বিদেশি সিনেমা। নির্দিষ্ট দর্শক শ্রেণির জন্য উচ্চমূল্যের টিকিটের এসব মুভি থিয়েটারকে ঐতিহ্যবাহী প্রেক্ষাগৃহের উত্তর প্রতিনিধি মানতে রাজি নন সংশ্লিষ্টদের অনেকই।

“একজন চলচ্চিত্রকর্মী হিসাবে যদি বলি, সিনেপ্লেক্স দিয়ে সিনেমা শিল্প বাঁচবে না।এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে সিনেমা হলকে বাঁচাতে হবে,” বলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিঁয়া আলাউদ্দিন।

পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে এখনো সিনেমা ব্যবসা ধরে রেখেছেন রাজশাহী শহরে টিকে থাকা একমাত্র সিনেমা হল ‘উপহার’ এর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম চৌধুরী।তার ভাষায়, সিনেপ্লেক্স বাংলাদেশের সিনেমার অবস্থা বোঝার ‘ব্যারোমিটার’ হতে পারে না।

“সিনেপ্লেক্সে টিকেটের যে দাম তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব হয় না।ঢাকায় মাল্টিপ্লেক্স যে হলগুলো চলছে সেগুলো মার্কেটের সঙ্গে বিনোদন ব্যবস্থার অংশ। এককভাবে এসব হল থেকে কতটুকু আর্থিক লাভ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”

ঢাকার মাল্টিপ্লেক্স প্রেক্ষাগৃহগুলোতে টিকেটের দাম ৩০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। আর পুরনো সিনেমা হলগুলোতে টিকেটের দাম ড্রেস সার্কেল ১০০ থেকে ১৮০টাকা, রিয়ার স্টল ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং স্টল ২৫ থেকে ৪০ টাকা।

চলতি মাসেই এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় সাতটি সিনেপ্লেক্স নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কবিরপুরে স্থানান্তরের কথা বলেছেন।

হল সংস্কার ও নতুন হল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে প্রযোজনা সংস্থা জ্যাজ মাল্টিমিডিয়াও।

এ প্রতিষ্ঠানের ডিস্ট্রিবিউশন ম্যানেজার মো. এনামুল করিম জানান, তারা চলতি বছরই জেলা শহর পর্যায়ে ১০০টি সিনেমা হল সংস্কার ও প্রয়োজনে নতুন হল নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

“জ্যাজ মাল্টিমিডিয়া নিয়মিতভাবে বছরে ৭/৮টি সিনেমা আনছে। আমাদের লক্ষ্য বছরে ১২টি করে চলচ্চিত্র নির্মাণ। এজন্য হলের ব্যবস্থাও দরকার।”

চলচ্চিত্র সমালোচক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফাহমিদুল হক বলেন, যথাযথ ‘মনোযোগ ও যত্নের অভাবেই’ নাগরিক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের বিনোদনের এ মাধ্যমটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

“বিনোদন পাওয়ার উৎস ও সুযোগ নষ্ট হওয়ায় তাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়ছে। সিনেপ্লেক্স এখনও জনসাধারণের হয়ে ওঠেনি, এটি ‘এলিট কালচারের’ অংশ হয়েই রয়েছে।”

তবে মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা থিয়েটারের সংখ্যা বাড়ানো গেলে, সেই সঙ্গে টিকেটের দাম কমিয়ে ‘সবার’ নাগালে নেওয়া সম্ভব হলে ‘কিছুটা সাম্য’ ফিরবে বলেই ফাহমিদুল হকের প্রত্যাশা।

হল ভাঙার মিছিলে

এক সময় সিনেমা হল ভাঙলে দর্শকদের ভিড় যেন মিছিলের রূপ পেত। আর গত তিন দশকে আক্ষরিক অর্থেই ‘ভাঙার মিছিলে’ যোগ দিয়েছে দেশের অধিকাংশ নামি-দামি সিনেমা হল।

২০১২ সালে সরকার সিনেমাকে শিল্প ঘোষণার পর প্রযোজক, পরিচালক, পরিবেশক, কলা-কুশীলবের মধ্যে আশা জেগেছিল। কিন্তু ব্যবসা সফল ছবির অভাবে এক সময়ের নাম করা হলগুলোর শপিং মল, গার্মেন্ট কারখানা বা বেসরকারি হাসপাতালে পরিণত হওয়া ঠেকানো যায়নি।

অনুপম হায়াতের লেখা ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস’ বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ঢাকায় নির্মিত ‘পিকচার হাউজ’ বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষাগৃহ, পরে যার নাম হয় ‘শাবিস্তান’। কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে হলটি।

১৯৬৪ সালে পোস্তগোলায় নির্মিত হয় তখনকার বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সিনেমা হল ‘ডায়না’, যার আসন সংখ্যা ছিল ১২ শ’। মাস ছয়েক হয়, ডায়নারও ‘মৃত্যু’ হয়েছে।  

পোস্তগোলার যমুনা ২০১৩ সালে বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে হাসপাতাল।ঢাকা সেনানিবাসের গ্যারিসন বন্ধ হয়েছে ২০১৩ সালে, ২০১২ সালে বন্ধ হয়েছে পর্বত, সঙ্গীতা ও ঢাকা সেনানিবাসের সাগরিকা।

গত এক দশকেই বন্ধ হয়েছে রূপমহল, লায়ন, স্টার, মল্লিকা, বিউটি, গুলিস্তান, নাজ ও অতিথী । নিভে গেছে তাজমহল, জ্যোতি ও মুন সিনেমা হলের রুপালী পর্দাও।

ভাঙার পথে রয়েছে আজাদ ও মানসী। মধুমিতা, জোনাকী, পদ্মা ও সুরমাও ভাল নেই।

 

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির মিঁয়া আলাউদ্দিন জানান, গত দুই দশকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও বন্ধ হয়ে গেছে ১৬/১৭ টি প্রেক্ষাগৃহ। হারিয়ে গেছে অলংকার, লায়ন্স, সানাই, রঙ্গম, সাগরিকা, বনানী, খুরশিদ মহল, নূপুর, জলসা, গুলজার, উপহার, রিদম, উজালা, আকাশ, মেলোডি, সিনেমা কর্ণফুলি। 

রাজশাহী মহানগরে বন্ধ হয়েছে উৎসব, স্মৃতি, বনানী, বর্ণালী ও কল্পনা। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য টিকে আছে কেবল ‘উপহার’।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, ঝালকাঠি ও চাঁদপুরে এখন কোনো সিনেমা হল নেই। যশোরের ছয়টি সিনেমা হলের মধ্যে টিম টিম করে জ্বলছে কেবল ‘মনিহার’।

আলমগীর কবির সম্পাদিত চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘সিকোয়েন্স’ এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাংলাদেশে ১২০টি প্রেক্ষাগৃহ ছিল। ১৯৭৪ সালে চালু ছিল ২০৮টি।

১৯৯০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৬৭টিতে। নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠে আরও কিছু সিনেমা হল।

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা সাড়ে বারশতে পৌঁছেছিল। তারপর শুরু হয় মন্দার দিন।

দর্শক কই?

হল মালিকদের কাছে নারী দর্শকরা হলেন ব্যবসার ‘লক্ষ্মী’।একজন মেয়ের সঙ্গে এক বা একাধিক পুরুষ সঙ্গী হলে আসেন, তাতে ব্যবসাও বাড়ে।কিন্তু গত কয়েক দিনে ঢাকার পুরনো সিনেমা হলগুলো ঘুরে সেই লক্ষ্মীদের দেখা পাওয়া গেল না।

ফার্মগেইটের আনন্দ সিনেমা হল থেকে বেরিয়ে আসা এক দর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আগে নিয়মিত হলে এসে বাংলা সিনেমা দেখলেও এখন তার আসা হয় ‘কখনো সখনো’।

“আগে প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই নতুন ছবি দেখতে আসতাম। এখন আর আসি না। আগের মত ছবি দেইখা মজাও পাই না।”

 

পারিবারিক বিনোদনের জায়গা হিসাবে এক সময় সিনেমা হলগুলোর ব্যাপক কদর থাকলেও কেবল টিভি আর ডিভিডির দুনিয়ায় বাড়ির বৈঠকখানাই এখন সিনেমা হল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ‘ভাল ছবির’ অভাব।

২০১৩ সালে সারাদেশে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ৪৪টি চলচ্চিত্র, যার মধ্যে আবার ১৫-১৬টি বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের জন্য নির্মিত।

বাকি ২৫-৩০টি ছবি দিয়ে বছরে ৫২ সপ্তাহ ধরে লাভজনকভাবে হল চালানো সম্ভব হয় না বলে জানালেন মিঁয়া আলাউদ্দিন।

তিনি বলেন, “একজন অনন্ত জলিল বা শাকিব খানকে দিয়ে ৫২ সপ্তাহ হল চালানো সম্ভব নয়। ভালভাবে হল চালানোর জন্য বছরে অন্তত ৫০-৬০টি ভাল ছবি প্রয়োজন।”

এখনকার অধিকাংশ ছবিই হলে দুই সপ্তাহ দর্শক টানতে পারে না জানিয়ে মিঁয়া আলাউদ্দিন বলেন, “এই অবস্থায় হল বাঁচবে কীভাবে, আর ইন্ড্রাস্ট্রি বাঁচবে কীভাবে?’’

এ অবস্থার পেছনে ব্যবসা সফল ছবি নির্মাণ করার মতো মেধাবী চলচ্চিত্রকারেরও অভাবকেও কারণ বলছেন মিঁয়া আলাউদ্দিন।

“পরিচালক যদি দর্শককে আকৃষ্ট করতে পারে তবেই তাকে মেধাবী বলা যায়। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। সরকার থেকে হলগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তি স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু হলে চলার মতো ভাল ছবি কোথায়?’’

তার সঙ্গে কিছু বিষয়ে একমত সাম্প্রতিক আলোচিত সিনেমা ‘জিরো ডিগ্রি’র পরিচালক অনিমেষ আইচও।

তিনি বলেন, “এ খাতে কাঠামোগত অসুবিধা ও সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সেইসঙ্গে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা ও বিনিয়োগেরও অভাব রয়েছে। সরকার ও শিল্পপতিদের এ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।”

তবে দেশে ভালো ছবি নির্মাণ হচ্ছে না- এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝণ্টু।

তিনি বলেন, “দেশে অবশ্যই ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। তবে ভিডিও পাইরেসির জন্য দেশের চলচ্চিত্র মার খেয়ে যাচ্ছে।”

‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটে’র কোর্স পরিচালক এবং সূর্য দীঘল বাড়ি চলচ্চিত্রের অন্যতম পরিচালক মসিহ্উদ্দিন শাকের বলেন, “সিনেমা একটি ক্রিয়েটিভ প্রোডাক্ট। এখানে লার্নিং এপ্রোচ থাকতে হবে। প্রযোজকরা চাইলেই পরিচালককে দিয়ে ‘হিট ছবি’ নির্মাণ করিয়ে নিতে পারেন না। আসলে কারো কাছেই সিনেমা হিট করানোর কোনো নির্দিষ্ট ফমুর্লা নেই।”

তার ভাষায়, “আর্ট ও কর্মাসকে মেশানোর জায়গায় পুঁজি মার খেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত- এই দুটি শ্রেণীর দর্শকদেরকে একই পাতে খাওয়ানো প্রায় অসাধ্য। সিনেমা তাদের খুশি করতে পারছে না।”

শাকের বলেন, সিনেমা শিল্প টিকাতে হলে পুঁজি ফেরত আসতে হবে। আর ভালো ছবি ব্যবসাসফল করার জন্য ভালো মানের দর্শকও প্রয়োজন।