বন্যা বলেন, "সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে ছুটলে চলবে না। বিটিভির অনুষ্ঠানের ধরন ও মনন সবই হবে পরিশীলিত।
Published : 28 Apr 2024, 02:03 PM
সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে না ছুটে অনুষ্ঠানের ধরন পরিশীলিত রাখতে বাংলাদেশ টেলিভিশন-বিটিভিকে পরামর্শ দিয়েছেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ পদক পাওয়া এই সংগীত শিল্পী বলেন, "বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে শিল্প সৃষ্টির পাগলামিটা থাকতে হবে, অভিনব চিন্তাধারা থাকতে হবে।"
বিটিভির উদ্যোগে শনিবার ঢাকা কেন্দ্রের সভাকক্ষে অংশীজন সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বন্যা বলেন, "সস্তা জনপ্রিয়তার দিকে ছুটলে চলবে না। বিটিভির অনুষ্ঠানের ধরন ও মনন সবই হবে পরিশীলিত। গবেষণামূলক কাজ থাকতে হবে, নতুন ভাবনার প্রতিফলন থাকতে হবে।"
বিটিভির কর্মীদের প্রতি তার পরামর্শ– "এখানকার কর্মীদের শুধুমাত্র টেলিভিশনে চাকরি করলে হবে না, টেলিভিশনটাকে ভালোওবাসতে হবে।“
সভায় আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘বাংলাদেশের সংগীত: ঐতিহ্য ও সমকালীন চর্চা’। আলোচনা অনুষ্ঠানে বন্যার ‘পদ্মশ্রী’ পদকপ্রাপ্তিতে তাকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়।
দেশের প্রখ্যাত সংগীত শিল্পীদের পাশাপাশি, সংগীত পরিচালক, গীতিকবি ও সুরকাররা সভায় অংশ নেন।
বিটিভির মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, সংসদ সদস্য অণিমা মুক্তি গোমেজ, ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারসহ বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অংশীজন সভার শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ও লোকসংস্কৃতি গবেষক সাইমন জাকারিয়া।
বিটিভির মহাপরিচালক তার বক্তব্যে বলেন, "আমাদের সংগীতের ভবিষ্যৎ কি ক্ষয়িষ্ণু? এটা কি ক্রমশ ধূসর হতে যাচ্ছে? বর্তমান সময়ে এ প্রশ্নটা অনেক কষ্টদায়কভাবে আমাদের মধ্যে কাজ করছে।"
বাংলাদেশের সংগীতের ঐহিত্য, বর্তমান ও ভবিষ্যত- এটা ঠিক করার জন্য করণীয় কী, সেই প্রশ্ন রেখে বিটিভির মহাপরিচালক বলেন, "আমরা কেন বাংলা গানের ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলছি, লোকজ গান কেন হারিয়ে যাচ্ছে? এখানে শিল্পী, রাষ্ট্র ও বিটিভির কী করণীয়- এ ব্যাপারে আপনাদের পরামর্শ দিন।
“আপনারাই পলিসি মেকার হিসেবে কাজ করুন। আপনাদের মতামত ও পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে বিটিভি মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে।"
মহাপরিচালক তার বক্তব্যে রেকর্ডিং স্টুডিওতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যাবহার ও প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্বদের সৃষ্টিগুলোকে আর্কাইভ করে রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
অন্যদের মধ্যে খুরশিদ আলম, ফরিদা পারভীন, কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, অণিমা মুক্তি গোমেজ, শেলু বড়ুয়া, সালমা আকবর, ফকির শাহাবুদ্দিন, মকসুদ জামিল মিন্টু, নাছির আহমেদ, হাসান মতিউর রহমান, আবু বকর সিদ্দিকী, আনিসুর রহমান তনু, ইউসুফ, চম্পা বণিক সভায় বক্তব্য দেন।
সংসদ সদস্য ও লোকসংগীত শিল্পী অণিমা মুক্তি গোমেজ বলেন, "সংগীতের সমকালীন অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সমস্ত শিল্পীদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।"
সংগীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় বলেন, "ঐতিহ্য সমকালীন চর্চা দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তখন ঐহিত্য আর ঐহিত্য থাকে না। সংগীত সাধনার ক্ষেত্রেও এ ব্যাপারটা মাথায় রাখা জরুরি।"
লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন বলেন, "বাংলা গান আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি, এটাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলা গানের শুদ্ধতা বজায় রাখতে হবে এবং এ প্রজন্মের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমি লালনের গানের একজন সাধক হিসেবে চাইব- রবীন্দ্র ও নজরুল চর্চা যেমন ঘটা করে হয়, লালনের গানের চর্চাটাও যেন তেমন হয়।"