ওই কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী।
Published : 29 Aug 2022, 10:45 PM
‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে বন অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তা মামলার আবেদন দিয়েছিলেন আদালতে, এখন তিনিই পড়েছেন বিপাকে।
মামলা করার কারণ দর্শাতে তাকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে নোটিস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
মেজবাউর রহমান সুমন নির্মিত ‘হাওয়া’ সিনেমায় শালিক পাখি খাঁচায় বন্দি এবং তা রান্না করে খাওয়া দেখিয়ে আইন লঙ্ঘন হয়েছে বলে প্রাণী অধিকারকর্মীরা অভিযোগ তোলেন।
এরপর বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের চারজন কর্মকর্তা সিনেমাটি দেখে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার কথা জানান।
তার ভিত্তিতে ইউনিটের পরিদর্শক নারগিস সুলতানা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে গত ১৭ অগাস্ট মামলার আবেদন জমা দেন ঢাকার আদালতে।
তবে অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের ক্ষোভের মধ্যে রোববারই সেই মামলার আবেদন প্রত্যাহারের কথা জানায় বন অধিদপ্তর।
তার একদিন বাদেই কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিল্পীদের সঙ্গে বৈঠক করে মামলাকারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন সাবেক পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার বিকালে ঢাকার মিন্টো রোডের তথ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, অভিনেতা-নাট্য নির্দেশক তারিক আনাম খান, নির্মাতা অমিতাভ রেজা, এস এ হক অলীক, মেজবাউর রহমান সুমন, সৈয়দ গাউসুল আলম, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, চঞ্চল চৌধুরী।
তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের সামনে এসে ‘হাওয়া’ সিনেমাকে প্রশংসায় ভাসান।
‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে বন বিভাগের মামলার আবেদন
‘হাওয়া’র বিরুদ্ধে মামলা তুলতে বন বিভাগের আবেদন
তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সিনেমা আবার দর্শকদের হলে ফিরিয়ে এনেছে। সেই সিনেমাগুলোর একটি হাওয়া। এর পরিচালকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। আমি বিদেশে ছিলাম, জানার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলি, সেই মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
“যে কর্মকর্তা মামলা করেছে, তাকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কারণ দর্শাও নোটিস দেওয়া হয়েছে। আইনের যদি ব্যত্যয় হয়ে থাকে, তাহলে পরিচালককে নোটিস করতে পারত। সরাসরি কোর্টে গিয়ে মামলা করা সমীচীন হয়নি বলে আমি মনে করি।”
শনিবার বিকেল এর মুক্তির পথ খুলছে’
বৈঠকে সেন্সর বোর্ডে আটকে থাকা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি নিয়েও কথা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ঢাকায় হলি আর্টিজানে যে হামলা হয়েছিল, সেই ঘটনার উপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে দু’জন পুলিশ অফিসার মারা গেছেন এবং আমাদের পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে জঙ্গিদের দমন করেছিল।
“সেন্সর বোর্ডের অভিমত, সেই বিষয়গুলো সিনেমাটিতে আসেনি। সেজন্য এই দৃশ্যগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে। সেটি তারা কিছুটা করেছে বলে আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু সেটিও যথেষ্ট নয়। তারা আপিল করেছিল। আপিল কর্তৃপক্ষ সিনেমার পরিচালক ও প্রযোজককে জানিয়ে দেবে কী কী সংযোজন করা প্রয়োজন। সেগুলো সংযোজন হলে আমি মনে করি এই সিনেমা রিলিজ করার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে সেটি কেটে যাবে।”
ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, “ওটিটি একটি ক্রমবর্ধমান আধুনিক প্লাটফর্ম এবং বর্তমান পৃথিবীর বাস্তবতা। আমরা এটিকে প্রমোট করতে চাই। ওটিটি প্লাটফর্ম এত বিস্তৃত, এতো ব্যাপকভাবে ক্রমবর্ধমান যে এটিকে সেন্সর করা সম্ভব নয়। সেজন্য এটি একটি নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
“যারা ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করে তাদেরকে দিয়েই মন্ত্রণালয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে, সেই কমিটি কাজ করছে এবং সেই কমিটি সমস্ত অংশীজনদের সাথে আলাপ করে এই নীতিমালা চূড়ান্ত করবে। আমরা এমন একটি নীতিমালা করতে চাই, যে নীতিমালা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং একইসাথে আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করবে।”
চলচ্চিত্রে অনুদান নিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “সিনেমা শিল্প নানা সংকটের মধ্য দিয়ে এখন ভালোর দিকে যাচ্ছে। আমরা বাণিজ্যিক ছবিতে অনুদান দিয়েছি, কারণ সিনেমা বানিয়ে আসলে পয়সা উঠত না, এখন উঠবে। এখন আবার দর্শক ফিরে আসছে, সিনেমা হল বাড়ছে। আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। একইসাথে আর্টফিল্মে অনুদান দেওয়া প্রয়োজন। আর্ট ফিল্ম ব্যবসা করতে পারে না, কিন্তু আর্টফিল্মের প্রয়োজন আছে।”