মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আজকে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক শহীদ আবু সাইদের মা। এই উদ্বোধক নির্বাচনটাই বলে দেয় আমরা কোন বাংলাদেশে আছি এবং কোন পথে হাঁটছি।"
Published : 01 Feb 2025, 03:53 PM
‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’– প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হয়েছে ৩৭তম জাতীয় কবিতা উৎসব।
শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম জাতীয় পতাকা ও কবিতা পরিষদের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে কবিতা উৎসবের উদ্বোধন করেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, গণঅভ্যুত্থানে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান, সদস্য সচিব রেজাউদ্দিন স্টালিন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
পরে তারা বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ান। উদ্বোধনের পর মঞ্চে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। এরপর একুশের গান, উৎসবসংগীত ও জুলাইয়ের গান পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পীরা।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আজকে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক শহীদ আবু সাইদের মা। এই উদ্বোধক নির্বাচনটাই বলে দেয় আমরা কোন বাংলাদেশে আছি এবং কোন পথে হাঁটছি।"
গণঅভ্যুত্থানে কবিতার ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনি দেখবেন যে এবারের আন্দোলনে কবি নজরুল নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছেন। তার কবিতা বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালে লেখা হয়েছে, গানে এসেছে, স্লোগানে এসেছে। এবারের আন্দোলনে কবিতা, গ্রাফিতি, এগুলো কার্যকরভাবে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।”
“অর্থাৎ, আমরা শিল্পের শক্তির কাছে আবারও ফিরে গেছি। এবং শিল্পই আমাদের শক্তি দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে আমাদের শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের মানুষ সবাই জনগণের পক্ষেই থাকবেন।”
মেলায় প্রকাশের আগে বইয়ের পাণ্ডুলিপি পুলিশ যাচাই চায় বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা। তার ভাষায়, বর্তমান সরকার ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী’।
“একজন পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি অথবা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এবার না পারা গেলেও আগামীবার দেওয়া উচিত।
“এটা অবিশ্বাস্য, এটা হাস্যকর। এটা আমাদের সরকারের নীতিমালার আশপাশেই নাই। আমাদের সরকার স্পষ্ট বিশ্বাস করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাতে। এবং সেটা যদি আমাকেও গালমন্দ করে এতে কিছু যায় আসে না। আমরা কোনো মতপ্রকাশে সেন্সরশিপে বিশ্বাস করি না।”
দুদিনব্যাপী এই উৎসবের প্রথম দিন পাঁচটি পর্বে কবিতা পাঠ করবেন আমন্ত্রিত দেশি-বিদেশি ও নিবন্ধিত কবিরা।
আর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আবৃত্তি পর্ব ও কবিতার গান পর্বের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ হবে।
এরপর রোববার সকাল ১০টায় তারুণ্যের গান পর্বের মধ্য দিয়ে উৎসবের দ্বিতীয় ও শেষ দিনের অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করা হবে।
এরপর দ্বিতীয় দিনেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনটি পর্বে নিবন্ধিত কবিরা কবিতা পাঠ করবেন।
দ্বিতীয় দিন বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হকের সভাপতিত্বে ‘স্বাধীনতা সাম্য ও সম্প্রীতি: বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক সেমিনার হবে।
এতে মূল আলোচনা করবেন গবেষক ও অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। এরপর বিকাল ৫টায় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।
বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমন্ত্রিত কবিরা কবিতা পাঠ করবেন। আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পীদের নিয়ে রাত ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত আবৃত্তি পর্ব ও আমন্ত্রিত শিল্পীদের অংশগ্রহণে নৃত্যপর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
রাত ৯টায় সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ৩৭তম জাতীয় কবিতা উৎসবের।