‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ অবশেষে পেল ওড়ার অবলম্বন

সিনেমাটি মুক্তির জন্য প্রেক্ষাগৃহ না পেয়ে হতাশ ছিলেন নির্মাতা কাইউম; তিনি দর্শকদের অনুরোধ করে বলেছেন, তার সিনেমাটি দেখলে নিরীক্ষাধর্মী চলচ্চিত্র উৎসাহ পাবে।

পাভেল রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2022, 11:47 AM
Updated : 3 Nov 2022, 11:47 AM

সিনেমা বানানোর পর তা দেখাতে কোনো প্রেক্ষাগৃহ আগ্রহী না হওয়ায় হতাশায় ডুবেছিলেন মুহাম্মদ কাইউম; অবশেষে তার উদ্বেগ কিছুটা প্রশমন হল। তার নির্মিত ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ অবশেষে স্টার সিনেপ্লেক্স প্রদর্শনে রাজি হয়েছে।

হাওর অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের জীবন সংগ্রাম ও সেখানকার সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে এই সিনেমাটি তৈরি করেছেন কাইউম। গত ২৯ অক্টোবর এর প্রিমিয়ার শো হলেও এর ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে শঙ্কা থেকে এরপর কোনো প্রেক্ষাগৃহ আগ্রহী হচ্ছিল না প্রদর্শনে।

এখন ১১৭ মিনিটের এই সিনেমাটি বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পাবে শুক্রবার। প্রতিদিন দুটি শোর একটি শুরু হবে বেলা ১১টায় এবং দ্বিতীয় শো বিকাল সাড়ে ৪টায়। সিনেমাটি দেখানো হবে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত।

নির্মাতা কাইউম বলেন, “শুভবোধ সম্পন্ন মানুষকে অনুরোধ করব, সিনেমাটি দেখতে আসুন। আপনারা সিনেমাটি দেখলে হয়ত হল মালিকেরা আগ্রহী হবে। এ ধরনের সিনেমা দেখতে আসলেই ভিন্ন রকম গল্প নিয়ে সিনেমা নির্মাণে নির্মাতারা সাহস পাবেন।”

অনেক ঘুরেও সিনেমাটি মুক্তির জন্য হল পাচ্ছিলেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা এবং বিভিন্ন জেলা শহরের সিনেমা হল মালিকদের সাথেও কথা বলেছি। তারা কেউ সিনেমাটি প্রদর্শনে আগ্রহী নন। অনুরোধ করেই স্টার সিনেপ্লেক্সকে রাজি করানো হয়েছে।

“হল মালিকরা  বলছেন, ‘এ ধরনের সিনেমা প্রদর্শন করে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া যায় না। লোকসান গুণতে হবে’। কিন্তু এ ধরনের নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা প্রদর্শনের তাহলে ব্যবস্থা কী? সরকার কি ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছে?” 

আক্ষেপ করে কলকাতার প্রেক্ষাগৃহ ‘নন্দন’র উদাহরণ টেনে কাইয়ুম বলেন, “আমাদের কেন এরকম একটি বিকল্প ‘ফিল্ম সেন্টার’ গড়ে উঠল না? যেখানে সব রকম সিনেমা প্রদর্শনের সুযোগ থাকবে। ভিন্ন গল্পের সিনেমা হলেই আমাদের হল মালিকরা নিতে চান না। সরকারও বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করেননি। তাহলে ভিন্ন গল্পের নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা নির্মাণ করে লাভ কী? সব কি শুধু নাচ-গানে.. সরকারের ভাবা উচিৎ।”

তিনি জানান, বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে বৈষম্য-বঞ্চনার মাঝে টিকে থাকা প্রান্তিক মানুষের সম্মিলিত লড়াইয়ের গল্প নিয়ে ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমাটি বানানো হয়েছে। হাওরের জল ও কাদায় মেশা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উঠে এসেছে কাহিনীতে।

সিনেমাটির বিশেষত্ব কী- প্রশ্নে পরিচালকের উত্তর- দেশ ও সমাজের ভিত্তিমূলে যে শ্রমজীবী মানুষ, তাদের জীবন সংগ্রামের কথা নাটকীয় দৃশ্যরূপে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

গত তিন বছর ধরে হাওরের দুর্গম এলাকায় শুটিং হয়েছে এই সিনেমার।

কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, “কোনো ডাবিং করা হয়নি, সম্পূর্ণ সংলাপ লোকেশনে রেকর্ড করা। বাণিজ্যিক ফর্মুলার বাইরে শিল্পমানসম্মত সিনেমা নির্মাণের প্রচেষ্টা। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করেছি আমরা, যা কেবল সিনেমার জন্যই লেখা।”

সিনেমাটির প্রিমিয়ার শো দেখার পর তরুণ লেখক ও সমালোচক বিধান রিবেরু ফেইসবুকে লিখেছেন, “কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া বাংলাদেশের হাওর অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, চাষাবাদ, মিথ, রিচুয়াল, মানুষের জীবনযাপনের এক প্রামাণ্য দলিল হয়ে থাকবে। কাহিনিচিত্র না হয়ে ছবিটি প্রামাণ্যচিত্র হলেই বরং অন্য উচ্চতায় যেতে পারত।”

‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন জয়িতা মহলানবীশ, উজ্জ্বল কবির হিমু, সুমী ইসলাম, সামিয়া আকতার বৃষ্টি, বাদল শহীদ, মাহমুদ আলম ও আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

নির্মাতার ভাষ্য, তার সিনেমায় তেমন বড় তারকা বা তথাকথিত স্টার নেই। কিন্তু যারা অভিনয় করেছেন তারা থিয়েটারে অভিনয় শিখেছেন এবং তাদের অভিনয় পরীক্ষিত।