‘দাদা, আজকে শুটিং শেষ করতে না পারলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি সিনটা করি।’
Published : 02 Jul 2024, 10:01 AM
কলকাতায় শুটিং করার সময় বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েও, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। এক দশক আগের সেই ঘটনা এখনো আপ্লুত করে ওই সিনেমার পরিচালক অরিন্দম শীলকে।
অরিন্দমের হাত ধরে ২০১০ সালে ‘আবর্ত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে জয়ার কেবল কলকাতা যাত্রাই শুরু হয়নি। চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারও খুলে যায় ওই কাজটির মাধ্যমে।
সোমবার জয়ার জন্মদিন। সে উপলক্ষে বাংলাদেশের এই অভিনেত্রীকে নিয়ে কিছু স্মৃতিকথা অরিন্দম তুলে ধরেছেন আনন্দবাজারের কাছে।
তিনি বলেন, “অভিনেত্রী জয়া এপার বাংলার (কলকাতা) দর্শকদের কাছে এখন পরিচিত মুখ। কিন্তু আমি ওকে কীভাবে খুঁজে পাই, সেই অজানা গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই। আমি শুরু থেকেই তারকা নয়, চরিত্রের কথা ভেবে অভিনেতা নির্বাচনের চেষ্টা করি। সেই চিন্তা থেকে ‘আবর্ত’ সিনেমায় জয়াকে নির্বাচন করা। কলকাতায় তখন ‘চারু’ চরিত্রের জন্য অভিনেত্রীর খোঁজ করছি। অথচ চরিত্রটির জন্য একাকী, নিষ্পাপ, শান্ত একটা মুখ কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। তখন বাংলাদেশের আমার কয়েকজন বন্ধু জয়ার কথা বলেন। সেটি ২০১০ সাল। মনে আছে, আমার বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে জয়াকে ফোন করেছিলাম। জয়া আমাকে বলল, দাদা আমি ঢাকা থেকে অনেক দূরে শুট করছি। আপনাকে আমার কাজের কিছু নমুনা পাঠাচ্ছি। আপনি দেখে নিন। তারপর আমরা কথা বলব।’’
এরপর ঢাকায় এসে জয়াকে চিত্রনাট্য পড়ে শোনানোর আগে বিভিন্ন দৃশ্য অভিনেত্রীকে ফোনে পড়ে শোনাতেন অরিন্দম। জয়ার মতামত নিতেন। এভাবেই ‘চারু’ চরিত্রের জন্য জয়াকে নির্বাচন করে ফেলেন পরিচালক।
রসিকতা করে অরিন্দম বলেন, ফোনে এত কথাবার্তা সারতে গিয়ে আইএসডি বিল মেটাতে দারুণ বেগ পেতে হয়েছিল!
এই পরিচালক বলেন, “জয়া প্রসঙ্গে একটি ঘটনা না বললেই নয়। ‘আবর্তর শেষ দিনের শুটিং চলার সময়ে ফোনে জয়া তার বাবার মৃত্যু খবর পান। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঢাকা ফিরে যেতে বললাম, কিন্তু জয়া আমাকে যা বলেছিল, আজও আমার স্পষ্ট মনে আছে। ও বলেছিল, ‘দাদা, আজকে শুটিং শেষ করতে না পারলে তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমি সিনটা করি।’
“আমি ওর কথা শুনে হতবাক। কি বলব, বুঝতে পারছি না, কিছুক্ষণ চুপ থেকে আমি কাজ করতে বারণ করেছিলাম। তৎক্ষণাৎ ওর ঢাকা ফেরার ব্যবস্থা করলাম। সব কিছু মিটিয়ে জয়া কলকাতায় আসার পর আমরা ছবির শুটিং শেষ করেছিলাম। এই হচ্ছে জয়া আহসান।”
সে সময় কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক অভিনেত্রী থাকার পরও ঢাকা থেকে ‘আবর্ত’র জন্য জয়াকে নির্বাচন করায় অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছিল বলে জানান অরিন্দম।
“তখন ওটিটি ছিল না। কথায় কথায় দুই বাংলার শিল্পীরা একসঙ্গে কাজ করতেন না। সেখানে জয়া নতুন মুখ, কিন্তু আমি আমার ‘ইনস্টিংক্ট’ থেকে কিছু বিষয় বুঝে এগিয়েছিলাম। আমার সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, সিনেমা মুক্তির পর তা প্রমাণিত হয়েছিল।
“চরিত্রের জন্য ও প্রচুর পরিশ্রম করতে পারে। আর অভিনয় করতে গিয়ে তার একটা দৃঙ্গিভঙ্গি আমাকে মুগ্ধ করে। সেটা হল, সব সময় প্রশ্ন করে, ‘দাদা, অভিনয় করিনি তো? বিহেভ করেছি তো?’”
জয়াকে ‘ডিরেক্টরস অ্যাক্টর’ বর্ণনা করে এবং জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে অরিন্দম বলেন, “সে মন দিয়ে কাজ করে। কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শুটিং ফ্লোরে থাকলে, তখন বাইরের পৃথিবীতে কী চলছে, সেটা ভুলে যায়। তখন অভিনয়, অভিনয় এবং অভিনয়ই তার শেষ কথা! অভিনেত্রী হিসাবে বার বার আমাদের চমকে দিয়েছে জয়া। আরও অনেকটা পথ তাকে অতিক্রম করত হবে।”
জয়াকে নিয়ে দুটো সিনেমা করা অরিন্দম ফের তাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণে আগ্রহী।
“কিন্তু পরিচালক হিসাবে যত দিন কোনো শক্তিশালী মুখ্য চরিত্র তার জন্য তৈরি করতে না পারব, ততদিন আমি অপেক্ষা করতে চাই।”
বর্তমানে কলকাতায় অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায় ‘ডিয়ার মা’ সিনেমায় শুটিং করছেন জয়া। এছাড়া চলতি বছরে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইয়ে আসছে জয়ার নতুন ওয়েব সিরিজ।
পুরনো খবর
সিঙ্গেল থেকে ডাবল? 'প্রয়োজন হলে' ভেবে দেখবেন জয়া
সাহসে আমরা ওপার বাংলার চেয়ে এগিয়ে: জয়া
কোক স্টুডিওতে গান: যা বললেন জয়া আহসান
জয়া ভীষণ পরিণত: পঙ্কজ ত্রিপাঠী