“শিল্পীর কোনো ভুবন বা সীমানা থাকা উচিত নয়। একজন শিল্পী সব জায়গায় কাজ করবে। এর কোনো কারণ লাগে না।”
Published : 23 Apr 2024, 10:41 AM
দুই বাংলায় নতুন সিনেমা দিয়ে সব সময়ই আলোচনায় থাকেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। বরং বাংলাদেশের চাইতে কলকাতার সিনেজগতে তার আসন বেশ পোক্ত। তবুও জয়া মনে করেন বাংলাদেশের নির্মাতা-শিল্পীরা অনেক বেশি ‘ভালোবাসা আর সাহস’ নিয়ে কাজ করেন।
সম্প্রতি এই অভিনেত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ হয় গ্লিটজের। কথায় কথায় জয়া তুলে ধরেন দুই বাংলার কাজের পার্থক্যের কথা। জানান তার আগামী কাজের কথাও। এছাড়া ‘রইদ’ সিনেমার সরকারি অনুদানের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ নিয়েও খোলামেলা কথা বলেন এই অভিনেত্রী।
গ্লিটজ: বৈশাখ কীভাবে কাটিয়েছেন?
জয়া: আমি সবসময় চেষ্টা করি পহেলা বৈশাখে বাংলাদেশে থাকার জন্য। এবারের বৈশাখটাও দারুণ কেটেছে। ঘুরেছি, আলপনা এঁকেছি, পুরো পরিবারের সঙ্গে পান্তা, ভর্তা আয়োজন করে খাওয়া-দাওয়া হয়েছে। অনেক সুন্দর কেটেছে।
গ্লিটজ: আপনার প্রযোজনা সংস্থা ‘সি তে সিনেমা’ থেকে ‘রইদ’ নামে একটি চলচ্চিত্র করার কথা ছিল। অনুদানের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ কি?
জয়া: প্রথম কারণ হল অনেক দিন ধরে সিনেমার কাজটি আটকে ছিল। ডিরেক্টর মেজবাউর রহমান সুমন কাজটি শুরু করতে লম্বা সময় নিচ্ছিলেন। সরকারি অনুদানেরতো কিছু নিয়মনীতি রয়েছে। সরকার আমাদের এই ছবির জন্য যে ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন সেটা তো শুধু সরকারের টাকা না, আমার টাকাও না, এটি জনগণের টাকা। এই বিষয়টি আমার কাছে একটা বড় দায়। যেহেতু সময় লাগছে তাই আমি মনে করলাম এটি ফেরত দিয়ে দেওয়া যায়। হেলাফেলা করতে চাইনি। কারণ এটার সঙ্গে আমার নামের সম্মান রয়েছে, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সম্মান রয়েছে, আমার ডিরেক্টরের সম্মান রয়েছে। হয়ত অন্য কখনো অন্য কোনোভাবে সিনেমাটির কথা ভাবা হবে।
গ্লিটজ: অনুদানের সিনেমা নির্মাণে তো সময় বাড়িয়ে নেওয়া যায়, টাকা ফেরত দেওয়াটাই কি সমাধান ছিল?
জয়া: আমি আসলে দুই তিনবার সময় বাড়িয়েছিলাম তারপর আমার মনে হয়েছে এটা নিয়ে আর সময় বাড়ানো উচিত হবে না। আমি এর আগে একটি সিনেমা বানিয়েছি ‘দেবী’ যেটি খুব প্রশংসিত হয়েছিল, আলোচিত হয়েছিল। সেখানে যদি এই সিনেমা নিয়ে এত দেরি করি আমাদের কারো জন্যই ভালো হবে না। তাই ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গ্লিটজ: আগামী কাজের ব্যস্ততা কেমন?
জয়া: দেশের নির্মাতা আশফাক নিপুণের একটি ওয়েব সিরিজ করছি ৷ যেটি বাংলাদেশে আমার প্রথম ওয়েব সিরিজ হবে। তাছাড়া কলকাতায় ‘ডিয়ার মা’ নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করেছি। অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর পরিচালনায়। খুব শিগগিরই সিনেমাটির কাজ শুরু করব।
গ্লিটজ: দুই বাংলায় কাজের ধরনে পার্থক্য কতটা?
জয়া: খুব একটা পার্থক্য নেই আসলে। ভাষাগত কিছু টার্ম ছাড়া কাজের ধরন, ইমোশন, ডায়ালগ, সংস্কৃতি সব একই মনে হয় আমার কাছে। তবে আমরা এগিয়ে আছি আমাদের সাহসের জায়গায়। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদারের মত চিৎকার করে আমাদের গল্প জানান দিতে চাই, কাজের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চাই। সেই জায়গা থেকে মনে হয় আমরা অনেক সাহসী। তবে ওই বাংলায় সবাই গুছিয়ে কাজ করে, কাজের পরে কি হবে সেটা একবারে ঠিক করে কাজটা শুরু করে। তাই কিছু জায়গায় পরিবর্তন তো আছেই, তবে প্রায় একই বিষয়। আমাদের অনেক কাজ সেখানে ভীষণ প্রশংসিত। সেটা আমার কান পর্যন্ত এসে পৌঁছায়।
গ্লিটজ: বলিউডে কোনো কাজের কথা হচ্ছে?
জয়া: এখনই কিছু হচ্ছে না। তবে সামনে হবে হয়ত। এখন যে দুই তিনটা কাজ হাতে রয়েছে সেগুলো আগে শেষ করব৷
গ্লিটজ: ফিল্ম ফেয়ারে পরপর চারবার পুরস্কার পেয়েছেন, বাংলাদেশি হিসেবে কতটা গর্বিত?
জয়া: বাংলাদেশের জন্য যখনই আমি কোনো পুরস্কার পাই সেটা যদি ভিনদেশি মাটিতে হয়, এটা আমার নিজের জন্য যতটা আনন্দের তার থেকে বেশি আনন্দিত বোধ করি আমি বাংলাদেশের হয়ে পুরস্কার হাতে নিতে পেরে। এবারের ফিল্ম ফেয়ারে বাংলাদেশের অনেকেই কিন্তু নমিনেশন পেয়েছিলেন, পুরস্কার পেয়েছে যেটা বড় বিষয় এবং খুবই গর্বের।
গ্লিটজ: ঢাকার অভিনয় শিল্পীদের বর্তমানে কলকাতার কাজে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
জয়া: আমার মতে, একজন শিল্পীর গণ্ডি যতদূর বাড়ানো সম্ভব সেটা সে বাড়াবে। আমিও একসময় এখানে কাজ শুরু করেছি, তারপর ওখানে গিয়ে কাজ করছি। শিল্পীর কোনো ভুবন বা সীমানা থাকা উচিত নয়। একজন শিল্পী সব জায়গায় কাজ করবে। এর কোনো কারণ লাগে না।
প্র: সম্প্রতি আপনাকে একটি গানে কণ্ঠ দিতে দেখা গেছে। সেটার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
জয়া: ‘কোক স্টুডিও বাংলা’র তৃতীয় সিজনে ‘তাঁতী’ গানে কণ্ঠ দিয়েছি। আমি সবসময় দেশের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় চেষ্টা করি বাংলাদেশের মসলিন এবং জামদানিকে রিপ্রেজেন্ট করার। সেই জায়গা থেকে অর্ণব (শায়ান চৌধুরী অর্ণব) যখন বললেন, 'জয়া তুমি কাজটির সঙ্গে এসো। আমরা ভাবছি তুমি থাকলে ভালো হবে'। আমারও তখন মনে হলো এটা একটা ভালো উদ্যোগ। আমাদের তাঁতশিল্পের জন্য এটা ভালো উৎসর্গ হতে পারে। তাই গানটিতে আমি অভিনেত্রী জয়া আহসান হিসেবে না, মিউজিক টিমের একজন হয়ে গানটি গেয়েছি।
গ্লিটজ: আপনাকে বিভিন্ন সময় সিনেমার গানেও প্লেব্যাক করতে শোনা গেছে, কখনো গান শিখেছেন ?
জয়া: ছেলেবেলায় রবীন্দ্রসংগীত শেখা হত। ছেলেবেলায় হয় না গানের স্কুলে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য বাবা-মা গান শেখায়, ওরকমই শিখেছিলাম। তবে আমি গান খুব ভালোবাসি। বিশেষ করে উচ্চাঙ্গসংগীত নিয়ে আমার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। প্লেব্যাক করেছি যেগুলোতে সেগুলো আমার সিনেমার জন্য৷ ‘ডুবসাঁতার’ সিনেমায় গান করেছি রবীন্দ্রসংগীত ‘তোমার খোলা হাওয়া’। এছাড়া ‘জঙ্গলের ডাক’ গানটি গেয়েছিলাম ‘পারলে ঠেকা’ সিনেমায়। কলকাতার অতনু ঘোষ পরিচালিত ‘বিনি সুতোয়’ সিনেমার জন্য দেবজ্যোতি মিশ্র বলেছিল বলে একটি গান করেছিলাম।
গ্লিটজ: পূর্ণাঙ্গ প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে কী পাওয়া যাবে আপনাকে?
জয়া: আমি সেভাবে ভেবে দেখিনি। প্রয়োজন হলে অবশ্যই করব চলচ্চিত্রের জন্য, কাজের জন্য হলে গান গাইব৷