বরগুনার দল 'পায়রা যাত্রা ইউনিট'কে ২০২২ সালে পাঁচবার আবেদন করার পরও যাত্রাপালা মঞ্চায়নের অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন।
Published : 17 Dec 2024, 11:53 PM
দুই বছর আগে পাঁচবার আবেদন করেও অনুমতি মেলেনি; এবার সেই বরগুনাতেই বিজয়ের মাসে সপ্তাহব্যাপী যাত্রা উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি।
বরগুনার বিসিক শিল্পনগরীতে মঙ্গলবার রাতে যাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন বরগুনার জেলা কালচারাল অফিসার তানজিলা আক্তার।
উদ্বোধনী রাতে মঞ্চস্থ হয়েছে যাত্রাপালা ‘শাহী তলোয়ার’। মহাশক্তি নাট্য সংস্থা’র এই পালার পরিচালক ও পালাকার পঙ্কজ কান্তি মণ্ডল।
উৎসব চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মহাশক্তি নাট্য সংস্থা ছাড়াও যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করবে দি মুন যাত্রা ইউনিট, শিব শক্তি নাট্য সংস্থা, গ্রাম বাংলা অপেরা, আদি রূপাঞ্জলি অপেরা, পায়রা যাত্রা ইউনিট ও রেবা অপেরা।
বরগুনার দল 'পায়রা যাত্রা ইউনিট'কে ২০২২ সালে পাঁচবার আবেদন করার পরও যাত্রাপালা মঞ্চায়নের অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। পরে এ নিয়ে হাই কোর্টে রিট মামলাও করেছিলেন যাত্রাদলটির স্বত্ত্বাধিকারী নজরুল মাতব্বর।
স্থানীয় পর্যায়ে যাত্রাপালা মঞ্চায়নে জেলা প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এমন চিত্র উঠে এসেছিল গত বছর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে।
এবার উৎসবে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত নজরুল মাতব্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টফোর ডটকমকে বলেন, "যাত্রাপালা করেই তো আমরা সংসার চালাই। এবার শিল্পকলা একাডেমি এখানে যাত্রা উৎসব করছে, আমরা এই উৎসবে যাত্রাপালা পরিবেশন করতে পারছি। এজন্য শিল্পকলাকে ধন্যবাদ জানাই।"
দেশজুড়ে যাত্রা মঞ্চায়নে অনুমতি নেওয়ার জটিলতা দূর করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, "এর আগে আমরা যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করতে গেলে প্রশাসন থেকে অনুমতি পাওয়া যেত না। আমরা আশা করব, সারা দেশে যেন যাত্রাপালা হয়, বর্তমান সরকার যেন অনুমতি দেয়ার ব্যাপারটা সহজ করেন। আমরা যেন যাত্রাপালা করেই সংসার চালাতে পারি।"
যাত্রাপালাকে সময়োপযোগী করার জন্য কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "আমাদের এখানে যে যাত্রাপালা হয়, তার বেশিরভাগই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা। এই সময়ের কথাও যেন যাত্রাপালায় আসে, তার জন্য আমরা কর্মশালার আয়োজন করব।
"আমরা চাই, প্রবাসী বা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কথাও আসুক যাত্রাপালায়। গার্মেন্টস শ্রমিকসহ এই সময়ের মেহনতি মানুষের বঞ্চনার কথাও আসুক। সময়ের সাথে সাথে যাত্রাপালায় যেন এই সময়ের সাধারণ মানুষের ভাষ্যটাও উঠে আসে। যাত্রাপালা একেবারেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটা শিল্পমাধ্যম, এজন্যই আমরা চেষ্টা করছি মানুষের কাছে যেতে। বরগুনার পাশাপাশি এ সপ্তাহে খুলনাতেও যাত্রা উৎসব হবে।"
উৎসবে যা দেখা যাবে
বুধবার মঞ্চস্থ হবে ‘নবাব সিরাজ উদদৌলা’। দি মুন যাত্রা ইউনিটের এই পালার পরিচালক হাবিবুর রহমান খোকন এবং পালাকার শচীন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত।
বৃহস্পতিবার মঞ্চস্থ হবে ‘দেবী সুলতানা’। শিব শক্তি নাট্য সংস্থার এই পালার পরিচালক উজ্জ্বল কুমার ব্যাপারী এবং পালাকার ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
শুক্রবার মঞ্চস্থ হবে ‘আঁধারের মুসাফির’। গ্রাম বাংলা অপেরার এই পালার পরিচালক চিত্র রঞ্জন মিস্ত্রী এবং পালাকার ব্রজেন্দ্রকুমার দে।
শনিবার মঞ্চস্থ হবে 'আপন দুলাল’। আদি রূপাঞ্জলি অপেরার এই পালার পরিচালক মনোয়ার খান এবং পালাকার শামছুল হক।
রোববার মঞ্চস্থ হবে 'শুনাইবিবি’. পায়রা যাত্রা ইউনিটের এই পালার পরিচালক মো. নজরুল মাতব্বর এবং পালাকার আবুল কালাম।
উৎসবের সমাপনী দিন সোমবার মঞ্চস্থ হবে 'এজিদ বধ জয়নাল উদ্ধার’। রেবা অপেরার এই পালার পরিচালক মনোয়ার খান এবং পালাকার মাস্টার সেকেন্দার আলী।