শিল্পকলা একাডেমি নিবন্ধন দিচ্ছে, কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তো অনুমতিই দিচ্ছে না, ক্ষোভ যাত্রাশিল্পীদের।
Published : 20 Jan 2023, 11:03 PM
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামে বাস ৭০ বছর বয়সী আব্দুল কাদের মোল্লার। পেশায় নৈশ প্রহরী। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে দিনের বেলায় রাজার পোশাক পরে ঘোড়ায় চড়ে গ্রামে গ্রামে ঘুড়ে বেড়ান তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কিশোর বয়সে রূপবান যাত্রাপালায় তাজেলের জরির পোশাক আর ঘোড়া দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন, এরপর থেকে তিনিও নিজেকে রাজা ভাবতে শুরু করেন এবং রাজার পোশাক পরে অন্যদের খোঁজখবর নেন।
পল্লীর জনজীবনে এই কাদেরের মতো অসংখ্য মানুষের কৈশোরকে রাঙিয়ে দিয়েছিল যে যাত্রাপালা, তা এখন কেবলই অতীত। যাত্রার সেই জৌলুস আর নেই। পেশাও বদল করে নিয়েছেন অনেক যাত্রাশিল্পী। তবে কেউ কেউ এখনও আশায় আছেন, যদি ফেরে যাত্রার সুদিন।
বরাবর শীতে গ্রাম বাংলায় যাত্রাপালার উৎসব চললেও এবার মাঘ শুরু হলেও দেশের কোথাও যাত্রাপালা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেবল দিনাজপুরের একটা জায়গায় এবারের মৌসুমে যাত্রাপালা হয়েছে। আর কোথাও যাত্রাপালা হচ্ছে না।”
এবার যাত্রাপালা না হওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অসহযোগিতাকে দয়ী করছেন যাত্রাশিল্পীরা।
দেশে কোথাও যাত্রাপালা না হলেও ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিকে ঘটা করে হল ‘যাত্রা উৎসব’; যদিও ঘরবন্দি মঞ্চায়নকে যাত্রাপালা বলা যায় কি না, তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
যাত্রা শিল্পের হালচাল
যাত্রাদলের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একটি যাত্রা দলে ৪০ জনেরও বেশি সদস্য থাকেন। সারা দেশে এমন কয়েক হাজার ব্যক্তি যাত্রাশিল্পে যুক্ত। তবে কয়েক দশক আগে যাত্রাপালায় ঢুকে পড়ে যৌন উদ্দীপক শিল্পমানহীন দৃশ্য, যার নাম দেওয়া হয় ‘প্রিন্সেস নাচ’। এরপর থেকে যাত্রা হারাতে বসে তার চিরন্তন আবেদন।
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে বলেন, “এসব প্রিন্সেস নাচ বা অশালীন কোনো কিছুর সাথে সত্যিকারের যাত্রাশিল্পীরা সম্পৃক্ত নয়। বিভিন্ন এলাকায় কিছু অসাধু লোক এ ধরনের যাত্রা আয়োজন করে যাত্রা শিল্পের বদনাম করেছে। স্থানীয় প্রশাসনও তাদের এসব বন্ধ করেনি।”
তবে এই ‘প্রিন্সেস নাচের’ খাঁড়া পুরো যাত্রা শিল্পের উপরই পড়ে। মিলন বলেন, “পরবর্তীতে এসবের কারণ দেখিয়ে অনেক ভালো মানের যাত্রাপালাও বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।”
ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে যাত্রা দেখতে গিয়ে এই শিল্পের প্রেমে পড়ে যান নওগাঁর রহিম মুন্সি। এরপর ৪০ বছরে তিনি অন্তত ১২টি যাত্রা দলে কাজ করেছেন। কিন্তু এখন যাত্রার সেই দিন না থাকার কারণে তিনি পেশা বদল করে ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছেন, থাকেন মোহাম্মদপুরের বছিলায়।
রহিম মুন্সি বলেন, “আমরা সারারাত যে যাত্রাপালা করেছি, তা দেখে মানুষ হাসত, কাঁদত। কিন্তু যাত্রাপালায় অশ্লীলতা, সেটা আমরা করিনি। কিছু এলাকায় সৌখিন কিছু যাত্রাদল, তারা অধিক মুনাফার লোভে ভাড়া করা মেয়ে এনে যাত্রার মাঝখানে নাচের ব্যবস্থা করে এই শিল্পটার বদনাম করেছে। সত্যিকারের যাত্রাশিল্পীরা অশ্লীলতার সাথে নেই। আমি কোনোদিনও এরকম অশ্লীল কিছুতে অভিনয় করিনি।”
অনুমতিই মিলছে না
গত ১০ মাসে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঁচবার অনুমতির জন্য আবেদন করেও যাত্রাপালা করার অনুমতি পায়নি বরগুনার পায়রা যাত্রা ইউনিট। দলটির মালিক নজরুল মাতুব্বর (ফিরোজ) যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের পটুয়াখালী এবং বরগুনা জেলা শাখার সভাপতি। তার যাত্রা দলটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে নিবন্ধিত। নজরুল বরগুনার আমতলী থানার ২ নং কুকরা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগেরও সভাপতি, যেটি ক্ষমতাসীন দলেরই সহযোগী সংগঠন।
আমতলী থানার মহিষকাটা বাজার সংলগ্ন মাঠে ১৫ দিনব্যাপী যাত্রাপালা প্রদর্শনীর জন্য তিনি জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন একের পর এক। আবেদনপত্রে তার যাত্রাপালায় ‘সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের পরিপন্থি অশোভন কোনো দৃশ্য নেই’, এমন কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তার পালার তালিকায় ছিল ‘বাংলার নায়ক বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে’, ‘ভয়ংকর ৭১’, ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘লালন ফকির’, ‘রক্তে রাঙানো বর্ণমালা’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা।
নজরুল মাতুব্বর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০২২ সালের ১১ এপ্রিল, ৫ জুন, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২৩ অক্টোবর এবং সবশেষ ১ ডিসেম্বর মোট পাঁচ বার যাত্রা অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। যাত্রাদলের বায়নাসহ নানা আনুষাঙ্কিক কাজে প্রায় ৭ লাখ টাকা খরচও করেছি।”
এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাত্রার অনুমতি দিতে গেলে আমাকে অনেকগুলো বিষয় দেখতে হয়। পুলিশের (ডিএসবি) একটা সুপারিশ লাগে। সবশেষ যখন উনারা আবেদন করেছেন, আমি সেটা ডিএসবিতে পাঠিয়েছি।”
নজরুল মাতুব্বর বলেন, “আমি তাও নিয়েছি। জেলা পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মতামতপত্রে পরিষ্কার লিখে দিয়েছেন, মহিষকাটা বাজারে যাত্রার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অহেতুক অজুহাতে যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছেন না জেলা প্রশাসক।”
জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, “এর আগে একবার ডিএসবির সুপারিশ নিয়েছিলেন, সেটা বেশ কিছুদিন আগে। এখন নতুন করে আবার সুপারিশের জন্য আমি ডিএসবি অফিসে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে সুপারিশ এলেই অনুমতি দেওয়া হবে।”
নজরুল মাতুব্বর বলেন, “পুলিশের সুপারিশ তো আগেই একবার নিয়েছি। তখন এইচএসসি পরীক্ষা আর জেলা পরিষদ নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে অনুমতি দেওয়া হয়নি। এখন আবার বলছেন পুলিশের সুপারিশ লাগবে। আমরা পুলিশ সুপারের কাছে গিয়েছি, পুলিশ সুপার বলছেন, ‘আমরা তো আপনাদের সুপারিশ দিয়েছি। এখন আবার কেন লাগবে?’ এরকম ঘোরপ্যাঁচের মধ্যে কেন ফেলা হচ্ছে?”
বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেছেন নজরুল মাতুব্বর। তিনি বলেন, “মহামান্য হাই কোর্ট যাত্রার নীতিমালার বিধান অনুযায়ী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আবেদনটি নিষ্পত্তি করার কথা বলেছেন। কিন্তু তারপরও নানা অজুহাতে যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছেন না জেলা প্রশাসক।”
নিবন্ধিত একটি দল কেন জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে যাত্রা করার অনুমতি পাচ্ছে না- জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বরগুনার জেলা প্রশাসককে ফোন করেন। এরপর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বরগুনার জেলা প্রশাসক অনুমতি দেবেন বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন।”
তবে এ শুধু বরগুনার চিত্রই নয়, সব খানেই তো একই অবস্থা। শিল্পকলার মহাপরিচালক বললেন, “যেসব জেলায় শিল্পকলার নিবন্ধিত যাত্রাদলকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলব।”
যাত্রাপালায় লোক সমাগম বেশি হওয়ার কারণে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না বলেও মনে করেন যাত্রাশিল্পীদের কেউ কেউ।
ঠাকুরগাঁওয়ের যাত্রাশিল্পী শামীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনও যাত্রা দেখার জন্য মানুষের মাঝে প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। কোথাও যাত্রা হবে শুনলে হাজার হাজার লোক জমায়েত হয়। বেশি লোক জমায়েত হওয়ার কারণেই প্রশাসন অনুমতি দিতে চায় না।”
নজরুল মাতুব্বর বলেন, “এখন যাত্রার ভরা মৌসুম। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন যাত্রাপালায় মুখর থাকার কথা, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। কারণ প্রায় সব জেলাতেই স্থানীয় প্রশাসন নানা অজুহাতে যাত্রার অনুমতি দিচ্ছে না। সরকার ২০১২ সালে যাত্রা শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা তৈরি করেছে, তারপরও স্থানীয় প্রশাসন কেন যাত্রাপালা মঞ্চায়নের অনুমতি দেয় না?”
‘যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০১২’তে বলা আছে, “যে কোনো স্থানে যাত্রা প্রদর্শনী করিতে হইলে পূর্বেই স্থানীয় জেলা প্রশাসনের অনুমতি লইতে হইবে। অনুমতির জন্য আবেদন পাওয়ার ৭ (সাত) কর্মদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসককে অনুমতির বিষয়টি নিষ্পত্তি করিতে হইবে। মৌসুমে অনুমতিজনিত প্রশাসনিক জটিলতায় যাত্রা পরিক্রমা যাহাতে বন্ধ না হয় সে বিষয়ে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।”
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন দে বলেন, “সরকার থেকে তো যাত্রা মঞ্চায়নের জন্য কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তাহলে কেন যাত্রা মঞ্চায়নে স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দেবে না?”
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী, অভিনয়-আবৃত্তিশিল্পী আসাদুজ্জামান নূর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনুমতি নেওয়ার জন্য কেন যাত্রাদলকে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে? শিল্পকলা একাডেমি থেকে নিবন্ধিত যাত্রাদলগুলোর অনুমতি নেওয়ার প্রশাসনিক যে প্রক্রিয়া, সেটা আরও সহজ করা উচিৎ।”
যাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরে এই সংসদ সদস্য বলেন, “জঙ্গিবাদ এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়ার যে কথা বলা হয়, সেটা বাস্তবায়ন করতে হলে সারা দেশে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির চর্চার পথকে আরও সহজ করা জরুরি।”
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকদের একটা চিঠি দিয়েছি, তারা যেন যাত্রাসহ আমাদের লোক ঐতিহ্যের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করেন।
“কোথাও যদি সাংস্কৃতিক আয়োজনের নামে অশালীন কিছু হয়, সেটা বন্ধ করবেন। কিন্তু ভালো আয়োজনগুলোর অনুমতি দিতে যেন বিলম্ব না করেন। তার জন্য জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
শিল্পকলায় আবদ্ধ ঘরে উৎসব
কোথাও যাত্রার অনুমতি না থাকার মধ্যে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমি প্রতি বছরের মতো এবারও যাত্রা উৎসব করেছে। এই উৎসব ১২ জানুয়ারি শুরু হয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত চলে।
শিল্পকলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এর আগে ১৩টি যাত্রা উৎসবের মাধ্যমে ১৫৫টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এবার ছিল চতুর্দশ উৎসব।
শিল্পকলা একাডেমি প্রতি বছর উৎসব করে গেলেও তাদের নিবন্ধন নিয়ে যাত্রা দলগুলো তো পালা করতেই পারছে না, ক্ষোভ নিয়েই বললেন দেশ অপেরার যাত্রাশিল্পী আলী নূর।
“শিল্পকলা থেকে নিবন্ধন নেওয়ার পরও স্থানীয় প্রশাসন যাত্রা করার অনুমতি দেয় না। তাহলে এই নিবন্ধন নিয়ে লাভ কী?”
শিল্পকলার যাত্রা উৎসব জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও হলে আয়োজনেরও সমালোচনা করেন আলী নূর। তিনি বলেন, “শিল্পকলা একাডেমি হলের ভেতরে কি যাত্রা হয়? যাত্রা হবে খোলা প্রান্তরে। হাজার হাজার মানুষ যাত্রা দেখতে আসবে। স্টুডিও হলে নিবন্ধন নিতে আসা কয়েকটা দলের পরিবেশনা নিয়ে ১০০ জন দর্শকের সামনে যাত্রা উৎসব আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি। এটা হাস্যকর।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক কামালউদ্দিন কবিরও এই যাত্রাশিল্পীর সঙ্গে একমত। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিল্পকলার স্টুডিও হলে যাত্রার নিবন্ধন নিতে আসা দলগুলোর পরীক্ষা পর্বকে যাত্রা উৎসব বলাটা ঠিক হচ্ছে না। এই আয়োজনটিই ঢাকার আশেপাশে কিংবা শিল্পকলার খোলা মাঠে করা যেত। তখন সেটা এক ধরনের উৎসবের আমেজ তৈরি করত।”
তবে তাতে ভিন্নমত জানান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাট্যকার-নির্দেশক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিলনায়তনের ভেতরে যাত্রাপালার মঞ্চায়ন হতেই পারে। বৃষ্টি হলে তো মিলনায়তনেই অনুষ্ঠান করাটা সুবিধাজনক। তবে যাত্রার যে পরিবেশনা আঙ্গিক, সেটা বজায় রাখতে হবে। মিলনায়তনের ভেতরেই যাত্রার আঙ্গিক ঠিক রেখে মঞ্চায়ন করা যেতে পারে।”
মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ মঞ্চে এনেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’। ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা রীতির নিরীক্ষামূলক উপস্থাপনায় এটি নির্দেশনা দেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তানভীর নাহিদ খান। ২০২২ সালের ১ হতে ৫ জানুয়ারি টানা পাঁচ সন্ধ্যায় নাটমণ্ডল মিলনায়তনে টিকিটের বিনিময়ে ‘বিসর্জন’ মঞ্চস্থ হয়।
এছাড়া শিল্পকলা একাডেমি এনেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যাত্রাপালা ‘নিঃসঙ্গ লড়াই’। মাসুম রেজার লেখা থেকে যাত্রাপালাটি নির্দেশনা দেন গবেষক সাইদুর রহমান লিপন। এই পালাটিও ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও যাত্রাশিল্প উন্নয়ন নীতিমালা কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান সুলতান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো সংস্কৃতিই টিকে থাকে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে। যাত্রাপালা এখন নতুন আঙ্গিকে মঞ্চে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়েও যাত্রাপালা নিয়ে নিরীক্ষা হচ্ছে, এটা ইতিবাচক দিক।”
জাতীয় যাত্রা মঞ্চ তৈরির দাবি
যাত্রা শিল্পের জন্য একটি স্থায়ী মঞ্চ চাইছেন যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন দে। এজন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবিরও চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করেছি আমরা, অথচ আমাদের একটা জাতীয় যাত্রামঞ্চ তৈরি হল না। কোথাও যাত্রার জন্য স্থায়ী কোনো মঞ্চ নেই। কিন্তু আমরা মুখে ঠিকই বলি, যাত্রা আমাদের লোকসংস্কৃতির গৌরবময় ঐতিহ্যের অংশ।” তার মতে, প্রত্যেক উপজেলায় যাত্রাপালা মঞ্চায়নের জন্য মঞ্চ থাকা উচিৎ। আর জাতীয়ভাবেও একটা যাত্রা মঞ্চ থাকা উচিৎ।
“আমাদের একটা যাত্রা মঞ্চ না থাকাটা লজ্জার। সরকারের দায়িত্বশীলদের কাছে দাবি জানাব, অবশ্যই যেন এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেন। জাতীয় যাত্রা মঞ্চ তৈরি সকল যাত্রাশিল্পীর দাবি। সংস্কৃতি অন্তপ্রাণ মানুষ এই দাবির পক্ষেই থাকবেন। আশা করি সরকার দ্রুতই জাতীয় যাত্রা মঞ্চ তৈরির পরিকল্পনা করবেন।”