বছর পাঁচেক আগেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শাফিন।
Published : 25 Jul 2024, 04:11 PM
“বাবা কিছুদিন পরপরই কনসার্টের জন্য দেশের বাইরে যেতেন। এবারেও কোনো ভিন্নতা ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পরশুদিন আম্মু সেখানে যায়, কিন্তু এই খবর আসবে- বুঝতে পারিনি।"
বাবা শাফিন আহমেদের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেই ফোনের ওপাশে কান্নায় ভেঙে পড়েন আযরাফ রাকিন আহমেদ।
দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল মাইলসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শাফিন আহমেদ বৃহস্পতিবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে মারা যান; তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
আশি-নব্বই দশকের কিশোর-তরুণ শ্রোতাদের মন মাতানো ‘চাঁদ তারা সূর্য নও তুমি’, ‘জ্বালা জ্বালা জ্বালা এই অন্তরে’, ‘ফিরিয়ে দাও’ গানের এই শিল্পী কনসার্টে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ২০ জুলাই ভার্জিনিয়ায় ওই কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল।
তার আগে হার্ট অ্যাটাক হলে শাফিনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে; কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
দেশে থাকতেই এ ব্যান্ডশিল্পী অসুস্থ ছিলেন কি না জানতে চাইলে তার ছেলে রাকিন গ্লিটজকে বলেন, “সুস্থ ছিলেন, কনসার্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত পরশু আমার আম্মু (শাফিনের স্ত্রী নাহীন আহমেদ) সেখানে গিয়েছেন।
“সকালে আমরা বাবার মৃত্যুর খবর পাই। বাংলাদেশ থেকে চাচা হামিন আহমেদ যাচ্ছেন। সেখান থেকে সব প্রসেস সম্পন্ন করে মৃতদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করা হবে।"
ছেলে রাকিন আর মেয়ে রানিয়া সাফা আহমেদকে নিয়ে শাফিন-নাহীনের সংসার। বছর পাঁচেক আগেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন শাফিন। সেসময় তার হার্টে রিং পরানো হয়েছিল।
হৃদরোগ ছাড়াও শাফিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন জানিয়ে মাইলসের কী বোর্ডিস্ট মানাম আহমেদ বলেন, “সব মিলিয়ে তার শরীরের অঙ্গগুলো অকার্যকর হতে থাকে, যেটা তাকে আর সার্ভাইব করতে দেয়নি। এই শরীরে এত ঘন ঘন ট্রাভেল করাটা ঠিক হয়নি। কিছুদিন আগেও দেশের বাইরে ছিল। এত ট্রাভেল আর অনিয়মে অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের দুই মহারথী সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং সুরকার কমল দাশগুপ্তের ছেলে শাফিন নিজে ছিলেন বেইজ গিটারিস্ট, সুরকার এবং গায়ক। ১৯৬১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তার জন্ম।
বড় ভাই হামিন আহমেদসহ ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমের সংগীতের সঙ্গে সখ্য হয় শাফিনের। শুরু হয় তার ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা।
ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে তারা গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। প্রথম কয়েক বছর তারা বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন। এরমধ্যেই প্রকাশিত হয় দু’টি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘এ স্টেপ ফারদার’। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ বের হয় ১৯৯১ সালে।
ওই অ্যালবামের জনপ্রিয়তার পর বিটিভিতে বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে মাইলসকে। ধীরে ধীরে মাইলস দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ডদলে পরিণত হয়।
মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘নীলা’, ‘কি যাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘হৃদয়হীনা’, ‘স্বপ্নভঙ্গ’, ‘জ্বালা জ্বালা’, ‘শেষ ঠিকানা’, ‘পিয়াসী মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন’ ও ‘প্রিয়তমা মেঘ’।
ভাইয়ের সঙ্গে বিবাদে মাইলসের সঙ্গে তিন দশকের পথচলার সমাপ্তি টেনে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বেরিয়ে আসেন আসেন শাফিন আহমেদ। পরে তিনি গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড দল ‘ভয়েস অব মাইলস’।
শাফিনের মত যে ব্যান্ড তারকারা গত শতকের আশি বা নব্বইয়ের দশকে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন, তাদের বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে চিরবিদায় নিয়েছেন। তাহলে আগামীতে দেশের ব্যান্ড সংগীতের ঝাণ্ডা কারা বইবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে গত জুনে শাফিনের মুখোমুখি হয়েছিল গ্লিটজ।
এই শিল্পী বলেছিলেন, “উত্তরাধিকার অবশ্যই আসবে৷”