Published : 25 Jul 2024, 12:50 PM
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন, কারফিউয়ের কারণে স্থবিরতা বিরাজ করছে বিনোদন অঙ্গনেও।
ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় গত বৃহস্পতিবার বন্ধ হয়ে যায় দেশের অধিকাংশ মাল্টিপ্লেক্স ও একক সিনেমা হল। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফেরার পর বুধবার থেকে কারফিউ শিথিল থাকাকালে ঢাকার দুটি মাল্টিপ্লেক্সে দুয়েকটা শো চললেও আশানুরূপ দর্শক মেলেনি।
ঢাকার কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমা হল গত বৃহস্পতিবার হল বন্ধ থাকলেও শুক্রবার বিকেল ও সন্ধ্যায় দুটি শো চলেছিল। কিন্তু দর্শক না থাকায় পরে আর শো চলেনি।
হলের কর্ণধার মির্জা আব্দুল খালেক গ্লিটজকে বলেন, "বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জের পরিস্থিতি খুব একটা ভালো ছিল না তাই সেদিন সিনেমার শো চালাইনি। শুক্রবার দিন বিকেল ও সন্ধ্যার দুটি শো চালিয়েছিলাম। আমাদের চারটি থিয়েটারের মধ্যে একটি থিয়েটারে নেট ছাড়া সিনেমা চালানো সম্ভব হয়। সেই জায়গা থেকে শুক্রবার বিকেল এবং সন্ধ্যায় দুটি শো চালিয়েছিলাম। মোটামুটি ভালোই দর্শক ছিল।"
চারদিন বন্ধ থাকার পরে বুধবার থেকে আবার শো চালু রাখা হয়েছে জানিয়ে আব্দুল খালেক বলেন, "শনি থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কারফিউ শিথিল করায় গতকাল দুটো শো রেখেছি। যে হলটাতে ইন্টারনেট ছাড়া চালানো যায়, সেটাই চালিয়েছি।”
তবে দর্শক না পেলে শো চালু রাখা সম্ভব হবে না জানিয়ে এই হল মালিক বলেন, "সারা দেশে যে ঘটনা ঘটে গেছে, এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ তো খুব অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক হলেই যে সিনেমা হলে দর্শক পাব, সেটাও আশা করা যায় না।
“এই পরিস্থিতিতে আমাদের আসলে কিছু করার নেই। তবে মনে প্রাণে চাই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাক। ব্যবসা এখন কিছুটা কম হবে, পরে হয়ত বেশি হবে, কিন্তু দেশটা স্বাভাবিক হওয়াটা জরুরি।"
একই অবস্থা দেশের সবচেয়ে বড় মাল্টিপ্লেক্স স্টার সিনেপ্লেক্সেও। ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সিনেমা চালানো হবে না বলে জানিয়েছেন সিনেপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ বিপণন ব্যবস্থাপক মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, "বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হল বন্ধ। পুরোপুরি শাটডাউন যাকে বলে। পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হলেও এখনই সিনেপ্লেক্সের সিনেমা চালানো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের বেশিরভাগ টিকেট তো বিক্রি হয় অনলাইনে, ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক না হলে সিনেমা চালানো যাবে না।
“যতদিন স্বাভাবিক না হয় ততদিন হল বন্ধ রাখতে হবে। অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম স্বাভাবিক না হলে সিনেমা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না।"
ঈদের সিনেমাগুলো দিয়ে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের যে জোয়ার তৈরি হয়েছিল, তার পরপর হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন মেসবাহ।
তিনি বলেন, "ঈদের 'তুফান' সিনেমাটি দিয়ে আমরা বেশ সাড়া পেয়েছিলাম, মুক্তির পর থেকেই দর্শক চাহিদা ছিল, সিনেমাটির প্রায় ৫৫টি শো চলেছে। পঞ্চম সপ্তাহে এসেও আমরা এই সিনেমার ৪৫টা শো চালাচ্ছিলাম। সে হিসাবে বলাই যায়, দর্শকের একটা জোয়ার ছিল।
“এর মধ্যেই দেশের এই পরিস্থিতিতে হল বন্ধ রেখে একটা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। শুধু সিনেপ্লেক্স না, পুরো ইন্ডাস্ট্রিটাই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সব কিছুই হঠাৎএমন স্তব্ধ হয়ে গেল যে স্বাভাবিক হতেও কিছুটা সময় লেগে যাবে।"
দেশের সিনেমার পাশাপাশি এই মাল্টিপ্লেক্সে হলিউডের বেশ কিছু নতুন সিনেমা চলছিল। সেখানেও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে জানিয়ে মেসবাহ বলেন, "আন্তর্জাতিক মুক্তির সঙ্গে মিল রেখেই মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাগুলো। এগুলোন আলাদা দর্শক থাকে, কিন্তু এ পরিস্থিতিতে সেখানে ক্ষতি হয়ে গেল।
“ঈদের পর মুক্তি পাওয়া 'আজব কারখানা' সিনেমাটাও ভালো চলছিল। সব কিছু স্বাভাবিক হলে হয়ত আমরা সিনেমার সময়কাল বাড়িয়ে আবার চালাব।"
তবে ভিন্ন চিত্র যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসে। বুধবার থেকে কারফিউ শিথিল থাকার সময়টুকু চলছে সিনেমা।
যমুনা ব্লকবাস্টার সিনেমাসের অপারেশন ইনচার্জ এ এইচ রাজু গ্লিটজকে বলেন, "আমাদের যেহেতু সাতটা থিয়েটার, সেক্ষেত্রে দুইটা করে শো চালালেও দিনে চৌদ্দটা শো চলবে। অনলাইন যেহেতু বন্ধ, সরাসরি এসে টিকেট কেটে দর্শক সিনেমা দেখতে পারেব।"
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় বন্ধ ছিল সিলেটের একমাত্র মাল্টিপ্লেক্স গ্র্যান্ড সিলেট সিনেপ্লেক্সও। হলটির আইটি ম্যানেজার মেহেদী হাসান গ্লিটজকে বলেন, “আমাদের সার্ভার ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত, তাই নেট পুরোপুরি না আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
“আর এলেও দর্শক পাব কি না, তা নিয়েও একটু আশঙ্কায় আছি। কারণ এই পরিস্থিতিতে সবাই তো ট্রমার মধ্যে আছে, সবার ভেতরে একটা ভয় কাজ করছে। এই ভয় কাটিয়ে প্রথম স্টেজেই হলে খুব একটা দর্শক পাব বলে মনে হচ্ছে না।”
এই দুর্বিপাকের মধ্যে মুক্তি পিছিয়ে গেছে তিনটি সিনেমার। গত ১৯ জুলাই প্রযোজক সমিতি থেকে মুক্তির তারিখ নিয়েছিল 'জিম্মি' ও 'ডাইরেক্ট অ্যাকশন' নামের দুটি সিনেমা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় দুটি সিনেমারই মুক্তি পেছানো হয়েছে বলে চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির অফিস সচিব সৌমেন রায় বাবু জানান।