“ভারতে দর্শক সিনেমা দেখতে গিয়ে ফিরে আসে না। তাদের সিনেমার মার্কেট প্লেস অনেক বড়,” বলছিলেন রায়হান রাফী।
Published : 26 Jun 2024, 10:23 AM
দর্শক চাহিদার অনুপাতে দেশে প্রেক্ষাগৃহ কম বলে আক্ষেপ ঝরেছে শাকিব খানের ‘তুফান’ সিনেমার নির্মাতা রায়হান রাফীর কণ্ঠে।
“আজ যে লোকটি ছুটি পেয়ে সিনেমা দেখতে এসেছে সে যদি টিকেট না পায় পরের দিন তিনি নাও আসতে পারেন। কিন্তু দেশে যদি হল বেশি থাকত, তাহলে এক হলে টিকেট না পেলে আরেকটিতে চলে যেত”- এভাবেই ক্ষোভ এবং আক্ষেপ মেশানো এই কথাগুলো বলেছেন রাফী।
কোরবানির ঈদে 'তুফান' সিনেমাটি দেশের শত প্রেক্ষাগৃহে দেখানোর কথা থাকলেও, এখন চলছে ১২৮টি প্রেক্ষাগৃহে। তবে সিনেপ্লেক্স বা সিঙ্গেল হলগুলোতে দর্শক টিকেট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
রাফী বলেন, “সিনেমাটি নিয়ে দর্শক চাহিদা আছে কিন্তু টিকেট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এমন দৃশ্য আছে।”
ভারতের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, “ভারতে দর্শক সিনেমা দেখতে গিয়ে ফিরে আসে না। কারণ ওদের অনেক অপশন। তাদের সিনেমার মার্কেট প্লেস অনেক বড়। চারপাশ সিনেমা হল। আজকে যদি আমাদের দেশে অনেকগুলো হল থাকত, ভালো পরিবেশে সুন্দর হল থাকত, তাহলে কিন্তু দর্শক টিকেট না পেয়ে ফিরে যেত না।
“আমি ভারতে অনেক বড় বড় সিনেমা দেখেছি যেগুলো সেখানে সাধারণত হাউসফুল হয় না, তারা হাউসফুল চায়ও না। ৭০ শতাংশ বিক্রি হলেই তাদের হয়ে যায়। কারণ সিনেমার অনেক শো থাকে। প্রতি ১০ মিনিট, ২০ মিনিট পরপর শো থাকে। হলের সংখ্যাও অনেক বেশি। তাদের ১০০ কোটি, ২০০ কোটি টাকা বাজেটের সিনেমা খুব দ্রুত উঠে আসে। আমাদের হল সংখ্যা অনেক কম। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।”
তুফান সিনেমার আয় ইতিহাস তৈরি করছে দাবি করে রাফী বলেন, “আমাদের সিনেমার পরিবেশকের সঙ্গে কথা হলো, তিনি বলছিলেন, তুফানের সেল সিঙ্গেল স্ক্রিনে বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে, আগের সেলকে অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে অনেক ব্লকবাস্টার সিনেমা হয়েছে, অনেক সিনেমাই ইতিহাস গড়েছে কিন্তু সেটা আস্তে আস্তে, অনেক দিন সময় নিয়ে সেটা তৈরি হয়েছে। কিন্তু 'তুফান' সিনেমায় মনে হচ্ছে প্রতিদিনই ঈদের দিনের মতো সেল হচ্ছে।”
অনেক রেন্টাল দিয়ে হল মালিকরা সিনেমাটি নিয়েছেন তা স্বীকার করে এই নির্মাতা বলেন, “প্রত্যেকটা হল মালিক হাই রেন্টাল দিয়ে আমাদের সিনেমাটি নিয়েছিল। দুই তিন দিনের মধ্যেই তারা টাকা উঠিয়ে ফেলেছে। সবাই লাভের অংশে চলে গেছে। এতো বাজেটের সিনেমা খুব দ্রুত উঠে না৷ তুফান থেকে উঠে গেছে। ভালো সিনেমা তৈরি হলে দর্শকরা সিনেমা দেখতে যায়, সিনেমার টাকা উঠে যায়, সেটা তুফান টিম, সিনেমার নায়ক দেখিয়ে দিয়েছে।”
'তুফান-২' বানানোর পরিকল্পনা নিয়েই 'তুফান' সিনেমা নির্মাণ শুরু করেছিলেন জানিয়ে রাফী বলেন, “তুফান-২ আসবে এটাও বাংলাদেশের জন্য নতুন। কোনো সিনেমার সিকুয়েল নিয়ে এতোটা আগে দেখা যায়নি। এটা বাইরের দেশে দেখা যায় বলিউডে, হলিউডে। সিকুয়েলের সুবিধাটা হলো যারা প্রথম পার্ট দেখে তারা সবাই কিন্তু দ্বিতীয় পার্ট দেখবেই৷ আমরা কিন্তু প্ল্যান করেই এটা করেছি। প্রথম এবং দ্বিতীয় অংশ দুটোরই স্ক্রিপ্ট রেডি করে সিনেমা নির্মাণে নেমেছিলাম৷”
রাফি আরও বলেন, “আমি মানুষের সাইকোলজি বোঝার চেষ্টা করি, দর্শক কী দেখতে চায়, সেটা বোঝার চেষ্টা করি। কারণ মানুষ ফোন নির্ভর হয়ে গিয়েছে। আড়াই ঘণ্টা ফোন দূরে রাখা খুব কঠিন কাজ। আমি 'পরাণ', 'সুড়ঙ্গ' বানিয়ে আমি কিছুটা বুঝতে পেরেছি দর্শকের মনোযোগ কীভাবে ধরে রাখা যায়।”
সিনেপ্লেক্সে বাংলা সিনেমার ৫০ এর উপরে শো এটাই প্রথম এবং প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আয় হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এতোটা প্রত্যাশা করিনি, কারণ আমরা জানি আগের সিনেমাগুলোর আস্তে ধীরে শো বেড়েছে, ৩০টা পর্যন্ত গিয়েছে। কিন্তু ৫০ এর উপরে কোনো সিনেমার শো যায়নি। সেই জায়গা থেকে প্রত্যাশার বেশি আমরা পেয়েছি। এর থেকে বেশি পাওয়ার কিছু নেই। এই সিনেমা ৩ সপ্তাহ চললেই বাংলাদেশের সব রেকর্ড ভেঙে যাবে।”
পরিচালক রায়হান রাফীর ‘তুফান’ সিনেমায় শাকিব খানকে দ্বৈত চরিত্রে দেখা গেছে। নব্বইয়ের দশকের এক গ্যাংস্টারের জীবনের উত্থান-পতনের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমার চিত্রনাট্য।
এ নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতের মিমি চক্রবর্তী ও বাংলাদেশের মাসুমা রহমান নাবিলা। আরও আছেন চঞ্চল চৌধুরী, ফজলুর রহমান বাবু, গাজী রাকায়েত, সালাউদ্দিন লাভলু, গাউসুল আলম শাওনসহ অনেকে।
‘তুফান’ প্রযোজনা করেছে আলফা-আই স্টুডিওজ লিমিটেড, ডিজিটাল পার্টনার চরকি ও ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে আছে এসভিএফআর। পরিবেশক প্রতিষ্ঠান আলফা আই স্টুডিওস লিমিটেড।