“আমরা গানটার জন্য নতুন করে সঙ্গীতায়োজন করেছি, প্রতিটি জেলার আলাদা ভাষাবৈশিষ্ট্যকে একসঙ্গে এনে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি।’’
Published : 21 Feb 2025, 11:52 AM
‘আমি বাংলায় গান গাই’ শিরোনামের যে গানটি দিয়ে ভারতের প্রয়াত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় একটু বেশিই মিশে গিয়েছিলেন এপার বাংলার শ্রোতাদের সঙ্গে, সেই গানটি নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের গায়ক শোভন গঙ্গোপাধ্যায়।
শোভন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যবহৃত ৭টি আঞ্চলিক ভাষাকে ব্যবহার করেছেন এই গানে।
আনন্দবাজার লিখেছে, কলকাতা, পুরুলিয়া, কোচবিহার, বীরভূম, মালদাসহ সাত অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষার টানে 'আমি বাংলায় গান গাই' গানের সংগীতায়োজন শোভন। আর গানটি গেয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিশুরা।
শোভনের কথায়, “আমরা বাংলা ভাষার কদর সে ভাবে করছি না, যত্ন করছি না। বাচ্চারা ভয় পাচ্ছে এই ভাষায় কথা বলতে। বাংলা পরীক্ষার আগে আজকাল নাকি বাচ্চাদের জ্বর চলে আসছে! কিন্তু বিষয়টা যে সাবলীল, সেটা ওদেরও জানিয়ে দেওয়া দরকার। সে জন্য বাচ্চাদের বেছে নেই।’’
শোভন বলেছেন, মানুষের মনে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের খালি গলায় গাওয়া গানটি রয়ে গিয়েছে। আলাদা করে কখনও তেমন সঙ্গীতায়োজন করা হয়নি। সেটাই বিশেষত্ব।
“তাই আমরা গানটার জন্য নতুন করে সঙ্গীতায়োজন করেছি। সঙ্গে প্রতিটি জেলার আলাদা ভাষাবৈশিষ্ট্যকে একসঙ্গে এনে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেছি।’’
তবে কাজটা খুব সহজ নয়, সামান্য উনিশ-বিশ হলেই সমালোচনার শঙ্কা থাকে বলে মন্তব্য করেছেন মানছেন শোভন।
তার কথায়, ‘‘আমরা এমন একটা মধ্যবিত্ত জায়গা থেকে উঠে এসেছি যে ইংরেজিটা ভাল করে বলতে পারি না। আবার চাই ইংরেজিটা আমাদের ছেলেমেয়েরা বলুক। আমাদের দোষে বাংলা ভাষার অবক্ষয় ঘটেছে। তাই কাজটা করতে গিয়ে আমি আমার ভাষাকে আর বেশি করে চিনব, সে ভাবেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি। আমি তো সব সময় বাণিজ্যিক ভাবে কাজ করে অভ্যস্ত। তাই কাজটা খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল।’’
প্রতুল প্রয়াত হয়েছেন ১৫ ফেব্রুয়ারি। তার মৃত্যুর পর কলকাতার সংবাদমাধ্যম রোববারডটইনে প্রকাশিত প্রতুলের একটি সাক্ষাৎকারে ‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের জন্মকথা জানা গেছে।
অফিসের একটি প্রতিবেদন লিখতে বসে হঠাৎ করে প্রতুলের মাথায় খেলে যায় ‘আমি বাংলায় গান গাই, বাংলার গান গাই’। গানের ভাবনা আগেই ছিল মাথায়।
প্রতুলের ভাষ্য, “বাংলায় গান গাই, বাংলার গান গাই, বাংলাকে ভালোবাসি- বিভক্তির ক্ষমতা এখানে প্রকাশ পাচ্ছে।“
যেভাবে জন্ম নিয়েছিল প্রতুলের চার গান
প্রতুল বলেছিলেন, “সেটা ১৪০০ সালের পয়লা বৈশাখ। শতককে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কফি হাউসের একটা অনুষ্ঠানে আমার গাওয়ার কথা ছিল। তো আমি অফিসের কাজ নিয়েই বসেছিলাম। একটা রিপোর্ট লিখতে হচ্ছিল। সেটা করতে করতেই মাথার মধ্যে গানের বিষয়টিও চলছিল। একটা জায়গায় কথাগুলো লিখছিলাম। অনেকটা সেই রামপ্রসাদের মতো আর কী! প্রথম লাইনটা এল, আমি বাংলায় গান গাই, বাংলার গান গাই। একটা জিনিস আমায় এই গানটা লিখতে সাহায্য করেছিল।
“নেহরুর কোনও লেখায় পড়েছিলাম, হি ড্রেমট ইন ইংলিশ। এই কথাটা আমাকে তাড়িত করেছিল। স্পোকের বদলে বলা হচ্ছে 'ড্রেমট'। ওই একটা সতো পেলাম, যেটা থেকে জন্ম নিল আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন। সবকিছুই বাংলায় করি, এইভাবেই গানটা এবার এগিয়ে গেল। হয়তো ওই লাইনটা না পড়লে গানটা এভাবে হত না। লাইনটা এই গানের ক্ষেত্রে, বলতে পারি, বেশ উৎকৃষ্ট সারের কাজ করেছিল। বাংলায় গান গাই, বাংলার গান গাই, বাংলাকে ভালোবাসি- বিভক্তির ক্ষমতা এখানে প্রকাশ পাচ্ছে। এই হচ্ছে 'বাংলায় গান গাই' গানটার জন্মকথা।“