সালমানের ভাষ্য, ১৪ এপ্রিল ভোরে তার ঘুম ভাঙে আতশবাজির মত একটি শব্দ শুনে। যে শব্দে তিনি চমকে ওঠেন।
Published : 26 Jul 2024, 08:55 PM
কিছুদিন ধরে কাজের খবরাখবরের চেয়ে হত্যাচেষ্টার খবরেই বেশি আলোচিত সালমান খান।
সাড়ে তিন মাস আগে ভোরবেলা মুম্বাইয়ে অভিনেতার বাসভবনে গুলির ঘটনায় মুম্বাই পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন এই অভিনেতা। সেখানে তিনি বলেছেন, তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের ঘুমন্ত অবস্থায় গুলি করে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এনডিটিভি লিখেছে, পুলিশ এরিমধ্যে এই মামলায় এক হাজার ৭৩৫ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে মুম্বাইয়ের বিশেষ আদালতে। ওই অভিযোগপত্রে গত ১৪ এপ্রিল ভোরে মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় অভিনেতার বাসভবনে গুলির ঘটনার পুলিশের কাছে দেওয়া সালমানের জবানবন্দি আছে। এই হত্যাচেষ্টা মামলা নিয়ে ভাইজান কি কি বলেছেন তার কিছুটা সামনে এনেছে এনডিটিভি, হিন্দুস্তানটাইমসহ আরো কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
আমাদের ঘুমন্ত অবস্থায় মারতে চেয়েছিল
সালমানের ভাষ্য, ১৪ এপ্রিল ভোরে তার ঘুম ভাঙে আতশবাজির মত একটি শব্দ শুনে। যে শব্দে তিনি চমকে ওঠেন। অভিনেতার দেহরক্ষী ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটে তাকে জানান যে একটি মোটরসাইকেলে করে দুই ব্যক্তি গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের দোতলার (সালমানের বাসভবন) ব্যালকনি লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে।
“পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে ভেবে আমি অস্থির হয়ে যাই।”
সালমান আরো বলেছেন এর আগেও তার ও তার পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে পুলিশের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই ও তার ভাই আনমোল বিষ্ণোই ফেইসবুক পোস্টে ওই হামলার দায় স্বীকার করেছেন।
সালমান বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে লরেন্স বিষ্ণোইয়ের সহায়তায় তার দলের সদস্যরা গুলি চালিয়েছিলেন। যখন আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা ঘুমিয়ে ছিলাম। তারা আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন।”
জবানবন্দিতে সালমান আরো জানিয়েছেন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি ও তার পরিবার বেশ কয়েকবার হুমকি পেয়েছেন।
অভিযোগপত্রে যা আছে
আদালত গুলির ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ঠ প্রমাণ আছে।
গ্রেপ্তার হয়েছেন ভিকি কুমার গুপ্ত, সাগর শিরিযোগেন্দ্র কুমার পাল, সনু কুমার বিষ্ণোই, অনুজ কুমার থাপন, মহম্মদ রফিক চৌধুরী ও হরপাল সিং।
এর মধ্যে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে আত্মহত্যা করেন অনুজ কুমার।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সালমানের বাড়িতে গুলির আগে আনমোল বিষ্ণোইয়ের সঙ্গে ওই বাইকে থাকা ভিকি সাহেব গুপ্ত এবং সাগর শিরিযোগেন্দ্র পালের কথোপকথের অডিও ক্লিপ পুলিশের হাতে এসেছে। ওই কথাবার্তায় জানা গেছে, ভিকি এবং সাগরকে আনমোলই সালমানের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।
ওই দুইজনের প্রতি আনমোলের নির্দেশ ছিল তারা যেন ওই ঘটনার সময় সিগারেট খেতে থাকেন একং তাদের মাথায় যেন হেলমেট না থাকে। এর কারণ হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওতে ভিকি এবং সাগরকে যাতে যথেষ্ঠ বেপরোয়া হিসেবে চোখে পরে সেটাই আনমোল চেয়েছিলেন।
পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে, গুলি করার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ভিকি এবং সাগরের সঙ্গে আনমোল সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছেন। এছাড়া কারাগারে থাকে এবং এই ঘটনার মূল হোতা আনমোলের ভাই গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইও ভিকি এবং সাগরের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছেন।
আনমোল ওই দিন ভিকি এবং সাগরকে বলেছিলেন, যদি তারা তাদের কাজে সফল হয় তাহলে ‘ইতিহাস তৈরি হবে’ এবং সংবাদমাধ্যমে তাদের নাম ছড়িয়ে পড়বে। পুলিশের ধারণা আনমোল কানাডায় আত্মগোপনে আছেন।
আগে যা ঘটেছিল
এর আগে মুম্বাই পুলিশ বলেছে, ভিকি সাহেব এবং সাগর ও ঘটনার কয়েকদিন আগে মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার একটি জায়গা থেকে দুটি বাইক ভাড়া নেন। এরপর সালমানের খামারবাড়ি পানভেল এলাকার ভাড়াবাড়িতে বাইক দুটো এনে রাখেন তারা। ঘটনার দিন ভোরে ওই বাইকে করেই সালমানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের সামনে এসে চার রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যান।
গুলি চালানোর দায় স্বীকার করে নতুন আরেকটি হুমকিও আসে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের কাছ থেকে।
এই গ্যাংস্টারের ভাষ্য, “এরপর গুলি আর বাড়ির সামনে হবে না। এবং সালমান নিজেকে বাঁচাতে আর কোনো সুযোগও পাবেন না।”
গুলির কয়েক ঘণ্টা পর সোশাল মিডিয়ায় আনমোল একটি চিঠিও পোস্ট করেন। হুমকির ওই চিঠির নিচে লরেন্স বিষ্ণোই, গোল্ডি ব্রার, রোহিত গোদারা এবং কালা জটরি-এই চারজনের নাম দেওয়া আছে।
হিন্দিতে লেখা চিঠির বাংলা করলে দাঁড়ায়, “আমদের উপর হওয়া অত্যাচারের নিষ্পত্তি চাই। যদি তুমি সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামতে চাও, তাই হবে। আজ যা হয়েছে, তা শুধুই একটা ঝলক ছিল সালমান খান। যাতে তুমি বুঝতে পার, আমরা কত দূর যেতে পারি। এটাই ছিল তোমাকে দেওয়া শেষ সুযোগ।
“এরপর গুলিটা তোমার বাড়ির বাইরে চলবে না… দাউদ ও ছোটা শাকিল নামের যে দুজনকে তুমি ভগবান মানো, সেই নামের দুটি কুকুর পুষেছি বাড়িতে। বাকি বেশি কথা বলার লোক আমি নই। জয় শ্রী রাম।’’
১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারে সালমানের নাম জড়িয়েছিল। এর ‘বদলা নিতে’ ২০১১ সালে ‘রেডি’ সিনেমার শুটিংয়ের মাঝে সালমান খানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন লরেন্স বিষ্ণোই।
এরপর ২০১৮ সালে সালমানকে হত্যার জন্য বিষ্ণোই তার সহযোগী সম্পত নেহরাকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু সে সময় অস্ত্রের জটিলতায় পরিকল্পনা মাফিক কাজ সারতে পারেনি খুনিরা।
ওই ঘটনার পর ২০২২ সালে সকালে হাঁটতে বেরিয়ে হুমকির চিঠি আসে সালমান খানের হাতে। ওই চিঠিতে সালমানের বাবা সেলিম খানকে মেরে ফেলার হুমকি ছিল।
এরপর গত বছরের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পুরনো ‘শত্রু’ কানাডাভিত্তিক এক গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রারের কাছ থেকে ই-মেইলে খুনের ‘হুমকি’ পান সালমান।
মোহিত মার্গ নামের এক ব্যক্তি ওই মেইলে লিখেছিলেন, “গোল্ডি ভাই (গোল্ডি ব্রার) আপনার (সালামন) সঙ্গে কথা বলতে চান। এজন্য একটি সময় নির্ধারণ করতে হবে। সামনাসামনি গোল্ডি ভাই কথা বলবেন। হিসাব মেটাতে হবে।”
ওই চিঠিতে বিষ্ণোইয়ের একটি সাক্ষাৎকার দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারাগারে বসে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া যে সাক্ষাৎকারে গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোই বলেছিলেন, ক্ষমা না চাইলে সালমান খানকে হত্যার চিন্তাভাবনা থেকে তিনি সরছেন না।
২০২১ সালে থেকে তিহার জেলে বন্দি আছেন বিষ্ণোই। তবে সে সময় পুলিশের কাছে হত্যার হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি। এরপর গত বছরে শেষ নাগাদ সালমানকে হত্যায় বিষ্ণোইয়ের ছক বেরিয়ে আসে দিল্লি ও পাঞ্জাব পুলিশের তদন্তে।
সে সময় ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানিয়েছিল, জেলবন্দি বিষ্ণোই যে ১০ জনকে ‘খতমের তালিকা’য় রেখেছেন, তাদের মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সালমনের নাম।
সে সময় পুলিশ জানিয়েছিল, বিষ্ণোইয়ের লোকজন সালমানকে পানভেলে তার খামারবাড়িতে হত্যার পরিকল্পনা এঁটেছিল। সেইমত তারা খামারবাড়িতে নিয়মিত নজরদারি চালাচ্ছিল। কিন্তু পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালা হত্যায় অন্যতম সন্দেহভাজন কপিল পণ্ডিতকে গ্রেপ্তারের পর তাকে জেরা করে পুলিশ ওই পরিকল্পনা জেনে যায়।
এরপর সালমানের নিরাপত্তা বাড়নো হয়। তা ছাড়াও এই বলিউড তারকাকে ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। কিছু দিন আগে একটি বুলেট প্রতিরোধী গাড়িও কিনেছেন সালমান।
এবার হুমকি নয়, সালমানের বাড়ির সামনে গুলি