সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসার পর মেয়র হলেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
Published : 02 Feb 2020, 12:15 AM
শনিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তার মতোই ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে জয়ী হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
দক্ষিণে নৌকা প্রতীকে তাপস পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট।
ঢাকা দক্ষিণে এবার ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার ছিলেন ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪। সম্পূর্ণ ইভিএমে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের বড় আশা থাকলেও ভোটার খরা কাটেনি। ভোটের হার ছিল ২৯ শতাংশ।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাপস মনে করেন, এবার ভোটের হার বাড়লে তার সঙ্গে প্রতিপক্ষের ব্যবধানও বাড়ত।
শনিবার সকালে ধানমণ্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট দেওয়ার পর জয়ের আশা প্রকাশ করেছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাকা দক্ষিণে পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাপসেরই দলের প্রার্থী সাঈদ খোকন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। সেবার বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস পেয়েছিলেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।
সেবার ভোটগ্রহণের মাঝপথে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি; এবার ভোটগ্রহণ শেষে ফল প্রত্যাখ্যান করে ডেকেছে হরতাল।
উত্তরে প্রার্থী ঠিক রাখলেও দক্ষিণে এবার সাঈদ খোকনকে বাদ দিয়ে তাপসকে প্রার্থী করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এনিয়ে নানা গুঞ্জন চললেও দলের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়, অধিকতর যোগ্য প্রার্থী হিসেবেই তাপসকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে তাপস ২০০৮ সালে ঢাকা-১২ আসন (বর্তমানে ঢাকা-১০) থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে পা রাখেন। এরপর ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও ধানমণ্ডি এলাকার ওই আসনে নির্বাচিত হন তিনি।
দলের সিদ্ধান্তে সংসদ সদস্য পদ ছেড়েই রাজধানীর একটি সিটি করপোরেশনের মেয়র হতে ভোটের লড়াইয়ে নামেন তিনি।
নিজের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী অনেকে এই সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন না বলে তাপস নিজেই বলেছিলেন। তিনি তাদের এই বলে বোঝান যে, তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন, এটাও তারই একটি।
‘ঐতিহ্যবাহী-সুন্দর-সচল-সুশাসিত-উন্নত ঢাকা’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিটি ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন শেখ ফজলে নূর তাপস।
ঢাকা দক্ষিণের একটি বড় অংশপুরান ঢাকায়, সেই পুরান ঢাকার সঙ্গে নতুন ঢাকার একটি অংশ মিলে ঢাকা দক্ষিণের উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানো যে জটিল, সেটাও জানেন তাপস। তাই তার প্রতিশ্রুতি ছিল ঢাকাকে পুনরুজ্জীবিত করার।
অনেক অবহেলা, গাফিলতিতে ঢাকা অপরিকল্পিত ও দূষণে আক্রান্ত নগরী হয়ে গেছে- তা স্বীকার করে নিয়ে ‘ঐতিহ্যবাহী-সুন্দর-সচল-সুশাসিত-উন্নত ঢাকা’র প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিটি ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নে তাপস।
শেখ হাসিনার ফুপাত ভাই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে তাপসের জন্ম হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর।
পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের কালো রাতে বাবা-মাকে হারিয়ে স্বজনদের কাছে বেড়ে ওঠেন তাপস। ১৯৯৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওলভারহ্যাম্পটন থেকে এলএলবি পাস করে পরের বছর বার-এট-ল ডিগ্রি নেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের অনারেবল সোসাইটি অব লিংকনস ইনের সদস্য তাপস বাংলাদেশের হাই কোর্ট বিভাগে আইন পেশায় নিয়োজিত হন ২০০১ সালে। এরপর ২০১০ সালের ২৪ অগাস্ট আপিল বিভাগে তালিকাভুক্ত হন তিনি।
বিভিন্ন মামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কৌঁসুলি তাপস বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলারও আইনজীবী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদেরও নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।
ভোটের প্রচারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস।
তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ রাজনীতিতে যোগ দিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পরপরই নতুন চ্যালেঞ্জ নিলেন ছোট ভাই তাপস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে স্বপ্নের কথা বলছেন, তার সঙ্গে মিলে উন্নত রাজধানী গড়াই তাপসের মূল চ্যালেঞ্জ।
সে লক্ষ্যে ঢাকাবাসীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিতে কাজের পাঁচটি ক্ষেত্রও চিহ্নিত করেছেন তিনি। ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসন ও উন্নত ঢাকা- এভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন তিনি।
মেয়র হওয়ার পেছনে কী প্রণোদনা করা করছে, তা তুলে ধরে তাপস বলেছিলেন, “দেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, সে গতিতে ঢাকার উন্নতি হচ্ছে না। অনেকগুলো মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে এখনও ঢাকাবাসী বঞ্চিত। এ সব বিষয় আমাকে খুব পীড়া দিয়েছে।”
সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কাজগুলো পরিকল্পনা অনুযায়ী করতে না পেরে মেয়র হতে চেয়েছিলেন তাপস।
সেটা তিনি হয়ে গেছেন, এখন কাজে তা দেখানোর অপেক্ষা।
তিনি ইশতেহার ঘোষণার সময়ই বলেছিলেন, “দায়িত্বগ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যেই মৌলিক সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব।”