সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ‘বিস্ময়কর ও স্বতন্ত্র' বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
Published : 17 Oct 2022, 12:58 AM
স্বাধীনতার পর থেকে মাথাপিছু আয়, শিশু মৃত্যুহার, বাল্যবিবাহ ও সন্তান প্রসবকালে মাতৃমৃত্যুর হার কমে যাওয়া, নারীর কর্মসংস্থান ও মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের মত সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বাংলাদেশের; যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
রোববার এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব সূচকে উন্নতি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে বলে তুলে ধরা হয়।
রাজধানীর গুলশানে এক রেস্তোরাঁয় ‘অ্যাসপিরেশনাল মোমেন্টাম: দ্য ডেভেলপমেন্ট স্টোরি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় একই শিরোনামে এই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সামাজিক মূলধন হিসেবে এখানকার মানুষের বিশ্বাস, আচরণ, সংস্কৃতি কাজ করেছে; যা অন্যান্য অঞ্চল ও দেশ থেকে পৃথক বানিয়েছে।
এজন্য বাংলাদেশ শিশু মৃত্যুহার, সন্তান প্রসবজনিত মৃত্যুহার ও বিদ্যালয়গামী মেয়েদের সূচকে উন্নতি হয়েছে আশা জাগানিয়ার মত।
এরপর আলোচনায় এসব সূচকে বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘বিস্ময়কর ও স্বতন্ত্র' বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
যৌথভাবে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেন প্রধানন্ত্রীর জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিআইডিএসের গবেষক মাহির এ রহমান।
এ আলোচনা সভার আয়োজন করে রাষ্ট্রায়ত্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস।
১৯৭১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান ব্যবহার করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় বলে আলোচনা সভায় জানানো হয়।
বাংলাদেশের উন্নয়নের এ পথরেখাকে কোন ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্ণনা করা যায়- তা বের করতে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় বলে আলোচনায় জানানো হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে স্বাধীনতার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সূচকগুলোর কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে তা পরিসংখ্যান আকারে তুলে ধরা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের পর মাথাপিছু আয় বেড়ে ২০২০ সাল শেষে দুই হাজার ডলার অতিক্রম করেছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।
একইভাবে স্বাধীনতার পর প্রতি হাজারে সন্তান প্রসবজনিত মৃত্যুহার দুই শতাধিক থেকে কমে ৫০ এর নিচে নেমেছে। আর উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াশুনার হার ২০০০ সালের পর ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
এসময়কালে বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় এসেছে ৯০ শতাংশের উপরে, যা ১৯৯৬ সালে ২০ শতাংশের ঘরে বলে ছিল বলে প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গবেষক মাহির।
জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী বলেন, ‘‘বিশ্ব ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শিশুদের টিকা দেওয়া হয়েছে। নারীদের সচেতন করার পাশাপাশি আর্থিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক এই উন্নতিকে অনেকে প্যারাডক্স হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এক সময়ে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উঠে আসাটাই প্যারাডক্স বলে আমার মনে হয়।’’
বাংলাদেশের এমন উন্নয়নের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে এদেশের সংস্কৃতি, বিশ্বাস, কৃষি ও মানুষের আচরণগত বিষয় অর্থনীতিকে বিকশিত করেছে।
“নিম্নবিত্ত ও গরীব মানুষ স্বল্পমূল্যের খাবার স্যালাইন, কৃষি উপকরণ সাদরে গ্রহণ করেছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শেখার মানসিকতা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্রমাগত দ্রুত ঘটিয়েছে। যেটি আফ্রিকার অনেক দেশই গ্রহণ করেনি।’’
বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘‘সামাজিক বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, সমাজে জাতপাতের ভেদাভেদ না থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। সমাজের নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের তীব্র আকাঙ্খা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছে।’’
এর পেছনে বিভিন্ন সময়ে সরকারে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোরও সহায়তা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
‘‘গত কয়েক দশকে দেশ পরিচালনায় আসা সরকারগুলোও সামাজিক বিভিন্ন সূচকের উন্নয়নে নীতি সহায়তা দিয়েছে,“ বলেন তিনি।
অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন জায়েদ এ বখত, বরকত এ খোদা, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার মণ্ডল ও মঞ্জুর মোর্শেদ।