গবেষকদের অনুমান, অভিযোজন সম্ভব না হলে এবং তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে বাংলাদেশের জিডিপি ২০৩৭ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১.৭ শতাংশ হারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ৭.৬ শতাংশ হারে হ্রাস পেতে পারে।
Published : 01 Aug 2023, 01:26 AM
পটুয়াখালীর একটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ইমরান শিকদার এক বছর ধরে কাজ করছেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। ওভার-টাইম করলে মাসে ১৮-২০ হাজার টাকা আয় হয়, তাতে কোনোরকমে চলে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, কারখানার ভেতরে গরম খুব বেশি।
“আমি আছি কোয়ালিটি কন্ট্রোলে। এই ফ্লোরে অন্তত ১৫০ জন কাজ করে। এখন এতগুলা লোকের জন্য যতই সিলিং ফ্যান বা এগজস্ট ফ্যান থাকুক, গরম কমে না। বাইরে থেকে গরম আসে একটা। তারপর মেশিনের গরম আছে, সুতার একটা গরম তো আছেই," ব্যাখ্যা করলেন ইমরান।
তার মতে, কারখানার ভেতরে গরম কমানোর জন্য যা যা করা সম্ভব, তার প্রায় সবই করে ফেলছে কোম্পানি। এরপর যদি আরও কিছু করার থাকে, তা হল এসি লাগানো।
“কিন্তু এত বড় ফ্লোরে এত মানুষের জন্য এসি, এটা সম্ভব কিনা জানি না আমি। আর এইখানে ধরেন যদি মানুষ একটু ফাঁকা ফাঁকা করে দাঁড়াতে পারে, তাহলে একটু গরম কম লাগত।"
শ্রমঘন কাজে গরমের মৌসুমে গরম লাগবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে তাপপ্রবাহের মত ঘটনা বাড়ছে, আর তীব্র গরমে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের শ্রমিকরা তাদের কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, তাতে মোট দেশজ উৎপাদন কমে গিয়ে অর্থনীতির জন্য বড় ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে উঠে এসেছে লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের এক গবেষণায়।
‘অ্যাডপটিং টু দা ইম্প্যাক্টস অব একস্ট্রিম হিট ইন বাংলাদেশ’স লেবার ফোর্স’ শিরোনামে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, তীব্র গরমের কারণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলেন তৈরি পোশাক এবং কৃষি খাতের শ্রমিকরা।
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যানের বরাতে গবেষকরা বলছেন, ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট কর্মশক্তির ৩৭ শতাংশ যুক্ত ছিল কৃষিতে এবং ২২ শতাংশ শিল্পে। যাদের বাইরে কাজ করতে হয়, তারাই হিট স্ট্রেসের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
আর তৈরি পোশাক শিল্পের মত যেসব কারখানা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয়, তাপ থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থাও যেখানে কম, সেসব শিল্পের কর্মীরাও বাড়তে থাকা তাপমাত্রার কারণে বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছেন।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে কাজ করছে ৪০ লাখের বেশি শ্রমিক, যাদের ৮০ শতাংশই নারী। জুলাই মাসে যখন কাজের চাপ বেশি থাকে, কারখানার ভেতরের তাপমাত্রা তখন ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও উঠে যায়, যা শ্রমিকদের বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
বদলে যাওয়া আবহাওয়া
বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী এখন শ্রাবণ মাস; অর্থাৎ ভরা বর্ষার সময়। কিন্তু বাংলাদেশে চলছে উল্টো চিত্র।
প্রতিবছর জুন মাসে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকাল শুরু হয়। কিন্তু এ বছর বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু্ প্রবাহ শুরুই হয়েছে জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। তারপর কিছুদিন দেশের সব জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও এখন বৃষ্টি অনেকটা কমে গেছে।
১৯৭১ সালের রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশকে দীর্ঘতম দাবদাহ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এ সময়ে দেশের অনেক এলাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “এ বছর এলনিনো সক্রিয় পর্যায়ে আছে। এলনিনো যখন সক্রিয় থাকে, তখন সেটা বৈশ্বিক তাপমাত্রাকে উপরে ঠেলে দেয়। শুধু আমরা নই, বিশ্বের সবাই এই পরিবর্তন দেখছে। এ বছর এপ্রিল-মে মাসে বাংলাদেশ এবং এর আশেপাশের এলাকা, যেমন, ইনডিয়ার একটা বড় অংশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান একসাথে একটা হিট জোনে পরিণত হয়েছিল।"
তার মতে, ৭০ এর দশক থেকেই সারা বিশ্বে তাপমাত্রার ধরনে পরিবর্তন এসেছে। তবে এবছরের জুলাই মাসের পরিবর্তনটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
“এবার আমাদের মৌসুমি বায়ু প্রবাহ শুরুই হয়েছে দেরিতে। এবার জুলাই মাসে গত ২৩ বছরের গড়ের তুলনায় ৫৯ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। জলবায়ুর এই পরিবর্তনটা কোনো স্বাভাবিক আচরণ না।"
রোবাবরও চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এই গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা কায়িক শ্রম দেন।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কৃষক অসীম শিকারী এখন আমন ধানের চারা রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত, কিন্তু গরমে তারা কাজ করতে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন।
তিনি বললেন, "এখন অতিরিক্ত বৃষ্টি নাই। চারা লাগানোর জন্য ভালো সময়। কিন্তু গরম বেশি। রোদের জন্য আমরা দিনেরবেলা এখন কাজ করতে পারি না।"
সেজন্য ভোর থেকে সকাল ১০টা এবং বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত জমি প্রস্তুতের কাজ করছেন অসীমের মত কৃষি শ্রমিকরা।
তিনি বলেন, “এইরকম গরমটা না পড়লে জমি এতদিনে রেডি হইয়া যাইত।"
ঢাকার মগবাজার মোড়ে কথা হয় চার মেয়ের বাবা ষাটোর্ধ রিকশা চালক রশিদ মিয়া'র সঙ্গে। তিনি বলেন, "আইজ ৩০ বছর ধইরা রিকশা চালাই, শরীর আর পারতেছে না। বিশেষ কইরা এই গরমে চালান যায় না।"
"কিন্তু তারপরও চালাইতে হয় কারণ আমার ছোট মাইয়াটার বিয়া হয় নাই এখনো, ওর বিয়ার জন্য টাকা লাগবে।"
অর্থনীতির ক্ষতি কতটা?
লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবর্তিত জলবায়ুর সাথে যদি পুরোপুরি খাপ খাইয়ে নেওয়া না যায়, আর বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা যদি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যায়, তাহলে ২০৪০ সাল নাগাদ উচ্চ তাপের অর্থনৈতিক খাতে (কৃষির মত যেসব খাতে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হয়) শ্রম সরবরাহ এবং উৎপাদনশীলতা এখনকার তুলনায় ১১.৩ শতাংশ পয়েন্ট পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
একইভাবে গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে ২০৬০ সাল নাগাদ এসব খাতে শ্রম সরবরাহ এবং উৎপাদনশীলতা ২০.৯ শতাংশ পয়েন্ট এবং তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০৮০ সাল নাগাদ ৪৬.২ শতাংশ পয়েন্ট কমে যেতে পারে।
এমনকি যেসব ক্ষেত্রে ঘরের ভেতর বা ছায়ার নিচে কাজ করতে হয়, সেসব শিল্পখাতেও ক্ষতির ঝুঁকি কম নয়।
গবেষকদের অনুমান বলছে, গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে ২০৪০ সাল নাগাদ এসব খাতে শ্রম সরবরাহ এবং উৎপাদনশীলতা ৯ শতাংশ পয়েন্ট; তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে ২০৬০ সাল নাগাদ ১৩.৩ শতাংশ পয়েন্ট এবং তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে ২০৮০ সাল নাগাদ ২৫.১ শতাংশ পয়েন্ট কমে যেতে পারে।
অর্থাৎ, গড় তাপমাত্রা যত বাড়বে, দেশের শ্রমিকদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং জাতীয় উৎপাদনের ওপর তত বেশি বিরূপ প্রভাব পড়বে।
গবেষকদের অনুমান, অভিযোজন সম্ভব না হলে এবং তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে বাংলাদেশের জিডিপি ২০৩৭ সাল নাগাদ প্রতি বছর ১.৭ শতাংশ হারে এবং দীর্ঘমেয়াদে ৭.৬ শতাংশ হারে হ্রাস পেতে পারে।
প্রয়োজন অভিযোজন
আবহাওয়াবিদ ড. মল্লিকও বলছেন, বাংলাদেশের মানুষের এখন বাড়তে থাকা তাপমাত্রার সাথে অভ্যস্ত হওয়ার সময় এসে গেছে।
প্রান্তিক পর্যায়ে যারা কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, "যখন বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি থাকে, বা আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তখন যারা কায়িক শ্রম করেন, বা খোলা মাঠে কাজ করেন, তাদের গরম বেশি লাগে। কারণ তাদের গায়ে সূর্যের আলোটা সরাসরি লাগে।
“আর যারা গার্মেন্টস কর্মী, তারা এমনিতেই বেশি গরম অনুভব করেন। কারণ তারা দলবদ্ধ হয়ে কাজ করেন এবং অনেক মেশিনের কারণে ইন্টার্নাল টেম্পারেচার ওখানে এমনিতেই বেশি থাকে।”
দেশের অন্যান্য খাতেও যে উষ্ণতার প্রভাব পড়ছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনি পোলট্রি ফার্মের দিকে তাকান, ওখানে একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা লাগে। কিন্তু এই তাপমাত্রা যদি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তখন প্রডাকশন বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়তি উষ্ণতা প্রাণী, কৃষিখাত, সবার জন্যই ক্ষতিকর।"
আছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অত্যধিক তাপের মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এই তাপের ফলে অঙ্গহানী, হিট স্ট্রোক, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে।
তাছাড়া শ্রমিকদের কাজের গতি হ্রাস পাওয়া, বেশি বেশি বিরতি নেওয়া, মানসিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, বারবার ভুল করা এবং শারীরিক কাজের ক্ষমতা কমে যাওয়া– এগুলো হল উৎপাদনশীলতায় হিট স্ট্রেসের নেতিবাচক প্রভাবের উদাহরণ।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, “যারা খেটে খাওয়া মানুষ, নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, তাদের ঝুঁকি বেশি। কারণ তাদের মাথার ওপর তো একটা ফ্যানও নাই।
"তীব্র গরমে তাদের ডিহাইড্রেশন বেশি হয়। এছাড়া, মাথা ঘোরা, চর্মরোগ, পেটের পীড়া, রক্ত চলাচলে সমস্যা, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি, প্রেশার আপ-ডাউনসহ নানা রকমের সমস্যা হতে পারে।"
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে উপমহাদেশীয় ষড়ঋতুতে যে পরিবর্তন হচ্ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “মানুষের শ্রম ক্ষমতার সাথে সুস্বাস্থ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অতিরিক্ত তাপে শরীরে ঘাম হয়, লবণ বেরিয়ে যায়। এতে মানুষের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এদিকে শরীরের সাথে মনও জড়িত।
“শরীর দুর্বল হলে মনেও তার প্রভাব পড়ে। আর মন খারাপ থাকলে ব্যক্তিত্বে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়, মেজাজ খিটখিটে থাকে, এতে সামাজিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার প্রভাব পড়ে কর্মক্ষেত্রে। সুতরাং, শুধু যে কায়িক শ্রমজীবীরা ঝুঁকিতে আছেন, তা না। সবাইই ঝুঁকিতে।"
ড. মুশতাক বলেন, “যারা বসে বসে ভারী কাজ করছেন, তাদের মাথার ওপর আমরা শেড দিতে পারি, ফ্যান দিতে পারি। যে গাছগুলো দ্রুত বাড়ে, আমরা সেসব গাছ লাগাতে পারি, যাতে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে পারে তারা।"
"আমরা ঘাস লাগাতে পারি। আমরা রাস্তায় পানি ছিটাতে পারি, যাতে আবহাওয়া ঠাণ্ডা থাকে। আমরা প্রত্যেক পয়েন্টে পয়েন্টে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে পারি, যাতে কিছুক্ষণ পর পর রিকশাওয়ালারা পানি খেতে পারে। ঘেমে যাওয়ার পর শরীর যেন পানিশূন্যতায় কষ্ট না পায়। এগুলা সরকারকে করতে হবে।"
ডা. লেলিন মনে করেন, এই সংকটকালে বৃক্ষনিধন এবং বন উজাড় করা বন্ধ করতে হবে।
“বন উজাড়ের জন্য আরেকটা সমস্যা হচ্ছে। যেসব ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া মানুষের সমাজে ছিল না, সেগুলোও এখন মানুষকে সংক্রমিত করছে।"
অভিযোজনের জন্য কী প্রয়োজন
লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৭৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ঢাকার তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরের গড় তাপমাত্রা এখন আশপাশের গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাজের খোঁজে গ্রামের মানুষের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা বাড়ায় শহরের তাপমাত্রাও বাড়ছে। কাজেই এখনই যদি বিভিন্ন খাতে কর্মশক্তি বণ্টনে পরিবর্তন না আনা যায়, তাহলে এই দ্রুত নগরায়নে ঢাকা একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত হবে এবং মানুষকে হিট স্ট্রেসের ঝুঁকি আরও বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা।
উচ্চ তাপ কীভাবে কর্মীদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে এবং শ্রমের যোগান ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস করছে, সে বিষয়ে আরও জোরালো তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে, সাথে সাথে কর্মী ও নিয়োগকর্তা উভয়কে প্রণোদনার আওতায় এনে নীতি প্রণয়ন করা হলে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে মত প্রকাশ করা গয়েছে গবেষণাপত্রে।
বলা হয়েছে, জলবায়ু ঝুঁকি কমাতে হলে অর্থনীতিকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে কার্বন নির্গমণের মাত্রা কমে আসে। বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও বৈষম্যের ঝুঁকি না বাড়িয়ে সেটা করতে হলে উপযুক্ত নীতি প্রয়োজন হবে। পাশাপাশি নতুন নুতন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কর্মীদের পুনরায় প্রশিক্ষণ দেওয়া, এবং অভিবাসী শ্রমিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের শ্রমশক্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি।
যুক্তরাজ্যের গবেষকরা যখন সতর্ক করছেন, বাংলাদেশের কারখানা মালিক, আর নীতি নির্ধারকরা কী ভাবছেন?
এ বিষয়ে কথা বলতে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এবং শ্রম সচিব মো. এহছানে এলাহীকে গত এক সপ্তাহে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তারা ধরেননি।
পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমই এর পরিচালক, এনভয় ডিজাইনের পর্ষদ সদস্য শেহরিন সালাম ঐশী বললেন, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত এরইমধ্যে বড় রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে।
“যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানার সনদ পাওয়া বাংলাদেশি কারখানার সংখ্যা এখন ১৯৮টি। আরও পাঁচশর বেশি কারখানা এই সনদ পাওয়ার পথে রয়েছে।”
তার ভাষায়, পরিবেশবান্ধব এসব কারখানায় কর্মীদের সাস্থ্য ও কল্যাণের দিকেও নজর দেওয়া হয়। উচ্চ গতির ফ্যান, তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনি কারখানার ভেতরে ফঁকা জায়গা এবং ক্যান্টিন আছে, যাতে কর্মীরা অবসরে বিশ্রাম নিতে এবং বাইরে না গিয়ে কারখানাতেই দুপুরের খাবার খেতে পারে।
আর হামিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বললেন, "আমাদের প্রত্যেকটা ফ্যাক্টরিতে কুলিং সিস্টেম করা আছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা আছে, যাতে শ্রমিকরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তারপরও কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা তো আছেই, যেটা অস্বীকার করা যায় না।"