দামের ঊর্ধ্বগতিতে ঢাকার কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা এখন আড়াইশ গ্রামের কম কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন না।
Published : 02 Jul 2023, 10:07 PM
ঢাকার কারওয়ান বাজারে মেসের বাজার করতে এসেছিলেন সাব্বির হোসেন; কাঁচা মরিচের দাম জানতে গিয়ে শুনলেন, কেজি ৪৮০ টাকা। অন্য সময় হলে আড়াইশ গ্রাম নিতেন। কিন্তু তাও ১২০ টাকা, তাই ৫০ টাকার দিতে বললেন বিক্রেতাকে।
বিক্রেতা জামিল হোসেন সাফ জানিয়ে দিলেন, ৫০ টাকায় কোনো কাঁচা মরিচ নেই। আড়াইশ গ্রাম ওজনের নিচে কোনো অবস্থাতেই কাঁচা মরিচ বিক্রি করবেন না তিনি।
সাব্বির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমাগো একদিনে এত মরিচ লাগে না। কারওয়ান বাজারের সাইডেই তো প্রতিদিন কাজ করি। দরদাম তো করি নাই, যা দাম চাইল তাতেও ব্যাডা ৫০ টাকার মরিচ দিল না, দ্যাখলেনই তো।”
এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকর্মী সাব্বির; থাকেন এখন কারওয়ান বাজারের কাছেই। তাই বাজার করেন এখানেই।
অনুরোধেও বিক্রেতার মন না গলায় শেষমেষ আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচই মেপে দিতে বললেন সাব্বির।
দুই মৌসুমের মধ্যবর্তী সময় বর্ষায় কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে দাম একটু বাড়ে প্রতিবারই। কিন্তু এবার দর ক্রেতাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও দাম যেখানে কেজিপ্রতি একশ থেকে দেড়শ টাকার মাঝে ছিল, তা এখন ৫০০ টাকা। কোথাও কোথাও দাম ৭০০ টাকাও উঠেছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে রোববার ভালো মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছিল প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়, যা খুচরা পর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে ৬৫০ টাকায়।
সাব্বির যে মরিচ ৪৮০ টাকা কেজি দরে কেনেন, তার মান ততটা ভালো নয় বলে দাম খানিকটা কম।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে ভালো মানের কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা। আর ২০-৩০ শতাংশ বোটা পচা ও বিভিন্ন আকৃতির মিশেলের মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকার পাশপাশে। পাইকারি বাজার থেকে সংগ্রহের পর পরিবহন ও শ্রমিক খরচ মিলিয়ে খুচরা বাজারে দাম এ থেকে আরও বাড়ে।
মতিঝিল ও যাত্রাবাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, মরিচের সতেজতা ও মান অনুযায়ী কেজি প্রতি ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা পর্যায়ে।
সরবরাহ সংকটে অনেক পাইকার ৫৮ কেজির বস্তা কেটে খুচরা পর্যায়ে সর্বনিম্ন ২৫০ গ্রাম বিক্রি করতে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারে।
পাইকারি ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন খান রংপুরে উৎপাদিত দেশি জাতের মরিচ বিক্রি করছিলেন ৪২০ টাকা কেজি দরে। পাশেই আরেক পাইকার শফিকুল ইসলাম নিজের মরিচকে ভালো মানের দাবি করে প্রতি কেজি বিক্রি করছিলেন ৫২০ টাকা কেজিতে।
শফিকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কারওয়ান বাজারে মরিচের গাড়ি ঢুকছে কম। এখন নওগাঁ ও রংপুর থেকে বেশি মরিচ আসছে। ভালো মান হওয়ায় দাম একটু বেশি।
শফিকুলের কাছ থেকে নওগাঁর ‘সাদা’ জাতের কাঁচা মরিচ আধা কেজি কিনলেন কারওয়ান বাজারে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সমীর রায়। বিক্রেতা শফিকুল ইসলামের সঙ্গে দরদাম করতে চাইলেও তাতে কোনো কাজ হল না।
রান্নার আবশ্যকীয় উপকরণ কাঁচা মরিচ কোরবানির ঈদে অন্যান্য সময়ের চেয়ে একটু বেশিই প্রয়োজন হয়। কিন্তু এবার দামের কারণে অনেককেই কাঁচা মরিচ ব্যবসায় সংযমী হতে হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে ঈদের আগে কৃষি মন্ত্রণালয় কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। রোববার কৃষি মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মোট ৯৩ টন কাঁচা মরিচ দেশে এসেছে ভারত থেকে। আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩০ টন।