ইউরিয়া সারের নতুন এই দাম সোমবার থেকেই কার্যকর হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
Published : 01 Aug 2022, 04:57 PM
বিশ্ব বাজারে দর বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভর্তুকি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় ইউরিয়া সারের দাম কেজিতে ছয় টাকা বাড়িয়েছে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতি কেজি ইউরিয়া সার কিনতে কৃষকদের দিতে হবে ২২ টাকা, যা এতদিন ১৬ টাকা ছিল।
আর ডিলাররা ওই সার পাবেন প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে, যা আগে তারা ১৪ টাকায় কিনতেন।
ইউরিয়া সারের নতুন এই দাম সোমবার থেকেই কার্যকর হবে বলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে, “ইউরিয়া সারের ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে এবং চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায়” সরকার দাম পুনঃনির্ধারণ করেছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ সরকারের খরচ চারগুণ বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে বলে এর আগে জানিয়েছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। পাশাপাশি কৃষকের কথা বিবেচনায় নিয়ে এ পরিস্থিতিতেও দাম বাড়ানো হবে না বলে আশ্বস্ত করছিলেন।
মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, আমদানি চাহিদা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে সরকারি কোষাগারে চাপ সৃষ্টি হওয়ায় গত তিন মাস ধরে ব্যয় সঙ্কোচনের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ইউরিয়া সারের দামও বাড়ানো হল।
এই হারে দাম বাড়ানের ফলে প্রতিবছর ২৬ লাখ টন ইউরিয়া সারের ব্যবহার বিবেচনায় ভর্তুকি থেকে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা বাঁচাতে পারবে সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি ইউরিয়ার সারের বর্তমান দর ৮১ টাকা। ফলে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির পরও সরকারকে প্রতি কেজিতে ৫৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
যদিও গত ২১ জুলাই সরকারের ক্রয় কমিটির বৈঠকে সৌদি আরব থেকে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা ৭৯ পয়সায় বাল্ক গ্র্যানুলা ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর অর্থ হচ্ছে চলতি বছরের শুরুতে সারের দাম যতটা বেড়েছিল, এখন দাম তার চেয়ে অনেকটা কম।
সারের দর বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত জমিতে ‘অপ্রয়োজনে’ ইউরিয়া সার ব্যবহারে কৃষককে নিরুৎসাহিত করবে বলেও কৃষি মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করেছে।
ডিএপি সারে ১৮ শতাংশ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান রয়েছে। সেজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের ‘অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত’ ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ৯০ টাকার ডিএপি সার ১৬ টাকায় কৃষকদের দিচ্ছে।
এর ফলে গত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে ডিএপি ব্যবহার হত ৮ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ১৬ লাখ টন।
মন্ত্রণালয় বলছে, ডিএপি সারের ব্যবহার বাড়ার ফলে ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমার কথা থাকলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। ২০১৯ সালে ইউরিয়া ব্যবহার হত ২৫ লাখ টন, বর্তমানে ব্যবহার হচ্ছে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন।
“অন্যদিকে, বিগত এক বছর ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম প্রায় ৩-৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে দেশে সারে প্রদত্ত সরকারের ভর্তুকিও বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। ২০২০-২১ অর্থবছরে যেখানে ভর্তুকিতে লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা; সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।”
মজুদ ‘পর্যাপ্ত’
চাহিদার বিপরীতে দেশে সব রকমের সারের ‘পর্যাপ্ত মজুদ’ রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমন মৌসুম (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশে ৬ লাখ ১৯ হাজার টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে মজুদ ছিল ৭ লাখ ২৭ হাজার টন। আমন মৌসুমে ১ লাখ ১৯ হাজার টন টিএসপির চাহিদার বিপরীতে ৩ লাখ ৯ হাজার টন মজুদ রয়েছে।
ডিএপির ২ লাখ ২৫ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে মজুদ আছে ৬ লাখ ৩৪ হাজার টন। আর ১ লাখ ৩৭ হাজার টন এমওপির চাহিদার বিপরীতে মজুদ রয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টন।