বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় আসার প্রথম দিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর প্রতিনিধি দল; দ্বিতীয় দিন বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে।
বৃহস্পতিবার মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দিনভর একাধিক বৈঠকে বাংলাদেশের চাওয়া সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করবে প্রতিনিধি দলটি।
সফরকারী দলটি আগামী ১৫ দিন বাংলাদেশে অবস্থানকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাশাপাশি সরকারের নীতি নির্ধারকসহ অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করবে। পূর্ব নির্ধারিত সেই সূচি ধরে বুধবার তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসার মাধ্যমে আলোচনা শুরু করেন।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠক শেষে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে দীর্ঘদিন পর আন্তর্জাতিক এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে আশার কথা বলেছেন অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “এটি আইএমএফের দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক ছিল। প্রথম আলোচনা হয়েছে, বৈঠক আরও হবে। আমরা ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।“
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সামনে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকসহ একাধিক উপস্থাপনা ‘পাওয়ার পয়েন্টে’ তুলে ধরবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন কর্মকর্তারা।
ঋণের খুঁটিনাটিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে সবশেষ দুই অর্থবছরের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার, চলতি অর্থবছর শেষে অর্থনীতির প্রাক্কলনসহ আরও কিছু বিষয় আলোচ্য সূচিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এদিনের বৈঠকে আরএসএফ ঋণের শর্তের প্রসঙ্গও উঠতে পারে বলে জানান তারা।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে দিনভর কয়েকটি বৈঠকের সূচি থাকার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
প্রতিনিধি দলটি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল, একেএম সাজেদুর রহমান ও কাজী ছাইদুর রহমানের সঙ্গে বসবে।
আইএমএফ এর ১০ সদস্যর প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দিচ্ছেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দ, যিনি বাংলাদেশ মিশনেরও প্রধান।
সূচি অনুযায়ী ১৫ দিনের এ সফরের চারদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করার কথা প্রতিনিধি দলের। সফরের শেষ দিন আগামী ৯ নভেম্বরও গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে ওয়াশিংটনে আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভার সময় সাইডলাইনে আইএমএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন গভর্নর।
বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতির কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতিতে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে।
বিশেষ করে ইউক্রেইন যুদ্ধের পর থেকে এ অবস্থা প্রকট হয়েছে। এতে রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ডলারের টাকার মান রেকর্ড পরিমাণ কমিয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এমন প্রেক্ষাপটে ডলার সাশ্রয়ে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি বিদেশি উৎস থেকে অর্থায়ন পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফ এর কাছেও ঋণ পেতে আবেদন করা হয়েছে।
সেই ঋণের বিষয়ে সমঝোতা পৌঁছাতেই বাংলাদেশ সফর শুরু করছে আইএমএফের দলটি।