চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।
Published : 29 Feb 2024, 06:34 PM
চলমান আর্থিক সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচিতে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অনুমোদিত বরাদ্দ থেকে প্রায় ৭ শতাংশ কাটছাঁট করে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির আকার।
চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। সেই বরাদ্দ থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।
সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় এ প্রস্তাব তৈরি করা হয় বলে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
আগামী ১২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী সভা-এনইসিতে এই প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হতে পারে।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এডিপি বাস্তবায়নে জড়িত সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছ থেকে তাদের অধীনে চলমান প্রকল্পগুলোর সংশোধিত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো চলমান প্রকল্পগুলোর জন্য কম বরাদ্দ চাওয়ায় এবার কিছুটা কাটছাঁট করে সংশোধিত এডিপির প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।”
বৈশ্বিক সংকট মাথায় রেখে সরকার কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ কম দিয়ে অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে শেষ হবে এমন প্রকল্পে বরাদ্দ অগ্রাধিকারে রাখার নির্দেশনা দিয়েছিল।
সচিব বলেন, “বৈশ্বিক সংকটের কারণে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ প্রদানে সতর্ক সরকার। এ জন্যই মূলত এবার সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ চাহিদা কিছুটা কম এসেছে। তাই এবার কাটছাঁট কিছুটা বেশি হতে পারে।”
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রোগ্রামিং শাখার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, বৈদেশিক ঋণ বা প্রকল্প সহায়তা খাত থেকে ১১ শতাংশ বা ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হচ্ছে। মূল এডিপিতে প্রকল্প সহায়তা খাতের বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার কোটি টাকা।
সংশোধিত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় সাড়ে ৪ শতাংশ বা ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল এডিপিতে এই খাতের বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা।
কোন খাত কত পাচ্ছে
দেশের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে ১৫টি খাতের আওতায় বাস্তবায়ন করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ২৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। খাতটিতে মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৩ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এই খাতের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে। এই খাত পাচ্ছে ২৮ হাজার ২ কোটি টাকা।
এছাড়া স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে দেওয়া হবে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বা ১৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, শিক্ষাখাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা সংশোধিত এডিপির ৭ শতাংশ।
পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ বা ১৪ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ বা ১২ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
কৃষি খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা ৪ দশমিক ২১ শতাংশ।
অন্যান্য খাতের মধ্যে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাত ৩ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও বিনোদন খাতে ২ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, সাধারণ সরকারি সেবা খাতে ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা, সামাজিক সুরক্ষায় ২ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা, পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে ২ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা এবং প্রতিরক্ষা খাতে ৯২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে।