সংকটের প্রতিফলন বাজেটে নেই: সিপিডি

সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যে প্রাক্কলন বাজেটে করা হয়েছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্জন করা সম্ভব নয় বলে সিপিডির মত।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 June 2023, 04:34 PM
Updated : 1 June 2023, 04:34 PM

চলমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন নতুন বাজেটে ধরা পড়ছে না সিপিডির চোখে, দেখছে না সমাধানের পদরেখাও।

গবেষণা সংস্থাটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর যে প্রাক্কলন বাজেটে করা হয়েছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্জন করা সম্ভব নয়।

বৈশ্বিক সংকট এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট বৃহস্পতিবার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “এমন একটি সময়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হয়েছে, যখন অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে, সামষ্টিক অর্থনীতির যে স্থিতিশীলতার মধ্যে আমরা ছিলাম, তা মিলিয়ে গেছে।

“এখানে নানামুখী চাপ রয়েছে, বহির্খাতের চাপের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সম্পদ সঞ্চালন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যা রয়ে গেছে। তাছাড়া গত দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতির চাপও রয়েছে।”

তবে এই সংকটের প্রকাশ বাজেটে না পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সামগ্রিকভাবে চলমান অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলায় এই বাজেটে স্বীকৃতি ও সমাধান দুটোই অপ্রতুল।”

Also Read: ‘স্মার্ট’ হওয়ার অভিযাত্রায় বাজেটে ব্যয় বাড়ল ১৫%

Also Read: যুদ্ধের বাজারে ৬% মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য কতটা বাস্তবসম্মত

Also Read: ৭.৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ‘উচ্চাভিলাষী’

প্রস্তাবিত বাজেট বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা) চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি।

চাপের মধ্যেও নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখার লক্ষ্যও ঠিক করেছেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “সূচকগুলোর যে প্রাক্কলন করা হয়েছে, তা বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্জন করা সম্ভব নয় বলে আমাদের মনে হয়েছে।”

বিভিন্ন ধরনের চাপ, প্রত্যাশা অনুযায়ী রপ্তানি না হওয়া, রেমিটেন্স না আসাসহ অর্থনীতির চলমান সংকটের কথা উল্লেখ করেন ফাহমিদা খাতুন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন সেটি হলো মূল্যস্ফীতির চাপ ও পণ্যের দামের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে যে প্রস্তাবগুলো করা হয়েছে, যে সমাধানগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্ভবপর নয়।

তিনি বলেন, “এসবের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬ শতাংশে নামানোর যে প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করেছেন তা সম্ভব হবে না।

“আমরা আগেই বলেছিলাম, যেসব নিত্যপণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়, সেগুলোর কর যদি রেয়াত করা যেত, তাহলে কিছুটা স্বস্তি মিলত। কিন্তু বাজেটে সে উদ্যোগ খুব একটা লক্ষ্য করা যায়নি।”

তবে প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমারেখা বাড়ানোর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

কিন্তু করমুক্ত সীমার নিচে থাকলেও আয়কর বিবরণী দাখিলে টিআইএনধারীকে ২ হাজার টাকা কর দেওয়ার নিয়ম করতে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তার সমালোচনা করেন তিনি।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, “দেশের কোনো নাগরিক যদি ৩৮টি সরকারি সেবা পেতে চান, তাহলে সেখানে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে কর রিটার্ন সাবমিট করতে হয়। এখন তার আয় যা-ই হোক না কেন তার ওপর ২ হাজার টাকা কর আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি আমাদের কাছে অবিবেচনাপ্রসূত মনে হয়েছে। আমরা মনে করি সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই নিম্নতর কর তুলে দেওয়া উচিৎ।”

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থনীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারে তেমন পদক্ষেপ নেই বলেও মন্তব্য করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক।

তিনি বলেন, “এই বাজেট এমন এক সময়ে এসেছে যখন আইএমএফের কিছু শর্ত বহাল রয়েছে, যেহেতু তারা ঋণ দেবে। বাজেট ডকুমেন্টে তিনবার আইএমএফের কথা বলা হলেও তাদের শর্তগুলোর ব্যাপারে পরিস্কারভাবে কিছু বলা হয়নি।

“কিন্তু আমরা দেখেছি বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা যেগুলো আছে সেখানে কিন্তু এসব শর্ত পালনের ইঙ্গিত রয়েছে।”

নতুন বাজেট নিয়ে শুক্রবার সকালে সিপিডির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান হবে।