Published : 05 May 2025, 11:07 PM
ঋণের পরের কিস্তি ছাড় সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরেক দফা বাংলাদেশের সঙ্গে সভা করল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হওয়া এ সভা চলে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট।
বাংলাদেশ থেকে সভায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গভর্নর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইএমএফের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা হয়েছে। গভর্নর তাতে অংশগ্রহণ করেছেন।”
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব বিষয় তুলে ধরেছিল, সে সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তথ্য দিলেও পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘বিনিময় হার এখনই পুরোটা বাজারমুখী করার পক্ষে নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বক্তব্যটি ফের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। করহার বাড়ানো ও ভর্তুকি একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনাও এ মুহুর্তে সম্ভব নয়, সেটাও বলা হয়েছে।
‘‘দুটি বিষয় পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ, তাতে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে। সেই বক্তব্য যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।”
তিনি বলেন, এ দুটি বিষয়ে বাংলাদেশ তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না, তা স্পষ্ট করেই আইএমএফকে বলা হয়েছে।
এখন আইএমএফের ঋণের পরবর্তী কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি পুরোটাই নির্ভর করছে সংস্থাটির বোর্ড সভার ওপর।
আগামী ২৩ মে ওয়াশিংটনে আইএমএফের বোর্ড বসবে। সেখান থেকেই ঋণের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করতে বাংলাদেশকে মোটা দাগে কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে বলছে আইএমএফ।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট শর্ত হচ্ছে, মুদ্রানীতির আরও সংকোচন, মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা ও নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ।
এর মধ্যে রিজার্ভরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। গত রোবাবর বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ হয় ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার, বিপিএম পদ্ধতিতে তা ২১ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন।
এরপর আইএমএফ সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোটা বাজারমুখী করা, কর হার বাড়ানো ও ভর্তুকি কমানো।
মূলত এখানেই জোর আপত্তি তুলেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলছেন, সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলো বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, এ মুহুর্তে দুটি শর্ত বাস্তবায়নের চাপ নেওয়ার মত জায়গায় নেই অর্থনীতি।
মুদ্রার বিনিময় হার এখনই বাজারমূখী করতে নারাজ বাংলাদেশ, তা অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদও একাধিকবার বলেছেন।
সবশেষ গত ২৯ এপ্রিল আইএমএফের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বৈঠক শেষ করে এসে সচিবালয়ে বলেছিলেন, ‘‘ওরা ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেছে। আমরা বলেছি একেবারে ওপেন করে দেওয়া যাবে না। পাকিস্তানের মত ২৮০ টাকা, শ্রীলংকার মত ৪০০ টাকায় পৌঁছে যাবে, সেটা আমি পারব না।’’
অর্থ উপদেষ্টা সেদিন এও বলেন, “এ সরকার আসার পর আইএমএফ থেকে আর টাকা পাওয়া যায়নি। তাদের সহযোগিতা ছাড়াই আমরা স্থিতিশীল আছি। অতএব তারা যে শর্ত চাপিয়ে দেবে, সেটা পারবে না।’’
এখন সমঝোতা হলে আগামী জুনে ঋণের পরবর্তী দুই কিস্তি একসঙ্গে পেতে পারে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ঋণ দাতা সংস্থা আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণের কিস্তি ছাড়ের আগে পর্যালোচনা সভা শেষ করে ঢাকা সফররত সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় সেই সফর।
ঋণের প্রতিটি কিস্তি ছাড় করতে আইএমএফ তার আগের কিস্তির অর্থের ব্যবহার পর্যালোচনা করে। প্রয়োজনে শর্ত সংযোজন-বিয়োজন করে সংস্থাটি। তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের সময় রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার শর্ত শিথিল করেছিল আইএমএফ।
আর্থিক সংকট সামাল দিতে ২০২২ সাল থেকে কয়েক দফা আলোচনা শেষে পরের বছরের প্রথম দিকে আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করে বাংলাদেশ।
আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। সে বছর ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া যায় দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার।
২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে আসে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আরও পড়ুন
কিস্তি ছাড় নিয়ে ফের আলোচনায় আসছে আইএমএফ
আইএমএফের বিষয়ে জানতে চায় এডিবি: অর্থ উপদেষ্টা
আইএমএফের শর্ত, বাংলাদেশের সামনে জটিল অঙ্ক