“উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনসহ সবাই অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু মুখের কথায় তো অংশগ্রহণ হয় না, কর না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার”, বলেন তিনি।
Published : 10 Sep 2024, 09:15 PM
সেবা দিয়ে করযোগ্য ‘সবার কাছ থেকে’ আয়কর আদায় করতে চান অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, “কর না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার।”
অনলাইনে আয়কর প্রদান বিষয়ে মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সঞ্চয়পত্র ও ঋণ নিয়ে দেশ চালানো ‘কঠিন’ মন্তব্য করে আয়কর আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দেন উপদেষ্টা। সেই সঙ্গে করদাতা যে টাকাটা দেয়, সেটি যেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়ে, সেটি নিশ্চিত করার তাগিদও দেন তিনি।
সরকারের কাজ করতে আয়করের প্রয়োজন হয় মন্তব্য করে সালেহউদ্দিন বলেন, “উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনসহ সবাই অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু মুখের কথায় তো অংশগ্রহণ হয় না, কর না দিলে সেবা পাওয়া দুরূহ ব্যাপার।”
দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা কর দেবেন এই টাকাটা বিফলে যাবে না।”
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার বিষয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, “জোর করে কর (আয়কর) আদায় করা যাবে না। বরং সবার কাছ থেকে কর আদায় করব। এই জন্যই অনলাইনটা করা।
“কর দেওয়ার সক্ষমতা অনেকের আছে, কিন্তু সবাই কর জালের আওতায় আসে না। টিআইএন অনেকের আছে, ফিল আপ করে না। অতএব সবাইকে সার্ভিস দিতে হবে।”
মিডলম্যান বা অন্য কোথাও যেন না যায়
করের টাকা যেন রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই যায় সেদিকে নজর দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশনা দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “কোনো লিকেজ (ছিদ্র) যেন না থাকে। কোনো মিডলম্যানের কাছে বা অন্য কোথাও যেন চলে না যায়।”
কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘দেখা হলেই’ ঘুষ বা অনিয়মের সুযোগ থাকে ইঙ্গিত দিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, “কর আদায় করতে অনলাইনকে গুরুত্ব দিচ্ছি; কেননা করদাতা যদি ট্যাক্স অফিসারের চেহারা না দেখে, তাহলে একটু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর চেহারা দেখা মানেই জানেন তো অনেক কিছুই...।”
‘বৈষম্য’
চাকরিজীবীদের ভবিষ্য তহবিলসহ বিভিন্ন ভাতায় সরকারি কর্মকর্তারা কর ছাড় পেলেও বেসরকারি খাতের কর্মীরা তা পান না উল্লেখ করে প্রশ্ন রাখেন এক সংবাদ কর্মী।
জবাবে এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “এটা ঠিক যে কর বেশি দেন বেসরকারি খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, কিন্তু করের টাকায় সুবিধা বেশি পান সরকারি ব্যক্তিবর্গরা।
“আমরা কিছু সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছি। ইতোমধ্যেই বৈষম্য দূর করতে কিছু কাজ করছি, সামনে আরও হবে। এর জন্য আপনাদের সহযোগিতা লাগবে।”
অর্থ উপদেষ্টা বৈষম্য দূরীকরণের চেষ্টার উদাহরণ হিসেবে কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিলের কথা উল্লেখ করেন।
তবে এই বিধান বাতিল জলেও জমি ও ফ্লাটে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে সাদা করার সুযোগ বহাল রয়েছে বলে মন্তব্য করেন একজন সংবাদ কর্মী। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা কোনো মন্তব্য করেননি।
অটোমেশন
ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে করদাতাকে সেবা দেওয়া শুরু করেছে জানিয়ে স্বাগত বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “ভবিষ্যতে আমরা এনবিআরের সকল কার্যক্রমকে কমপ্রিহেনসিভ অটোমেশন করতে পারব।”
সোমবার হতে অনলাইন রিটার্ন দাখিল সিস্টেমে করদাতাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
“অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার পাশাপাশি আয়কর সনদ ও টিআইন সনদ ও রিটার্ন নেওয়া যাবে। পেমেন্ট মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস বা অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করা যাবে।”
তিনি জানান ২০২১ সালে প্রথম অনলাইন রিটার্ন দাখিল চালু হওয়ার পর ৬১ হাজার রিটার্ন জমা পড়লেও পরের বছর তা বেড়ে ২ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয় ৫ লাখ ২৬ হাজার।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “এবার আমরা আশা করছি ব্যক্তিশ্রেণির কর দাতাদের যত ট্যাক্স রিটার্ন পড়বে তার সিংহভাগই অনলাইনে পড়বে।
“খুব জোরেশোরে কাজ করছি। অনেক দূর এগিয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কল সেন্টার চালু করতে পারব।”
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ফোন করলে করদাতারা ই-রিটার্ন সংক্রান্ত যে কোনো অসুবিধায় ফোন দিয়ে তাৎক্ষণিক পরামর্শ পাবেন বলেও জানানো হয় আয়োজনে।
এ বছর অনলাইনে ১০ লাখ রিটার্ন জমার লক্ষ্যের কথা জানান অর্থ উপদেষ্টা। পরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “১৫ লাখ রিটার্নের লক্ষ্য ধরছি।”
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৫ লাখ হলে তো ভালোই। আমরা তো চাই ১ কোটি ৪ হাজার করদাতা থাকলে ১ কোটিই অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করুক।”