“আমরা নানাভাবে শুনি, যে টাকা বরাদ্দ হয় তাও না কি ফেরত যায়। অথচ অর্থ সংকটে আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা রকম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে না,” বলেন গোলাম কুদ্দুছ।
Published : 30 May 2024, 09:28 AM
মূল বাজেটের অন্তত ১ শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দে গত কয়েক বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। এ নিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠন রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচিও পালন করেছে। তবুও প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন হয় না বলে অভিযোগ তাদের।
সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আরও বেশি অনুদান বরাদ্দ দেওয়া, সব উপজেলায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করে বিষয়ভিত্তিক স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার মত অনেক দাবি দীর্ঘদিন থেকে করে আসছেন সংস্কৃতিকর্মীরা। তবে অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে এসব দাবি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
আসছে ২০২৪-২৫ সালের বাজেটেও তাদের দীর্ঘদিনের চাওয়া অনুযায়ী মূল বাজেটের ১ শতাংশ বরাদ্দ পাওয়ার দাবি পূরণ হবে কি না তা বলা জানা যাবে আগামী ৬ জুন বাজেট উপস্থাপনের দিন।
তবে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আসন্ন বাজেটে তা ১০ শতাংশের বেশি বাড়বে, এমন আশায় আছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৬৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। আসন্ন বাজেটে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৭৭৯ কোটি টাকা চাওয়া। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে বাজেটে যে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, তা অপরিবর্তিত থাকলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে এবার বাড়বে ৮০ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে ১১ শতাংশেরও বেশি। তবে তা সংস্কৃতিকর্মীদের প্রত্যাশিত জাতীয় বাজেটের ১ শতাংশের নিচেই থাকবে।
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা গত কয়েক বছরের বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রস্তাবিত এই খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বাজেট ব্যবস্থাপনা ও অডিট অধিশাখা) মো. আতাউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয় থেকে একটা খসড়া বাজেট পাঠাই, সেটিই যে অক্ষুণ্ন থাকবে তা নয়। সেখান থেকে কাঁটছাঁট হবে। মূলত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বাজেট চূড়ান্ত হবে।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবার আমরা যে খসড়াটি পাঠিয়েছি, তা ঠিক থাকলে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ বাড়বে। তবে বাজেট চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না।”
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজাহার খান বাজেট বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, “এ নিয়ে পরে কথা বলব।”
ব্যয়ের সক্ষমতা বাড়বে?
সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর জন্য যৌক্তিক কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের উপর জোর দিতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ২৭ মার্চ বাংলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানো বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, “সরকার একটা পদ্ধতির মধ্য দিয়েই বাজেট প্রণয়ন এবং তা ব্যয় করে।”
তিনি বলেছিলেন, “সরকার যে বাজেট দেবে তা ব্যয় করার সক্ষমতাও মন্ত্রণালয়ের থাকতে হবে। বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাকে এমনভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, তা যেন যৌক্তিক হয়।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের জন্য সরকার যে বাজেট বরাদ্দ দেয় তা অপ্রতুল বলে সংস্কৃতিকর্মীরা অভিযোগ করলেও, সেই বাজটের পুরো টাকা ব্যয় করতে পারে না মন্ত্রণালয়। প্রতি বছরই সরকারের কোষাগারে টাকা ফেরত যায়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের চাওয়া তো জাতীয় বাজেটের ১ শতাংশ। সেটিও বৃহৎ সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞের তুলনায় কমই হয়। তবুও আমরা মনে করি, এই বরাদ্দটুকু দেওয়া উচিত।”
মন্ত্রণালয়ের কর্ম-পরিকল্পনা নিয়ে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “আমরা নানাভাবে শুনি, যে টাকা বরাদ্দ হয় তাও না কি ফেরত যায়। অথচ অর্থ সংকটে আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা রকম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে না। আমি মনে করি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে।”
চলতি বাজেটে বরাদ্দ অর্থের কত শতাংশ টাকা ব্যয় হয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আতাউর রহমান বলেন, এ বছরের হিসাব সব দপ্তর/সংস্থার হিসাব আসার পর বলা যাবে। তবে গত কয়েক বছরের ধারণা থেকে এটা বলা যায়, প্রতিবছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রাপ্ত বাজেটের ৯২-৯৪ শতাংশ ব্যয় করে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকেও বরাদ্দ দেওয়ার দাবি তুলে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বলেন, “কিছু সাংস্কৃতিক সংগঠনকে ৫০/৬০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়, তা যথেষ্ট নয়। সক্রিয় সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া, সকল উপজেলায় সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স তৈরি করে সেখানে গান, নাচ, আবৃত্তি, নাটকের জন্য স্থায়ীভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিত।
”অঞ্চলভিত্তিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সারা দেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত।”
পুরনো খবর
প্রতি উপজেলায় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে: প্রতিমন্ত্রী